ঢাকা, রবিবার   ০৩ নভেম্বর ২০২৪,   কার্তিক ১৮ ১৪৩১

অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে সিমেন্টের দাম

তবিবুর রহমান

প্রকাশিত : ১১:৩৪ পিএম, ২১ মার্চ ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ০৫:১৫ পিএম, ২২ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার

বেশ কিছুদিন ধরে হঠ্যাৎ করে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে সিমেন্টের দাম। নীতি নির্ধারণী মহল দাম সহনীয় পর্যায়ে  নিয়ে আসতে নানা উদ্যোগের কথা বললেও খুচরা কিংবা পাইকারি অথবা উৎপাদন পর্যায়ে নানা অজুহাতে বাড়ছে সিমেন্টের দাম।

ক্রেতাদের অভিযোগ উৎপাদক বা ব্যবসায়ীদের ইচ্ছায় বাজার নিয়ন্ত্রণ ও মূল্য নির্ধারণ হওয়ার কারণেই ঠকছে ভোক্তারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গত ৬ মাসে বিভিন্ন কোম্পানির ৫০ কেজির সিমেন্টের বস্তা প্রতি দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৮০ থেকে ১০০টাকা।

৬ মাস আগে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কোম্পানির সিমেন্টের দাম প্রতি ৫০কেজি বস্তা সিমেন্ট বিক্রি হত ৩৬০ থেকে ৩৯০ টাকা। বর্তমান বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির সিমেন্টের বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৪৬০ থেকে ৪৭০ টাকা দামে।  

সিমেন্ট তৈরিতে কাচঁমালের ‍উপর কোন ধরনের চার্জ বা কর আরোপ করা হয়নি। বাড়েনি কাচঁমালের দাম। তবুও উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে দেশ-বিদেশে কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধিই দাম বাড়ার মূল কারণ। এছাড়া টাকার বিপরীতে ডলার দাম বেড়ে যাওয়া, পরিবহন খরচ, জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কারণে ব্যবসায়ীরা সিমেন্টের দাম বৃদ্ধিতে বাধ্য হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আবসান খাত সংকটের মুখে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার কয়েকটি খুচরা সিমেন্ট ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) ক্রাউন সিমেন্ট ৪৬০ টাকা, ফ্রেশ সিমেন্ট ৪৬০টাকা, রুবি সিমেন্ট ৪৪০ টাকা, আকিজ সিমেন্ট ৪৪৫ টাকা, শাহ সিমেন্ট (স্পেশাল) ৪৬০ টাকা, প্রিমিয়ার ৪৪০ থেকে ৪৩০ টাকা,  হোলসিম ৪৪৫ টাকা, স্ক্যান ৪৩০ টাকা, সুপার ক্রিপ ৪৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।  গত সপ্তাহেও  এসব সিমেন্টের প্রতি বস্তায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা কমে বিক্রি করা হয়েছে।

এবিষয় জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারে খুচরা সিমেন্ট   ব্যবসায়ী মেসার্স আলভি ট্রেডার্সের মালিক ফারুক মৃধা একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতি বস্তা সিমেন্টে ৬০ থেকে ৮০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। দাম বৃদ্ধি কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা খুচরা ব্যবসায়ী। দাম বাড়ার কারণ আমরা কিভাবে বলব? প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ টাকা দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতি বস্তায়। আমরা যা দাম দিয়ে নিয়ে আসি তা থেকে ৫ থেকে ৮ টাকা বেশি দিয়ে বিক্রি করি। তিনি আরও জানান অস্বাভাবিক হারে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশি কিছু দিন ধরে মাল ক্রয় বন্ধ রেখেছি। বাজার স্বাভাবিক হলে আবার কিনব।

এবিষয় জানতে চাইলে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) প্রেসিডেন্ট আমলগীর শামসুল আল আমিন একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, নির্মাণ উপকরণের হঠাৎ করে এমন দাম বৃদ্ধিতে আবাসন শিল্পকে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ করবে। আবাসন খাত যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। সেই মুহুর্তে নির্মাণ উপকরণের দাম বৃদ্ধিতে নির্মাণ কাজ গতিহীন হয়ে পড়বে। ফলে যথাসময়ে ফ্ল্যান্ট হস্তান্তর অনিশ্চয়তা মুখে পড়বে। এতে দুর্ভোগে পড়বে চুক্তিবদ্ধ ক্রেতারা। তাই এখননি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে বর্তমানে এমএস রডের উৎপাদন ও বিপণনকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, উৎপাদন পর্যায়ে প্রতি বস্তায় (৫০কেজি) কাঁচামালের খরচ বেড়েছে ৮০ টাকা পর্যন্ত।

এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন হিসেবে- ক্লিংকার ৪০ ডলার থেকে বেড়ে ৬৩ ডলার, স্লাইড ১৮ ডলার থেকে বেড়ে ৩০ ডলার হয়েছে, ২৪ ডলারের জিপসাম ৩২ ডলার, ফ্লাই অ্যাশ ২১ ডলার এখন ২৯ ডলার, লাইমস্টোন ১৮ ডলার তা এখন ২৮ ডলার, ডলার মূল্য ৮০ টাকা থেকে বেড়ে ৮৪ বা ৮৫ টাকা হয়েছে।

কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে যে হারে কাচাঁমালের দাম যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে সে হারে আমাদের দেশে সিমেন্টের দাম বৃদ্ধি পায় নি। সিমেন্ট উৎপাদনের ব্যবহৃত কাচঁমাল (ক্লিংকার) চীন থেকে আমরা আমদানি করতাম। সেই চীন এখন তাদের দেশের পরিবেশ দূর্ষণের দোহাই দিয়ে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। এমন চলতে থাকলে কিছু দিন পর চীন অন্য দেশ থেকে ক্লিংকার আমদানি করবে। এভাবে যদি সব দেশে ক্লিংকার উৎপদান বন্ধ করে দেয় তাহলে কোন একসময় বিশ্ববাজারে প্রভাব পরবে বাংলাদেশে। এছাড়া আমরা চিন থেকে ক্লিংকার নিয়ে আসতাম কিন্তু পরিবেশ দুর্ষণের দোহাই দিয়ে ক্লিংকার উৎপাদন বন্ধু রেখেছে চিন। বর্তমানে বাংলাদেশ ভিয়েতমানের কাছ থেকে ক্লিংকার নিয়ে আসে। এখন চীনও ভিয়েতনাম থেকে ক্লিংকার নিয়ে আসা শুরু করছে। যার কিছু প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। বিশ্বের প্রতিটি দেশের এখন সিমেন্ট ও রড তৈরির কাচাঁমালের একটি নতুন সংকট সৃষ্টি হয়েছে। চীন তাদের ক্লিংকার উৎপাদন বন্ধ রাখায় এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। 

ভোক্তাদের অনেকেই নির্মাণ-সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সরকারের নিষ্ক্রিয় বাজার পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থাকে দায়ী করেছেন। একই সাথে প্রতিযোগিতামূলক বাজারের জন্য আমদানি শুল্ক কমানোর দাবি করেছেন তারা।  

আর ভোক্তারা বলছেন, প্রতি বছর নির্মাণ মৌসুম (অক্টোবর-এপ্রিল/মে) আসলেই বাড়ানো হয়ে থাকে সব নির্মাণ সামগ্রীর দাম। রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে সিন্ডিকেট করে উৎপাদনকারী প্রধান প্রধান কোম্পানিগুলো দাম বাড়ায় বলে মনে করেন তারা। আর অজুহাত হিসেবে দাড় করানো হয় কখনো শীত, কখনো বৃষ্টি আবার কখনোবা আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি।

টিকে