সুদের হার নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে নেই
প্রকাশিত : ১০:০৯ পিএম, ১৮ মার্চ ২০১৮ রবিবার
ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণে ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানোর দাবি জানিয়েছেন সংসদ সদস্যরা। তবে এ বিষয়ে সরকারের কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গতকাল শেরে বাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)-এর সম্মেলন কক্ষে প্রাক বাজেট আলোচনায় এ বিষয়টি উঠে আসে। প্রাক বাজেট আলোচনায় বিভিন্ন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিরা উপস্থিত ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক ঋণের সুদের হারে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। সরকারের নিয়ন্ত্রণ শুধু স্প্রেডের (ঋণ আমানতের সুদ ব্যবধান) ওপর। সেক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর স্প্রেড ৫ শতাংশের নিচে রাখার নির্দেশ রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের।
প্রাক বাজেট আলোচনায় সংসদ সদস্যরা বলেন, এডিআর (ঋণ-আমানত অনুপাত) কমানোর কারণে ঋণের সুদের হার বেড়েছে। এতে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংলাদেশ ব্যাংক এডিআর কমিয়েছিল। কিন্তু পরে এডিআর ঠিক করা হয়েছে। খামকা বিষয়টি জটিল করা হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে আমি নিজে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বৈঠকে বসবো।
গ্রামে ডাক্তার পাওয়া যায় না সংসদ সদস্যদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ ঠিক না। যথেষ্ট ডাক্তার গ্রামে আছে। আপনরা শুধু শুধু এ অভিযোগ করেন। এ সময় অর্থমন্ত্রী আরো জানান, দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি করে লাইব্রেরি স্থাপন বাধ্যতামূলক করা হবে। লাইব্রেরি পর্যাপ্ত বই সরবরাহ করা হবে।
তিনি বলেন, জনগণের স্বাস্থ্য কথা বিবেচনায় নিয়ে আগামী বাজেটে তামাক ও জর্দার ওপর কর হার ১১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০০ শতাংশ করা হবে। আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আগামীতে যারাই ট্যাক্স দিবে তাদেরই ট্যাক্স কার্ড দেওয়া হবে। কেউ যদি এক টাকাও ট্যাক্স দেন, তার জন্যও ট্যাক্স কার্ড করা হবে।
অর্থমন্ত্রীর প্রাক বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাছান মাহমুদ বলেন, দেশের মানুষের আয় এখন অনেকে বেড়েছে। কিন্তু সে হারে কর জাল বাড়েনি। বিভিন্ন দেশে নাগরিকের কর ফাইল রয়েছে। কর দেওয়ার সক্ষমতা না থাকলেও কর ফাইল করা বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। এ কর ফাইলিং সুবিধা থাকতে হবে অন লাইনে। এসময় জেলা পর্যায়ে পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে সেরা করদাতা পুরস্কার চালুর পরামর্শও দেন তিনি।
হাছান মাহমুদ বলেন, উচ্চ আয়ের মানুষের জন্য যে কর হার ধরা হয়েছে তা অনেক বেশি। এ কারণে অনেকেই কর ফাঁকি দিচ্ছে। কর হার কমানো হলে কর আদায়ের পরিমাণ আরও বাড়বে। তিনি বলেন, অনেক ব্যবসায়ী জনগণের কাছ থেকে ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) আদায় করলেও সরকারি তহবিলে জমা দেয় না। অনেক দেশে দেখা যায় ক্রেতারা কোন পণ্য কিনলে ক্যাশ মেমো জমা করে রাখে। সেই ক্যাশ মেমো বছর শেষে জমা দিয়ে সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনা নিচ্ছে। এ পদ্ধতি আমাদের দেশে চালু করা গেলে ভ্যাট ফাঁকি কমে যাবে।
ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানোর পরামর্শ দিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের ব্যাংকগুলোর ঊর্ধ্বতনদের বেতন ১০ লাখ টাকার বেশি। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বেতনও এত না। ব্যাংকের নির্বাহীদের এত বেতন অস্বাভাবিক বেশি। এতে লাগাম টানা দরকার।
বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন, তারল্যের কারণে সুদের হার কমে যায়। এর প্রভাব পরে উৎপাদন খাতে। আবার এডিআর কমানোর কারণে অর্থ সরবরাহ কমে যায়। এতেও উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়। এ অবস্থায় এডিআর সমস্যা দ্রæত সমাধানে অর্থমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান তিনি।
কর হার কমিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, কর হার কমানো হলে কর জালের সম্প্রসারণ হবে এবং সবাই কর দিতে উৎসাহিত হবে। ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত কর মওকুফের আবেদন জানান তিনি। তাছাড়া পরিবেশবান্ধব গ্রীন ফ্যাক্টরি উপকারিতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তাদের ট্যাক্স ছাড় দেয়া প্রয়োজন। যাতে অন্যরা পরিবেশ উপযোগী গ্রিন ফ্যাক্টরি করতে পারে।
আগামী বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানোর দাবি জানান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূঁইয়া। তিনি বলেন, তিন বাহিনীর ক্ষমতা বাড়াতে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হবে। সেনাবাহিনী শক্তিশালী করার পাশাপাশি নৌ-বাহিনীর সাব-মেরিন এবং ডক ইয়ার্ড স্থাপন এবং বিমান বাহিনীর মিগ-২৯ ও পরিবহন বিমানের জন্য বাড়তি বরাদ্দ প্রয়োজন।
তিনি বলেন, সারা দেশে সব ক্রয় কাজের ঠিকাদারি পাচ্ছে বড় বড় নেতারা। কুমিল্লার সব কাজই ওই শহরে বলে নিয়ন্ত্রণ করে স্থানীয় এমপিরা। টাকার বিনিময়ে এসব ক্রয় কাজ নিজের লোককে বিলি করা হচ্ছে।
ঠিকাদারি কাজ নিয়ে একই অভিযোগ করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোতাহার হোসেন। নানা শর্ত আরোপের কারণে ছোট ছোট ঠিকাদাররা কোন কাজই পাচ্ছে না। এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল কমানো এবং প্রাথমিক শিক্ষায় আগামী বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান।
সংস্কৃত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থানীয় কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি বলেন, কঠোর নির্দেশনা সত্তে¡ও ডাক্তাররা গ্রামে থাকেন না। উচ্চ শিক্ষার অজুহাতে চিকিৎসকরা কর্মস্থলে থাকেন না। ঢাকায় চলে আসেন। এটা চরম বাস্তবতা। এসময় সংস্কৃত খাতে আগামী বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোরও দাবি জানা।
প্রাক বাজেট আলোচনায় আরো অংশ নেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা আ ফ ম রুহুল হক, রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থাীয় কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি জাহিদ আহসান রাসেলসহ অনেকে।
টিকে