ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

বিশ্ব বন দিবস আজ

বিপন্ন ১২৮ প্রজাতির গাছ

প্রকাশিত : ০২:১০ পিএম, ২১ মার্চ ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ০২:১৪ পিএম, ২৯ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার

আজ বিশ্ব বন দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে দিবসটি। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে- সবুজ বন, সমৃদ্ধ নগর। দিবসটি উপলক্ষে আজ আলোচনা সভাসহ রয়েছে নানা আয়োজন।
এদিকে দখল-দূষণ ও নির্বিচার নিধনের ফলে দেশে বনাঞ্চলের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমছে। বন ও বনভূমি ধ্বংসের কারণে বিরল বহু প্রজাতির ওষুধি, ফলদ ও বনজ গাছপালা বিলুপ্ত হচ্ছে রোজ। এতে জীববৈচিত্র পড়ছে হুমকির মুখে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দেশের মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ বনভূমি অপরিহার্য হলেও বাংলাদেশে এই অনুপাত বর্তমানে মাত্র ৭-৮ শতাংশের মধ্যে। তদুপরি রোজ গড়ে এক লাখ ৩০ হাজার ফুল ও ফলের গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ নার্সারি সমিতি। পরিবর্তে লাগানো হচ্ছে মাত্র ৩০ হাজার।
দেশে নির্বিচারে চলছে বৃক্ষ নিধন। বাংলাদেশ ন্যাশনাল হার্বেরিয়ামের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ঔষধি, বনজ, ফলদসহ পাঁচ হাজারেরও বেশি প্রজাতির গাছপালা ছিল। এর মধ্যে অন্তত ১০ শতাংশ ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তালিকায় বাংলাদেশের ১২৮ প্রজাতির গাছকে বিপন্ন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিলুপ্ত প্রজাতির তালিকায় রয়েছে হিজল, তমাল, হেতাল, ধুপ, আগর, হরীতকী, বহেড়া, উড়ি আম, বৈল আম, লক্ষ্মী আম, সন্ধি বেত, সর্পগন্ধা, অশ্বগন্ধা,হাতিশুড়, কেয়া, নীল নিশিন্দা, কুর্চি, তিতরাজ, হরগোজা, পানি কর্পুর, ঘৃতকুমারি, টালি পামসহ আরও অজস্র নাম।
বন বিভাগের দাবি, বর্তমানে দেশের মোট আয়তনের ১৮ শতাংশ বনভূমি রয়েছে। অথচ তাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৬০ সালে বনভূমির পরিমাণ ছিল ২৪ শতাংশ। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে তা কমে দাঁড়ায় ১৯ শতাংশে। আশি ও নব্বইয়ের দশকে তা আরও কমে দাঁড়ায় ১৬ শতাংশে। বর্তমানে বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে দেশের ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ বা ১ দশমিক ৫২ মিলিয়ন হেক্টর ভূমি। এর মধ্যে রয়েছে পাহাড়ি বন, সমতল বন, সুন্দরবন, উপকূলে তৈরি করা বন এবং চা ও রাবার বাগানে সৃষ্ট বনাঞ্চল।
তবে পরিবেশবিদদের দাবি, বর্তমানে দেশে বনভূমির পরিমাণ মাত্র ৬ শতাংশ। ৪০ বছর আগে মাথাপিছু বনভূমি ছিল ০.০৩৫ হেক্টর, বর্তমানে এর পরিমাণ ০.০২২ হেক্টর। দেশব্যাপী অপরিকল্পিত ইটভাটা ও রাস্তাঘাট তৈরির কারণেও গাছপালা বা বনভূমি কমে যাচ্ছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশের প্রায় ১২ হাজার ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে শতকরা ৩৩ ভাগ ক্ষেত্রেই কাঠ ব্যবহৃত হচ্ছে। এই বিপুল পরিমাণ জ্বালানি জোগাড়ের জন্যও উজাড় হচ্ছে বনভূমি।
এভাবে বন ধ্বংসে কারণে বিলুপ্ত হচ্ছে বিপন্ন ও বিরল প্রজাতির অসংখ্য গাছপালাও।
এদিকে মার্কিন ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ প্রতিষ্ঠানের (ইউএসজিএস) জরিপে পাওয়া তথ্য বলছে, ভাঙনের কারণে সুন্দরবনে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ছয় বর্গকিলোমিটার হারে ২৩৩ বর্গকিলোমিটার বন ধ্বংস হয়েছে। সুন্দরবন ও তার আশপাশের এলাকার ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালার তালিকা তৈরি করে আইইউসিএন। এর মধ্যে বহু প্রজাতি এরই মধ্যে হারিয়ে গেছে। সুন্দরবনের বিখ্যাত সুন্দরীগাছও আছে বিপন্ন তালিকায়। এ ছাড়া বিলুপ্তির তালিকায় রয়েছে গেওয়া, গড়ান, পশুর, বাইন, হেঁতাল, গোলপাতা, খামু ও লতা সুন্দরী।
/এআর /