গোপন ভিভিও ভাইরাল : চার দেয়ালে বন্দি হচ্ছে নারী
একুশে টিভি অনলাইন প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ০৫:১১ পিএম, ২২ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১১:৫৭ পিএম, ২৪ মার্চ ২০১৮ শনিবার
তথ্য-প্রযুক্তির ছোঁয়া মানুষের জীবনকে একটু হলেও স্বস্তিদায়ক করে তুলেছে। কিন্তু সেই প্রযুক্তির অপব্যবহার মানুষের জীবকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে এর শিকার হচ্ছে নারীরা। ইন্টেরনেটে ছড়িয়ে পড়া গোপন ভিডিওয়ের কারণে এ যাবৎ বহু নারীর জীবনে ডেকে এনেছে ঘোর অমানিশা। অনেকেই আত্নহত্যার পথও বেঁচে নিচ্ছেন। অনেকেই লোক লজ্জার কথা ভেবে চার দেয়ালের মাঝে বন্দি জীবন যাপন করছেন।
বেশে কিছুদিন আগে এক তরুণীর একটি ভিডিও প্রকাশ হয় নেট দুনিয়ায়। সে ভিডিওতে ওই তরুণীর সঙ্গে তার প্রেমিকের অন্তরঙ্গ মুহূর্ত দেখেছে সবাই। চার মাসের সম্পর্কের মধুর কিছু সময় ছিল তাদের। বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ায় তরুণীর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে সম্পর্কের সময়কার একান্ত গোপনীয় কিছু স্মৃতি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয় তার প্রেমিক। ভিডিওটি তরুণীর প্রিয়জন, আত্মীয়, পাড়া-প্রতিবেশী এমনকি বন্ধু সবার হাতে হাতে পৌঁছে যায় ক্ষণিক সময়ের মধ্যেই। এতে তরুণী হয়ে পরে সমাজের কাছে সবচেয়ে বাজে চরিত্রে মেয়ে। লোকলজ্জায় দীর্ঘদিন চার দেয়ালের মাঝেই কাটে তার সময়। তবে পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে লড়াই করে আর পারছিলেন না এই তরুণী। চারপাশের মানুষগুলোকে আর মুখ দেখাবে না এই প্রত্যয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। এভাবেই থেমে যায় একটি জীবন।
গত বছরের সেপ্টম্বর মাসে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লিজার (ছদ্মনাম) ভিডিও ভাইরাল হয়। পরে জানা যায়, লিজাকে চাকরি দেওয়ার নাম করে কক্সবাজার ঘুরতে নিয়ে যায় বেসরকারি এক কোম্পানীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। ভালোবাসা ও বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেখানকার আবাসিক হোটেলে লিজার সঙ্গে শারীবিক সর্ম্পক করে ওই যুবক। শুধু তাই নয় লিজার অজান্তেই অন্তরঙ্গ মুহূর্তের এসব ভিডিও ধারণ করা হয়। কক্সবাজার থেকে ফেরার পর ওই যুবক লিজার সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেই। তার কিছুদিন পর গোপনে ধারণ করা ভিডিও ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইউটিউব ও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। এতে লিজার পৃথিবী থমকে দাঁড়ায়। পরিবার, সমাজ, বন্ধুমহল সবাই ধিক জানায় লিজাকে। আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত না নিলেও লিজার পৃথিবী এখন বেডরুমের চারদেয়ালে।
উপরে দুটি ঘটনাকেও হার মানিয়েছে কাজলের (ছন্দনাম) জীবনের গল্প। বিয়ের দুই মাসের মাথায় জীবিকার তাগিদে স্বামী চলে যায় বিদেশে। এই সুযোগে কাজল যোগাযোগ করে পুরোনো প্রেমিক শান্তের সঙ্গে। প্রথম প্রথম শান্ত মুখ ফিরিয়ে নিলেও একপর্যায়ে দু’জন অভিমান ভুলে এক হয়। লুকিয়ে লুকিয়ে তাদের দেখা সাক্ষাৎ শুরু। একপর্যায়ে গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে যায় দুই তরুণ মন। মাসে এক দুই দিন থেকে তাদের মেলামেশা গড়ায় সপ্তাহে দু’দিনে। দিনে দিনে বাড়তে থাকে তাদের সর্ম্পকের গভীরতা। কাজল যখন শান্তের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে তখন তার সরল বিশ্বাসের সুযোগ নেয় প্রেমিক। তাদের শারীরিক সর্ম্পকের ভিডিও ধারণ করে কাজলের অজান্তেই। কয়েক মাস পর অন্ত:স্বত্তা হয়ে পড়ে কাজল। ডাক্তারের এ সংবাদ পেয়ে আকাশ ভেঙে পড়ে কাজলের মাথায়। স্বামী-শ্বশুরবাড়িকে কী উত্তর দেবে আর পরিবারকেই বা কি জবাব দেবে এই চিন্তায় কাজলের পৃথিবীটা ছোট হয়ে আসে। উপায়ন্তর না দেখে স্বামীর সংসার ছেড়ে প্রেমিক শান্তের সঙ্গে ঘর বাধার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু বিধি বাম। শান্তকে বিষয়টি জানিয়ে বিয়ে করতে বলে। এতে শান্ত রৌদ্রমূর্তি ধারণ করে। এ নিয়ে দু’জনের টানাপোড়েনের জেলে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ইউটিউবে ছড়িয়ে দেয় শান্ত। এই ভিডিও কাজলের স্বামীর হাতে পৌছে যায় মুহূর্তেই। একদিকে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ অন্যদিকে শান্তের প্রতারণা সেই সঙ্গে সামাজিক চাপ। সবমিলিয়ে গলায় ফাঁস দেওয়াটাকেই সঠিক সিদ্ধান্ত মনে করে কাজল।
ইন্টারনেটে এমন ভিডিও প্রকাশে দেশের বহু জীবন যাচ্ছে। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা ও লোকলজ্জার ভয়ে আইনের সহায়তা নিচ্ছেন না অনেকেই। পর্নগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ এর ৯-এ বলা আছে, কোনো ব্যক্তি ইন্টারনেট বা ওয়েবসাইট বা মোবাইল ফোন কিংবা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পর্নগ্রাফি সরবরাহ করলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন। আর এ ধরনের অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকরী বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা বলছেন এ-সংক্রান্ত অপরাধের মাত্রা আরো বেশি, অনেক অপরাধের খবরই সংবাদমাধ্যমে আসে না। মানসম্মানের ভয়ে অনেকে এ রকম অপরাধের শিকার হয়েও থানা পুলিশ কিংবা অন্য কোনো সংস্থার কাছে অভিযোগ করছেন না। ফলে অনেক ঘটনাই বিচারের আওতায় আসছে না আর যেগুলো আসছে, সেগুলোরও অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীদের শনাক্ত করা যায় না। এক্ষেত্রে আমাদের প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
টিআর/এআর /