ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ উপকূল অতিক্রম করছে
প্রকাশিত : ০১:৪৯ পিএম, ২১ মে ২০১৬ শনিবার | আপডেট: ০১:৪৯ পিএম, ২১ মে ২০১৬ শনিবার
উপকূল অতিক্রম করছে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’। ভোলার তজুমদ্দিনে এরিমধ্যে মারা গেছে ২ জন। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পাহাড় ধসে ২ জন এবং পটুয়াখালীর দশমিনায় গাছচাপায় একজন মারা গেছেন। বিধ্বস্ত হয়েছে সহস্রাধিক বাড়িঘর। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু দুপুর নাগাদ ভোলা, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রামের অতিক্রম করবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। সমুদ্রবন্দরসহ উপকূলের ১৪ জেলায় ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে।
দু’দিন আগেই পূর্বাভাস ছিলো শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ আঘাত হানবে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু। বাতাসের গতিবেগ বাড়তে থাকায় তা দ্রুত এগুতে থাকে। তাই শনিবার দুপুর নাগাদ উত্তাল হয়ে ওঠে সাগর; ঝড় বইতে শুরু করে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে।
ভোলার তজুমদ্দিন শশীগঞ্জ বাজারের শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ৫ শতাধিক ঘর বাড়ি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। ঘর চাপা পরে আকরাম ও রেখা নামে ২ জনের মৃত্যু হয়। বেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল।
রোয়ানুর প্রভাবে চট্টগ্রামে দিনভর ঝড়ো হাওয়া বইছে। সীতাকুণ্ডে পাহাড় ধসে মারা গেছে ২ জন। বৈরী আবহাওয়ায় শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান উঠানামা বন্ধ রয়েছে। কক্সবাজারে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ও জেলার ৫শ’ ১৬টি আশ্রয় কেন্দ্র।
পটুয়াখালীর দশমিনায় গাছচাপায় একজন মারা গেছেন। বিধস্ত হয়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি। সমুদ্র উত্তাল থাকায় মৎস্য বন্দর আলীপুর-মহিপুরের শিববাড়িয়া নদীতে নিরাপাদ আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৫ হাজার মাছ ধরার ট্রলার। জোয়ারের প্রভাবে পটুয়াখালীর কলাপাড়া এবং রাংগাবালীসহ সব উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
মংলায় দিনভর ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি হয়েছে। বন্দরে অবস্থানরত জাহাজ থেকে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। সব জাহাজকে সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
লক্ষ্মীপুরে রামগতি ও কমলনগরে মেঘনা নদীর পানি ২ থেকে ৩ ফুট বেড়েছে। ভোলা-লক্ষীপুর ও ভোলা-বরিশাল রুটের ফেরী চলাচলসহ জেলার অভ্যন্তরীণ ও দুর পাল্লার রুটের নৌ-যান চলছে না। প্রস্তুত রয়েছে ১০ হাজারের বেশি সেচ্ছাসেবী। খোলা হয়েছে ১১টি কন্ট্রোল রুম। এছাড়াও স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ৯২টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। ৫ শরও বেশি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বরগুনায় টানা বৃষ্টি হচ্ছে। তালতলীর তেতুলবাড়িয়ায় বেড়ীবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকতে শুরু করেছে নিচু এলাকায়। ফেনীর উপকূলীয় এলাকার জনগণকে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। প্রস্তুত রয়েছে ৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্র। কিশোরগঞ্জের ভৈরব মেঘনা নদী বন্দরে আটকা পড়েছে শতাধিক মালবাহী কার্গো ও তেলবাহী জাহাজ।
সাতক্ষীরায় সুন্দরবন ও সীমান্ত উপকূলীয় নদীগুলো উত্তাল হয়ে উঠেছে। ১৩২টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পিরোজপুরে দমকা হাওয়া ও বৃষ্টির তীব্রতা বেড়েই চলেছে। টানা বর্ষনে সব নদ-নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। কচা নদীর টগরা ফেরি ঘাটের গ্যাংওয়ে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ১২টি রুটের যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু আঘাত হানলে উপকূলীয় এলাকায় ৪ থেকে ৫ ফুট জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এছাড়া রয়েছে পাহাড় ধসের শঙ্কাও।
ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করে ভারতের মিজোরাম, ত্রিপুরা, মনিপুর ও মিয়ানমারের দিকে অগ্রসর হবে।