মাশরাফি প্রকৃত বন্ধুর কাজ করেছে: আশরাফুল
প্রকাশিত : ০১:৫৭ পিএম, ২২ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০২:০৪ পিএম, ২২ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার
বন্ধু বাৎসল্য মাশরাফির চরিত্রের একটি বড় দিক। এতবড় ক্রিকেটার হয়েও অবসর কাটান বন্ধুদের সঙ্গেই। তাই তো অন্য সমসাময়িক ও বন্ধুপ্রতিম ক্রিকেটারদের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়াতেও জুড়ি নেই তার। ব্যক্তি জীবনে প্রাণ খোলা স্বভাবের এই ক্রিকেটার হৈ চৈ পছন্দ করলেও বন্ধুদের প্রয়োজনে সাহায্য ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন নীরবে-নিভৃতে।
এই তারকা মনে করেন, এক বন্ধুর প্রয়োজনে আরেক বন্ধু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে, এগিয়ে আসবে, পাশে দাঁড়াবে এটাই তো বন্ধুত্ব। তা নিয়ে ঢোল পেটানোর কিছু নেই বলে মনে করেন তিনি। তাইতো তার অন্য খবর চাওর হলেও মানবিক গুণ এবং বন্ধুদের পাশে দাঁড়ানোর খবর অনেকটাই ঢাকা থাকে। কারণ পরিচিত সংবাদকর্মীদের সঙ্গে এ নিয়ে আলাপে তিনি বার বার বলেন, প্লিজ এসব লিখবেন না।
গত বছর প্রিমিয়ার লিগে ছেলেবেলার বন্ধু জাতীয় ক্রিকেটার সৈয়দ রাসেলের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মাশরাফি। বাঁ-হাতি পেসার রাসেলের ইনজুরি মুক্ত হতে দরকার ছিল মোটা অংকের অর্থের। মাশরাফি বিনা শর্তে কখনও শোধ না করার শর্তে সৈয়দ রাসেলকে চার লাখ টাকা দিয়ে দেন। এ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশ করা হলেও মাশরাফি তাতে খুশি হননি।
এবার ক্রিকেটার বন্ধু মোহাম্মদ আশরাফুলের পাশে মাশরাফি। অবাক হলেও সত্য যে, আশরাফুলের এবারের লিগে দারুণ সাফল্য, তিন সেঞ্চুরি হাকিয়ে হৈ চৈ ফেলে দেওয়ার পিছনেও মাশরাফি! মাশরাফি খেলেন, আবাহনীতে। আর আশরাফুল কলবাগানে। কিন্তু ভিন্ন দলে খেললেও বন্ধুকে অনুপ্রাণিত করা যায়, তাকে বুদ্ধি, পরামর্শ ও উৎসাহ দেওয়া যায়। সেটা মাশরাফি একা নন, আশরাফুলের সুহৃৎ ও শুভানুধ্যায়ী কোচ জালাল আহমেদ চৌধুরীসহ আরও অনেকেই দিয়েছেন। তবে আসল কাজটি করেছেন মাশরাফি। আশরাফুলকে ফিটনেস সচেতন করে তুলে আগে ফিটনেসে মনোযোগি হওয়া, ওজন কমানো এবং শরীরটাকে চাঙ্গা রাখার পরামর্শ দিয়ে প্রকারন্তরে আশরাফুলের ব্যাটকেই সচল করে দিয়েছেন মাশরাফি।
আর এমন সত্যটি আশরাফুলের নিজের মুখের কথা। আশরাফুলই জানিয়েছেন, বন্ধু মাশরাফি এবার তার কেমন উপকার করেছেন। আশরাফুলের বলেন, তার এবার ভালো খেলার পিছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকাটা মাশরাফির।
আশরাফুল জানান, সবাই তাকে উৎসাহ জুগিয়েছেন। কোচ জালাল তাকে অনেক পরামর্শ দিয়েছেন। ভালো খেলার কৌশলও বাতলে দিয়েছেন। তাই তিনি কৃতজ্ঞ। তবে তিনি মন থেকে সবচেয়ে বেশি ধন্যবাদ দেন মাশরাফিকে। কারণ এবার লিগে তার ভালো খেলা তথা রান করার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা বন্ধু মাশরাফির। তিনি বলেন, আমি চরম কৃতজ্ঞ বন্ধু মাশরাফির কাছে। কারণ আমার মনে হয় আসল কাজটি করে দিয়েছে বন্ধু মাশরাফি। এর ফলে আমার ব্যাট থেকে শেষ অবধী তিন সেঞ্চুরি বেড়িয়ে এসেছে। আমি রানে ফিরেছি।
আশরাফুল বলেন, আমার দল কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সঙ্গে খেলাঘর সমাজ কল্যানের ম্যাচ ছিল শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে। আমি সে ম্যাচে জিরো করে আউট হয়ে গেছি। আউট হওয়ার ধরনটা ছিল খুবই খারাপ। আমার ক্যারিয়ারে কখনো অত বাজে বলে আউট হয়েছি কি না মনে করতে পারছি না। মনটা খুব খারাপ। হঠাৎ আমার ড্রেসিং রুমে মাশরাফি এসে অভয় দিয়ে বললো, টেকনিক আর স্কিল নিয়ে অত চিন্তার কিছু নেই। তোর মত টেকনিক আর স্কিল ক’জনার আছে। টেকিনিক আর স্কিল নিয়ে অত মাথা ঘামাস না। ওসব নিয়ে অত চিন্তারও কিছু নেই। সেটা ঠিকই আছে। শোন, একটা কথা বলি। তোর ফিটনেস সমস্যা। ওজন বেড়ে গেছে, মুটিয়ে গেছিস। শরীর ভারী হওয়ায় বডি ও ফুট ম্যুভমেন্টও স্লো হয়ে গেছে। সবার আগে তাই আগে ওজন কমা। ফিটনেস বাড়া।
আশরাফুল আরও বলেন, মাশরাফির কথাগুলো অমার ভেতরে এক অদ্ভুত অনুভূতি জাগালো। বন্ধুর পরামর্শ মেনে মন দিলাম ওজন কমাতে। মাশরাফির সঙ্গে কথা বলার পর থেকে ফিটিনেস ট্রেনিং বাড়িয়ে দিয়েছি। শরীর সতেজ ও ঝড়ঝড়ে লাগছে অনেক। আর শরীর হালকা হওয়ার প্রভাবে ব্যাটেও রানের ধারা ফিরে এসেছি। যে আমি প্রথম পাঁচ ম্যাচে ( ২৫+১০৪+৮+০+০ ) করেছিলাম মাত্র ১৩৭। সেই আমি মাশরাফির কথা মেনে ফিটনেস সচেতন হয়ে পরের ছয় খেলায় দুই সেঞ্চুরি ( ১০২*+ ০+ ৬৪+ ১৬+ ১২৭ ) আর এক হাফ সেঞ্চুরিতে করলাম প্রায় তিন গুণ ৩০৯ রান ।
তাই সত্যিই মাশরাফি প্রকৃত বন্ধুর কাজ করেছে বলে স্বীকার করলেন আশরাফুল।
একে// এআর