মারা গেছে পৃথিবীর শেষ পুরুষ নর্দান সাদা গণ্ডার
প্রকাশিত : ১০:০৭ পিএম, ২০ মার্চ ২০১৮ মঙ্গলবার
মৃত্যু হল পৃথিবীর শেষ পুরুষ নর্দান সাদা গণ্ডারের। গতকাল সোমবার সুদান নামের এই গণ্ডারটি বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
প্রায় বিলুপ্ত হওয়া গন্ডারের দুইটি প্রজাতির মধ্যে একটি হচ্ছে নর্দান সাদা গন্ডার। এই প্রজাতির একমাত্র জীবিত পুরুষ গন্ডার ছিল সুদান।
কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির ওল পেজেটা কনজারভেটরিতে থাকত সুদান। সেখানকার চিকিৎসক দল আজ মঙ্গলবার সুদানের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ঐ কনজারভেটরির বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এপি জানায়, ৪৫ বছর বয়সী সুদান বয়সের কারণেই মৃত্যুবরণ করে। গতকাল সোমবার সুদানের শারীরিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয় যে, সে আর উঠে দাড়াতে পারছিল না। সুদানের চামড়ায় কিছু ক্ষত হয়েছিল আর তার পিছনের ডান পায়ে সংক্রমণ হয়েছিল। সবশেষে সুদানের মাংসপেশী আর হাড় এতটাই নমনীয় হয়ে যায় যে, সে আর উঠে দাড়াতে পারছিল না।
চিকিৎসকেরা বলছেন যে, “সম্ভাব্য সকল চেষ্টার পরেও সবাইকে কাঁদিয়ে সবার আদরের ‘সুদান’ শেষমেশ মারা যায়”।
এই প্রজাতির শেষ পুরুষ প্রতিনিধি ‘সুদান’ রীতিমত তারকা খ্যাতিপ্রাপ্ত ছিলেন। প্রতি বছর সুদানকে এক নজর দেখতে কেনিয়ার ঐ অবজারভেটরিতে ভিড় জমাতেন দর্শনার্থীরা। গত বছর ডেটিং অ্যাপ টিন্ডার পরিচালিত এক জরিপে সুদানকে “পৃথিবীর সবথেকে যোগ্য ব্যাচেলর” হিসেবে মনোনয়ন করে টিন্ডার ব্যবহারকারীরা।
ওল পেজেটা কনজারভেটরির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রিচার্ড ভিগনে বলেন, “তার প্রজাতির এক মহান প্রতিনিধি ছিল সুদান। শুধু গণ্ডারই না বরং অন্যান্য বিলুপ্ত প্রায় প্রাণীর সংরক্ষণে সচেতনতা তৈরি ও বৃদ্ধিতে সুদানের ভূমিকার জন্য সবাই তাকে মনে রাখবে”।
পোচারদের (বন্য প্রাণী শিকারকারী) হাত থেকে রক্ষার জন্য সুদানের দুই মেয়ে নাজীন এবং ফাতুসহ সুদানকে চেক প্রজাতন্ত্রের একটি চিড়িয়াখানায় রাখা হয়। ২০০৯ সালে সেখান থেকে তাদের কেনিয়ার এই পরিচর্যা কেন্দ্রে স্থানান্তরিত করা হয়।
প্রজাতির সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য সুদানকে নারী সঙ্গীর সাথে রাখা হয়। তবে দুই জনের মধ্যে বেশ কয়েকবার মিলন হলেও নতুন কোন সদস্য জন্ম দিতে পারেনি সুদান।
তবে নর্দান সাদা গণ্ডারের প্রজাতি টিকিয়ে রাখতে গবেষকেরা কৃত্তিম শুক্রাণুর সাহায্য নিচ্ছেন। আগে থেকে সংগ্রহ করে রাখা অন্য নর্দান সাদা গণ্ডারের শুক্রাণুর সাথে সুদানের দুই মেয়ের ডিম্বাশয়ের সাথে মিলিত করা হবে। কেনিয়ার এই পরিচর্যাকেন্দ্রের গবেষকদের দাবি যে, এটাই এখন এই প্রজাতির গণ্ডারকে বাঁচিয়ে রাখার একমাত্র উপায়।
একসময় আফ্রিকা মহাদেশ জুড়ে প্রায় ২০ হাজার সাদা গন্ডার ছিল। চাঁদ, সুদান, উগান্ডা, কঙ্গো এবং কেন্দ্রীয় আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র এলাকাগুলোতে এ প্রজাতির গন্ডার বিচরণ করত। তবে গত শতক আগে এখানে মাত্র ১০০টি সাদা গণ্ডার অবশিষ্ট ছিল। আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গত শতকে হওয়া বিভিন্ন যুদ্ধ আর গৃহযুদ্ধের কারণে এ প্রজাতির বিলুপ্তি হয়েছে বলে ধারণা প্রাণী বিশেষজ্ঞদের।
পাশাপাশি গণ্ডারের শিং শিকারকারী অবৈধ পোচারদের কারণে সাউদার্ন সাদা গণ্ডার এবং কালো গণ্ডারের বিভিন্ন প্রজাতিও প্রায় বিলুপ্তির পথে।
সূত্র: এপি/ইন্ডিয়া ট্যুডে
//এস এইচ এস//টিকে