ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৮ ১৪৩১

যে গ্রামের ছবি তুললে জরিমানা

প্রকাশিত : ১১:১৭ এএম, ২০ মার্চ ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ১০:৩২ এএম, ২৯ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার

প্রকৃতির কোলে বেড়ে উঠা গ্রাম। সবুজ-শ্যামল প্রকৃতি। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে আলেবুলা নদী। আছে বিস্তীর্ণ পাহাড়ের সারি। ঝর্ণার ছিপছিপ শব্দ ভ্রমণ পিপাসুদের মুগ্ধ না করে পারে না। দেখলে যে কারো চোখ ধাঁধিয়ে যায়। মন চায় ফ্রেমবন্দি করে রাখতে। কিন্তু গ্রামটিকে ছবি তোলায় মানা। শুধু নিষেধই নয়, জরিমানাও করা হয়ে থাকে। এটি সুইজারল্যান্ডের একটি ছোট্ট গ্রাম। নাম ব্র্যাভুয়াঁ। ৫৬ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত গ্রামটিতে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটে।
২০১৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত গ্রামটির মোট জনসংখ্যা মাত্র ৫৩০ জন। সৌন্দর্যের পসরা নিয়ে সাজানো গ্রামটিতে রয়েছে প্রাচীন রোমান সভ্যতার নিদর্শন একটি চার্চ। এখানকার ঘোড়দৌড়ের মাঠটি সুইজারল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে প্রসিদ্ধ। বোটিং ও রিভার রাফটিংয়ের জন্য আলেবুলা নদী তো রয়েছেই। যারা পাহাড়ে হাইকিং করতে চান, তাদের জন্য আলেবুলা উপত্যকা অপার নৈসর্গিক দৃশ্য নিয়ে অপেক্ষা করছে। ১৯৪৫ সালে নির্মিত ‘কুরহাস বারগুন’হল এই গ্রামের একমাত্র হোটেল, যা গ্রাম থেকে বেশ খানিকটা দূরে অবস্থিত। তবে বর্তমানে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গ্রামবাসীরা টাকার বিনিময়ে পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা রেখেছেন।
২০০৮ সালে আলেবুলা রেলওয়ে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পায়। এই রেলওয়ের সঙ্গেই রয়েছে একটি প্রাচীন জাদুঘর। এ জাদুঘরে গ্রামটির ঐতিহ্যের নানা ইতিহাস সংরক্ষিত রয়েছে।
সুইজারল্যান্ডের এই ছোট্ট গ্রামটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থেকে চোখ ফেরানো যায় না। যারা ওখানে গেছেন, গ্রামটির সৌন্দর্যে প্রত্যেকেই অবাক হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেসব ছবি শেয়ার করে জুটেছে বন্ধুদের আক্ষেপ। কিন্তু তাই বলে সেই স্মৃতিগুলো ছবির ফ্রেমে আটকে রাখবেন, আর অন্যদের সেসব দৃশ্য দেখিয়ে দুঃখ দেবেন, তা কখনই হবে না।
সেজন্য গ্রামের পর্যটন দফতর গ্রামটিতে ছবি তোলা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছে। যদি এই নির্দেশ কোনো পর্যটক অমান্য করেন এবং ছবি তোলার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন, তাহলে তাকে ৫ ফ্রাঙ্ক জরিমানা গুনতে হবে।
ব্র্যাভুয়াঁ পর্যটন অফিসের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, অন্যকে দুঃখ দেওয়ার অধিকার কারও নেই। যেসব ব্যক্তির ওই গ্রামে যাওয়ার আর্থিক ক্ষমতা নেই বা কোনো কারণে যেতে পারছেন না, সেসব ব্যক্তি মানসিকভাবে ব্যথিত হবেন- সেটা কখনই ব্র্যাভুয়াঁবাসীর কাম্য নয়।
ব্র্যাভুয়াঁর লোকজন বিশ্বের মানুষের সুখের বিষয়টাও ভাবেন। তারা চান না, তাদের কারণে পৃথিবীর মানুষ কোনোরকম দুঃখ পান, হৃদয়ে কষ্ট অনুভব করেন। এমনকি ব্র্যাভুয়াঁর পর্যটন ওয়েবসাইট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে তাদের আপলোড করা সব ছবি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
সূত্র : লাক্সজ ম্যাগাজিন।
/এআর/