ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

যক্ষ্মা নিয়ে নতুন উদ্বেগ বাংলাদেশে!

প্রকাশিত : ০৮:৫৯ এএম, ২৫ মার্চ ২০১৮ রবিবার

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, শনাক্তের বাইরে থাকা যক্ষ্মা রোগীরা কিংবা যারা চিকিৎসা পুরোপুরি শেষ করেন না তাদের কারণে বাংলাদেশে নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা বা এমডিআর।

অর্থাৎ সাধারণ চিকিৎসা তাদের জন্য আর কার্যকর থাকছে না, শনাক্ত করার পর তাদের জন্য প্রয়োজন হয় আরও দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার- এমনটাই মনে করছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা।

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বা এনটিপির হিসেবে ১৯৯৫ থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে প্রায় ৩০ লাখ যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে শিশু রয়েছে প্রায় ২০ হাজার।

ঢাকায় আইসিডিডিআরবির একজন বিজ্ঞানী ডা. সায়েরা বানু বলছেন বছরে তিন লাখ ৬০ হাজার মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়। কিন্তু আক্রান্ত অনেক রোগী ওষুধের ফুল কোর্স সেবন না করায় পরিণত হচ্ছেন ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগীতে। অর্থাৎ তখন তাদের জন্যে প্রয়োজন হয় অতিরিক্ত চিকিৎসার।

সায়েরা বানু বলছেন, এদের মধ্যে বছরে প্রায় পাঁচ হাজার ৩০০ রোগী ধারণা করা হয় যে তাদের ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা হতে পারে। এদের সবাইকে শনাক্ত করতে সক্ষম হচ্ছি না। যাদের শনাক্ত করা যায়নি তাদের মাধ্যমেই এটা ছড়াতে পারে।

কিন্তু সেটা কতটা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে? ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগী শনাক্তকরণে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা কি বাংলাদেশে আছে?

জবাবে সায়েরা বানু বলেন, ভয়ের কোন কারণ নেই। কারণ শনাক্ত করতে অত্যাধুনিক জিন এক্সপার্ট পরীক্ষা চলে এসেছে যার মাধ্যমে দুঘণ্টায় পরীক্ষা করা যায়। এ ধরণের ১৯৩টি যন্ত্র বাংলাদেশে এসেছে। আর এখন বাংলাদেশই এমন পদ্ধতি বের করেছে যাতে নয় মাসেই রোগীদের ভালো করা যায়।

১৮৮২ সালে রবার্ট কক্স নামে একজন বিজ্ঞানী বায়ুবাহিত এ রোগটির জীবাণু চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে প্রথমে ফুসফুসে ও পরে শরীরের অন্য অংশেও প্রবেশ করে এ জীবাণু। একসময়ের ঘাতক ব্যাধি যক্ষ্মার চিকিৎসায় এখন সাফল্য পাওয়ার দাবি করে বাংলাদেশ। তবে তারপরেও কমছেনা রোগী বরং নিত্য নতুন ধরনের যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এর কারণ কী?

জবাবে যক্ষ্মা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মো. আবু রায়হান বলেন, যাদের ডায়াগনোসিস হয় না বা ওষুধ খায় না তাদের কারণেই ঝুঁকি বাড়ছে। চিকিৎসা না হলে প্রতিটি রোগী আরও ১০ জনকে আক্রান্ত করাতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে পাঁচ হাজার রোগীর মধ্যে চার হাজার শনাক্তের বাইরে। আর এ চার হাজার রোগীর প্রতিজন বছরে ১০ জনকে আক্রান্ত করতে পারেন-এ আশংকা থাকে সবসময়ই।

যদিও জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কর্মকর্তা ও চিকিৎসক নাজিস আরেফিন সাকী বলছেন, দেশের প্রায় সব জায়গায় যক্ষ্মার চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা কিংবা কমিউনিটি ক্লিনিক, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, গার্মেন্ট কর্মীদের চিকিৎসা কেন্দ্র, জেল খানায় যক্ষ্মার চিকিৎসা ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় আক্রান্তদের জন্য নয়টি বিশেষ চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে।

আরেফিন বলছেন, কার্যকর কিছু ব্যবস্থা নেওয়ায় গত কয়েক বছরে ওষুধ প্রতিরোগী যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমে আসতে শুরু করেছে বলে ধারণা করছেন তারা। তবে চিকিৎসক ও গবেষকরা বলছেন শিশু যক্ষ্ণা রোগী শনাক্তকরণের পাশাপাশি দেশজুড়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা আরও বাড়ানো গেলে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ আরও সাফল্য পাবেই বলে মনে করছেন তারা।

তথ্যসূত্র: বিবিসি।

একে//এসএইচ/