ঢাকা, শনিবার   ০২ নভেম্বর ২০২৪,   কার্তিক ১৭ ১৪৩১

আপনারা আদালতের আদেশ নিয়ে খেলছেন: প্রধান বিচারপতি

প্রকাশিত : ০১:৫২ পিএম, ২৭ মার্চ ২০১৮ মঙ্গলবার

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) আইনজীবীকে বিষোদগার করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। প্রধান বিচারপতি বিজিএমইএ-র আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আপনারা আদালতের আদেশ নিয়ে খেলছেন। আর এটা খুবই অপ্রত্যাশিত। ভবন ভাঙতে বারবার সময় চাওয়ায় বিজিএরইএ সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেছেন তিনি।

বিজিএমইএর সময় চেয়ে আবেদনের ওপর মঙ্গলবার শুনানি হয়। এ সময় প্রধান বিচারপতি বিজিএমইএর প্রতি এই ভাষায় বিরক্তি প্রকাশ করেন।

আদালতে বিজিএমইএ’র পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম। এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

শুনানির শুরুতেই বিজিএমইএ’র আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘আপনারা যে, এ বিষয়টি নিয়ে বারবার আসেন। আপনার নিজেরও তো বিষয়টি নিয়ে আদালতে দাঁড়াতে দ্বিধা হওয়ার কথা। আদালতের আদেশ পালন করা কি দরকার ছিল না? এ নিয়ে সময় কতবার নিয়েছেন, এরপর তো আবার সময় চাইতে আসবেন।’

জবাবে কামরুল হক সিদ্দিকী বলেন, ‘এ পর্যন্ত তিনবার সময় চাওয়া হয়েছে।’ তখন আদালত বলেন, ওই সময়ের মধ্যে ভবন ভাঙতে এ পর্যন্ত কি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন?’

উত্তরে কামরুল হক বলেন, ‘আমরা স্পেস খুঁজছি। আর কী পদক্ষেপ নিয়েছি সেটা আবেদনে আমরা উল্লেখ করেছি।’ আদালত বলেন, ‘যে স্টেপ নিয়েছেন তাতে তো মনে হচ্ছে পাঁচ বছর সময় লেগে যাবে। আবারও সময় চাইতে আসবেন।’

কামরুল হক বলেন, ‘সমস্যায় পড়লে তো আদালতে আসতে হয়। ক্লায়েন্টের জন্যই তো আমাকে সময়ের আবেদন করতে হয়। এটা তো আমার পেশাগত দায়িত্ব।’

তখন আদালত বলেন, আপনারা খুব বুদ্ধিমান। কারণ, একসঙ্গে কোথাও এত বড় স্পেস পাবেন না। আর তখন কোর্টে আসবেন সময়ের জন্য। এই বুদ্ধি নিয়েই তো থাকেন।

আদালত আরও বলেন, কোর্ট কি অর্ডার বাস্তবায়নের কথা বলে দেবে? কোর্ট শুধু আদেশ দেবে। আর আদেশ পালন না হলে আদালত অবমাননার রুল দেবে। আপনারা শেষ এক বছরে কী স্টেপ নিয়েছেন?’

জবাবে কামরুল হক বলেন, ‘১১০ কাঠা জমি আমরা পারচেস (ক্রয়) করেছি।’ তখন আদালত বলেন, ‘এভাবে তো পাঁচ বছর লাগবে।’ কামরুল হক বলেন, ‘বেশি সময় লাগবে না।’

আদালত বলেন, ‘তাহলে আপনাদের মুচলেকা দিতে হবে যে আর সময় চাইবেন না। এরপর আমরা বিবেচনা করতে পারি।’ তখন কামরুল হক বলেন, তাহলে সময় দেন। আদালত বলেন, ‘তাহলে আজ আদেশ নয়। রাখলাম।’

উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালের ২৮ নভেম্বর বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর ভবনটির উদ্বোধন করা হয়। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল ভবনটি ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এরপর এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে সংস্থাটির নানা আইনি চেষ্টা শেষে ২০১৭ সালের ৫ মার্চ ভবনটি ভেঙে ফেলার চূড়ান্ত আদেশ হয়। তখন ভবন ভাঙতে কত দিন সময় লাগবে, তা জানিয়ে আবেদন করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। পরে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ ভবন সরাতে তিন বছর সময় চেয়ে আবেদন করেন। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙতে কর্তৃপক্ষকে সাত মাস সময় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এরপরও বিজিএমইএ ফের আবেদন করায় গত বছরের ৩ ডিসেম্বর পুনরায় ছয় মাস সময় দেন আপিল বিভাগ।

একে// এআর