ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

‘বাংলাদেশি পণ্য বিশ্ববাজারে নেতৃত্ব দেবে’

প্রকাশিত : ০৪:৩২ পিএম, ২১ মার্চ ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ১১:৩৪ এএম, ২২ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার

চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে এগিয়ে থাকা দেশগুলোকে টেক্কা দিয়ে ৭০টিরও বেশি দেশে ব্যাটারি রফতানি করছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান রহিম আফরোজ বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, চীন ও জাপানের মতো দেশেও ব্যাটারি রফতানি করছে প্রতিষ্ঠানটি। সরকার পণ্য রফতানিতে ভর্তুকি দিলে বাংলাদেশি পণ্য বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার শীর্ষে অবস্থান করবে বলে মনে করেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়াজ রহিম। তিনি বলেন, পরিবেশ-বান্ধব ও মানসম্মত পণ্য উৎপাদন করতে পারলে আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাটারি ও সোলার প্যানেল রফতানি আরও বাড়বে। একুশে টিভি অনলাইনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোহাম্মদ জুয়েল

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আপনারা কোন ধরণের ব্যাটারি রফতানি করছেন?

নিয়াজ রহিম: আমাদের প্রধান ব্যবসা হচ্ছে অ্যাকুমুলেটার বা স্টোরেজ ব্যাটারি। শুরুতেই টার্গেট করেছিলাম ভারত, সিঙ্গাপুর ও মধ্যপ্রাচ্যে আমরা অ্যাকুমুলেটর ব্যাটারি রপ্তানি করবো। তবে বর্তমানে আমরা কেবল একটি পণ্য নিয়ে ৭০টির বেশি দেশে পণ্য রপ্তানি করছি। কিছু কিছু দেশে আমরা নিজেদের এক নম্বরে নিয়ে আসতে পেরেছি।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: রহিম আফরোজ এন্ড কোম্পানী থেকে আজ রহিম আফরোজ বাংলাদেশ লিমিটেড, পথচলা সম্পর্কে বলুন..

নিয়াজ রহিম: ১৯৪৮ সালে বাবা আবদুর রহিম ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করেন। এরপর ১৯৫৪ সালের এপ্রিলে চালু করেন রহিম আফরোজ এন্ড কোম্পানি লিমিটেড। শুরুতে ব্রিটেনের লুকাস ব্যাটারির ডিস্ট্রিবিউটরের কাজ করতাম আমরা। এরপর ১৯৮০ সালে লুকাস কোম্পানি ব্রিটেনে চলে গেলে, এর স্বত্ত্ব কিনে নিই আমরা। এরপর থেকে কোয়ালিটি পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে আমরা দেশীয় বাজারে শক্ত একটা অবস্থানে চলে যাই। ধীরে ধীরে আমরা ব্যবসার পরিধি বাড়াতে থাকি। ১৯৯৫ সালে প্রথম আমরা রফতানির চেষ্টা করি, এবং তিন বছরের মাথায় ব্যাটারিরি রপ্তানিতে আমরা ভাল একটি অবস্থানে চলে যাই। 

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: বর্তমানে কোন কোন দেশে ব্যাটারি ও সোলার প্যানেল রফতানি হচ্ছে?

নিয়াজ রহিম: বর্তমানে আমরা ৭০টি দেশে ব্যাটারি রপ্তানি করছি। এছাড়া সোলার প্যানেল রপ্তানি করছি বেশ কয়েকটি দেশে। মূলত ১৯৯৫ সালে আমরা ভারতে ব্যাটারি রফতানির চেষ্টা করেছিলাম। তবে ভারতে আমরা টিকতে পারিনি। এরপর মধ্যপ্রাচ্যে নজর দিই আমরা। ৩ বছর টানা চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার পর আমরা মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়। শুধু মধ্যপ্রাচ্য বা আফ্রিকার দেশ নয়, আজকে রাশিয়া, চিলি ও অস্ট্রেলিয়া থেকেও অর্ডার পাচ্ছি। বিশেষ করে আজ উন্নত দেশ থেকেও অর্ডার পাচ্ছি। এমনকি চীন ও জাপানেও আমরা আমাদের পণ্য রফতানি করছি। সত্যিকার অর্থে আমাদের প্রতিযোগিতা করতে হয় চীন ও কোরিয়ার সঙ্গে। সরকার ইতোমধ্যে এক্সপোর্ট সাবসিডি ঘোষণা দিয়েছে। আশা করি এটি আমাদের রফতানিতে আরও ভ্যালু অ্যাড করবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ব্যাটারি বা  সোলার প্যানেল রফতানির ক্ষেত্রে আমাদের চ্যালেঞ্জ কি?

নিয়াজ রহিম: সত্যিকার অর্থে আমাদের প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো দেশের ভাবমূর্তি। আমরা যতই নিজেদের নিয়ে গর্ববোধ করি না কেন, একটা সময় বিশ্ব এটা বিশ্বাস করতে পারতো না যে, বাংলাদেশও কোয়ালিটি পণ্য উৎপাদন করতে পারে। বিশেষ করে আমরা যখন, ১৫-২০ বছর আগে রফতানি শুরুর চেষ্টা করি তখন মধ্যপ্রাচ্যের ক্রেতারা আমাদের পণ্য দেখে মুগ্ধ হয়েছিল। কিন্তু যখনই শুনলো এটা বাংলাদেশের কোন পণ্য, তখন ওরা দেশকেই চিনতে পারলো না। ধীরে ধীরে আমরা আমাদের কোয়ালিটি পণ্য কম দামে বিক্রির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে স্থান করে নিয়েছি।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: বলা হয়ে থাকে দেশে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?

নিয়াজ রহিম: দেশে বর্তমানে ২০০টির বেশি সুপারশপ রয়েছে। আমাদের আছে ১৫টি। আমরা কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি ডিল করছি। আর এর কারণে কৃষকরা আজ ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে। আমরা কৃষকদের বলছি যে, আপনার পণ্য ঢাকার সুপারশপে এত টাকা দামে বিক্রি হবে। এখন আমার খরচ ও লাভ বাদ দিয়ে আপনাকে দেওয়া হবে এত টাকা। এর মাধ্যমে কৃষকও জানতে পারছেন, তার পণ্য কত টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে নতুন উদ্যোক্তারা তাদের পণ্য আমাদের মাধ্যমে বিক্রি করতে পারছেন। আমরা কেবল এখানে মাধ্যম হিসেবে কাজ করছি। এর মাধ্যমে তারা ব্রান্ডিং হচ্ছে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: সুপার শপে পণ্য বিক্রিতে আপনাদের কি কি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে?

নিয়াজ রহিম : এক্ষেত্রে যে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে আমাদের, তা হলো ভ্রাম্যমাণ আদালত বারবার আমাদের জরিমানা করছেন। বারবার আমাদের জরিমানা করার কারণে এই ব্যবসায় আমাদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমাদের এভাবে জরিমানার পেছনে যে ত্রুটি দেখানো হচ্ছে, তা আমাদের কোন ত্রুটি নেই। তারা মোড়কের জন্য জরিমানা করছেন, আমাদের শোরুমের পরিবেশের জন্য নয়। কিন্তু মোড়ক তৈরি তো আমাদের হাতে নেই, তা উৎপাদকের হাতে। এদিকে আমরা বিএসটিআই থেকে সনদপ্রাপ্ত পণ্য বিক্রি করলেও অনেক সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত আমাদের জরিমানা করেন। এতে আমাদের ভাবতে হচ্ছে, আমরা এই ব্যবসায় চালিয়ে যাবো কি না?

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আপনার প্রতিষ্ঠানসহ দেশের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই উচ্চ পর্যায়ে বিদেশি কর্মীদের আমরা দেখি, আমাদের দেশের শ্রমশক্তির উপর আপনারা কেন বিশ্বাস রাখতে পারছেন না?

নিয়াজ রহিম: সত্যিকার অর্থে আমাদের দেশে কর্মক্ষেত্রে উদ্বেগের জায়গা হলো দক্ষ জনশক্তির অভাব। আমাদের দেশে কর্মমুখী শিক্ষা না থাকায় ঠিক সেভাবে দক্ষ জনবল গড়ে উঠছে না। আর এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা বাধ্য হচ্ছে বিদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি আমদানি করতে। তবে ধীরে ধীরে এ সংখ্যাটা ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। সরকার উদ্যোগ নিয়ে দেশের জনশক্তিকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করতে পারলে আমাদের বিদেশী শ্রমিকদের উচ্চ পর্যায়ে নিয়োগ দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। আশা করছি, ভবিষ্যতে আমরা সবক্ষেত্রে বাংলাদেশি শ্রমিকদের উচ্চ পর্যায়ে নিয়োগ দিতে পারবো।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আপনাকে ধন্যবাদ

নিয়াজ রহিম: একুশে টেলিভিশন অনলাইনকেও ধন্যবাদ।

/ এআর /