ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

দি ডক্টরস্ (ভিডিও)

যক্ষ্মা রোগ, লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়

প্রকাশিত : ০৩:২৭ পিএম, ২৫ মার্চ ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ১২:২৬ পিএম, ২৭ মার্চ ২০১৮ মঙ্গলবার

যক্ষা একটি সংক্রামক ব্যাধি। যা প্রধানত ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। যক্ষা বলতে সাধারণভাবে আমরা ফুসফুসের যক্ষাকেই বুঝি। তবে ফুসফুস ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন স্থানে যক্ষা হতে পারে। যেমন- লসিকাগ্রন্থি, হার ও গিট, অন্ত্র, হৃদপিন্ডের আবরণ ও মস্তিস্কের আবরণ ইত্যাদি। অতীতে মানুষের যক্ষা ধরা পড়লে হতাশ হয়ে জীবন যাপন করত। কারণ তখন যক্ষার কোন ঔষধ ছিল না। ফলে মানুষ খুবই ভয় পেত। আজ আর সেই দিন নেই, যক্ষার ওষুধ নিয়মিত খাওয়ার পর তা সম্পূর্ণরুপে ভালো হয়।

একুশে টেলিভিশনের (ইটিভি) দি ডক্টরস্’ অনুষ্ঠানে আজকের আলোচনার বিষয়- ‘যক্ষা রোগ, এর লক্ষণ ও প্রতিকার’

বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন- ডা. এস.এন.এ আশরাফ জামীল (বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার নেটওয়ার্ক, ঢাকা)

দি ডক্টরস্’ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন- অধ্যাপক ডা. ইকবাল হাসান মাহমুদ

শ্রুতিলিখন করেছেন- সোহাগ আশরাফ

 

প্রশ্ন : যক্ষা রোগ সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি। আবার অনেকেই আছি যারা খুব বেশি জানি না। রোগটি সম্পর্কে একটু বলেন।

উত্তর : যক্ষ্মা বা যক্ষা (Tuberculosis বা টিবি) একটি সংক্রামক রোগ। মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস (Mycobacterium tuberculosis) নামক একটি জীবাণু এই রোগের জন্য দায়ী। ‘যক্ষ্মা’ শব্দটা বাংলা ‘রাজক্ষয়’ শব্দ থেকে এসেছে। যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীরা খুব রোগা হয়ে পড়েন। যক্ষ্মা রোগে সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত হয় ফুসফুস, যদিও হৃৎপিণ্ড, অগ্ন্যাশয়, ঐচ্ছিক পেশী ও থাইরয়েড গ্রন্থি ছাড়া শরীরের প্রায় যেকোনও অঙ্গেই যক্ষ্মা রোগ হতে পারে এমনকি কিডনি, মেরুদন্ড অথবা মস্তিষ্ক পর্যন্ত আক্রান্ত হতে পারে। জীবাণু শরীরে ঢুকলেই কিন্তু যক্ষ্মা হয় না। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হলে যক্ষ্মা হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে।

প্রশ্ন : যক্ষ্মা অনেক পুরাতন একটি রোগ। এ রোগটির লক্ষণগুলো কি কি?

উত্তর : সাধারণত সন্ধ্যা বেলায় জ্বর আছে। খাবার খাবে কিন্তু তারপরও শুকিয়ে যাবে। কফ হবে। সেই কফ আর সারবে না। সাধারণ এন্টিবায়টিক খেলেও সারবে না। একটা সময় দেখা যাবে যে কফের সঙ্গে রক্ত আসছে। অনেক ক্ষেত্রে রক্ত নাও আসতে পারে। ওজন কমে যায়। ক্ষুধামন্দা হবে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। সাধারণত এটা ফুসফুসের যক্ষা। কিন্তু এছাড়া অন্য কোন যক্ষার ক্ষেত্রে লক্ষ নাও থাকতে পারে।

প্রশ্ন : যক্ষা শরীরের কোথায় কোথায় হয়?

উত্তর : মাথার চুল থেকে শুরু করে সর্ব অঙ্গেই যক্ষা হতে পারে।

প্রশ্ন : যক্ষা রোগীকে অনেক ওষুধ খেতে হয়। কেনো?

উত্তর : যখন একজন রোগীর যক্ষা হয় তখন তিনি বিপুল পরিমানে টিবির জীবানুতে আক্রান্ত হন। আমরা চিকিৎসকরা ওই সময় রোগীর দেহের সব টিবির জীবানু কিল করার চেষ্টা চালাই।

প্রশ্ন : রোগ নির্নয়ের জন্য কি কি পরীক্ষা করা হয়?

উত্তর : রক্তের পরীক্ষা, কফ পরীক্ষা, ত্বকের পরীক্ষা, বুকের এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, কালচার টেস্ট।

প্রশ্ন : কাদের যক্ষা হবার সম্ভাবনা বেশি?

উত্তর :

- অপুষ্টিতে ভুগলে।

- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের কম।

- বয়স্ক ব্যক্তি।

- যক্ষায় সংক্রমিত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা ব্যক্তি।

- যারা দীর্ঘদিন ধরে মাদক সেবন করছেন।

প্রশ্ন : ডায়াবেটিস রোগীদের কি টিবি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে?

উত্তর : অবশ্যই টিবি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। সাধারণ মানুষের তুলোনায় তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। এজন্য তাদের টিবি হওয়ার সম্ভাবনাটা বেশি থাকে।

প্রশ্ন : তাদের ক্ষেত্রে ইনসুলিন দিতে হয়, নাকি অন্য কোন চিকিৎসা দিয়ে থাকেন?

উত্তর : যখন একজন ডায়াবেটিস রেগীর টিবি ধরা পড়ে তখন আমরা তাদের ব্লাড সুগার দেখি কি পর্যায়ে আছে। যদি দেখা যায় ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করা দরকার সেই ক্ষেত্রে ট্যাবলেট দিয়ে চিকিৎসা করা গেলেও আমরা তা করি না। ইনসুলিনই এ সময় উত্তম।

প্রশ্ন : যক্ষ্মা রোগ প্রতিরোধের উপায় কি?

উত্তর : যক্ষ্মা বা টিবি রোগের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে একজন সুস্থ ব্যক্তিকে কিছু বিষয়ে সাবধান হতে হবে। যেমন :

  • জন্মের পর পর প্রত্যেক শিশুকে বিসিজি টিকা দিতে হবে।
  • পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে।
  • বাসস্থানের পরিবেশ খোলামেলা, আলো-বাতাস সম্পন্ন হতে হবে।
  • জনাকীর্ণ পরিবেশে বসবাস যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে।
  • ডায়াবেটিস জাতীয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসকারী রোগের ক্ষেত্রে, সুষ্ঠু চিকিৎসা নিতে হবে।
  • যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীকে সবসময় নাক মুখ ঢেকে চলাচল করতে হবে।
  • যক্ষ্মা জীবাণুযুক্ত রোগীর সঙ্গে কথা বলার সময় একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
  • রোগী জীবাণুমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত রোগীকে অন্য সবার থেকে একটু আলাদা রাখতে হবে।
  • জীবাণুযুক্ত রোগীকে যেখানে সেখানে কফ ফেলা পরিহার করতে হবে।

এসএ/