বন্ধ্যাত্বের যত কারণ ও এর চিকিৎসা
প্রকাশিত : ০৬:০৮ পিএম, ২৮ মার্চ ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ০৬:১৮ পিএম, ২৮ মার্চ ২০১৮ বুধবার
বন্ধ্যাত্ব নিয়ে আমাদের সমাজে বেশ কিছু ভুল ধারণা আছে। প্রাচীন কালে এসব ধারণা অনেক বেশি থাকলেও বর্তমানে অনেকটাই দূর হয়েছে। কিছু নিয়ম ও অভ্যাস পরিবর্তন করলে বন্ধ্যাত্ব থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া যায়।
বন্ধ্যাত্ব সমস্যা ও সমাধান নিয়ে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস অ্যান্ড গাইনি বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার ডা. লতিফা আক্তার। তার সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন একুশে টিভি অনলাইনের প্রতিবেদক তবিবুর রহমান।
একুশে টিভি অনলাইন: বন্ধ্যাত্ব আজকাল একটি জটিল সমস্যায় পরিণত হচ্ছে। এটি ধীরে ধীরে বাড়ছে। এর পেছনের কারণগুলো কী?
ডা.লতিফা আক্তার: বন্ধ্যাত্ব স্বামী স্ত্রী দুজনের কারণে হতে পারে। দেরি করে বিয়ে করা। দেরি করে সন্তান নেওয়া। আগে যেমন বয়স বেশি হওয়ার আগেই দম্পত্তিরা বাচ্চা নিত এখন সেটা হচ্ছে না। ৩২ থেকে ৩৫ বছর হয়ে যায়। বাচ্চা নিতে অনেক দেরি হচ্ছে। এ কারণে হতে পারে বন্ধ্যাত্ব।
ছেলেদের বেলায় হোক বা মেয়েদের বেলায় হোক। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যে তার শুক্রকীটের পরিমাণ কমে যায়, শুক্রকীটের গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। সেটিও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। আর কিছুটা রয়েছে হরমোনাল কারণ। শরীর থেকে যে হরমোন আসছে সেটা পর্যাপ্ত পরিমাণ কাজ করছে না। অথবা তার টেস্টিস যথাযথ জায়গায় নাই। হয়তো সেটি পেটের ভেতর রয়ে গেছে। অনেক মেয়েদের জরায়ু টিউমার হতে পারে। বর্তমান পেক্ষাপটে অনেকে নারীর একাধিক পুরুষের সাথে সহবাস কারার করণে জরায়ুতে ইনফেকশন হতে পারে। সারাদিন যারা বাইরে দাঁড়িয়ে কাজ করে এদের বেলায় ভেরিকোসিল বেশি হয়। এই ভেরিকোসিলও শুক্রাণুর গুণাগুণ নষ্ট করে দেয়। ফলে বর্তমানে সময় বন্ধ্যাত্ব বেড়ে যাচ্ছে।
একুশে টিভি অনলাইন: বন্ধ্যাত্ব দূর করতে কি কি করণীয়?
ডা.লতিফা আক্তার: আমাদের জীবন যাপনের ধরন এখন পরিবর্তন হয়ে গেছে, কাজের পরিবেশ পরিবর্তন হয়ে গেছে, আমরা অনেক বেশি ইলেকট্রনিক জিনিস ব্যবহার করি। এটি শুক্রকীটের গুণাগুণ নষ্ট করে। একজন ছেলে সারাদিন বাইরে কাজ করে। এই গরম পরিবেশও কিন্তু শুক্রাণুর গুণাগুণকে নষ্ট করে দেয়। মাদক, মদ্যপান, ধূমপান এসব কারণেও এর গুণগত মান কমে। আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছেয়ে গেছে মাদকে। এগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে। এছাড়া আমাদের খাদ্য অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। ফাস্টফুড জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। যে সকল খাদ্য আমাদের শরীরে ভিটামিন বৃদ্ধি করে সেসকল খাদ্য খেতে হবে। যে সকল মহিলা ও পুরুষদের ওজন বেড়ে যাচ্ছে তাদের উচ্চতা অনুযায়ী ওজন কমিয়ে আনতে হবে। বিয়েটা সময় মতো করা ভাল এবং বিয়ের পর দু’এক বছরের মধ্যে বাচ্চা নিতে পারলে ভাল হয়। এছাড়া জরায়ুতে যদি কোন সমস্যা দেখা যায়। তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। বিয়ের এক দুই বছর স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে থাকার পরেও যাদের সন্তান হচ্ছে না। তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। পড়াশুনার জন্য স্বামী স্ত্রী অনেক সময় এক সঙ্গে থাকতে পারে না। এরকম দীর্ঘসময় ধরে একসঙ্গে না থাকার কারণে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।
একুশে টিভি অনলাইন: কী কারণে বন্ধ্যাত্ব হচ্ছে এটি বোঝার উপায় কী? আর নারী না কি পুরুষটির এই সমস্যা হচ্ছে—সেটি আপনারা কীভাবে নির্ণয় করেন?
ডা.লতিফা আক্তার: নারী-পুরুষ কার সমস্যা আছে। এটা নির্মাণ করা জন্য আমরা প্রথম নারী ও পুরুষের ইতিহাস শুনি এবং অ্যানালাইসিস করি দেখি কার সমস্যা। মহিলাদের যদি মাসিক নিয়মিত হয়। সেক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্বের শঙ্কা অনেকটাই কমে যায়। আর যদি মাসিক তিন চার মাস পর হচ্ছে। মাসিকে ব্যাথা থাকছে। মহিলা যদি ওজন বেশি হয়। তখন আমরা কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে বলি। অনেক সময় শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। এতে আমরা সাধারণত ইউরোলজিস্টের সাহায্য নিয়ে থাকি। আর নারীদের ক্ষেত্রে একটি ট্রান্সভ্যাজাইলাল আলাট্রাসোনোগ্রাফি করি। এরপর তার মাসে মাসে ওভুলেশন (ডিম নিঃসরণ) হচ্ছে কি না সেটা নিশ্চিত হই। পাশাপাশি তার কিছু হরমোনাল পরীক্ষা করা হয়। হরমোন টেস্ট করলে আমরা বুঝতে পারি ডিম নিঃসরণ হচ্ছে কি না। ডিম আসার পথে কোনো বাধা আছে কি না এর জন্য টিউব টেস্ট করি। এটি করে আমরা বুঝতে পারি যে কোথায় সমস্যা হচ্ছে। যখন সমস্যা জানব তখন চিকিৎসা দেওয়া সহজ হবে।
একুশে টিভি অনলাইন: সঠিক রোগ নির্ণয়টা কোথায় পাওয়া যাবে। আদৌ সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে কি না সেটি আসলে কীভাবে বোঝা যাবে?
ডা.লতিফা আক্তার: আগে স্বামী-স্ত্রী আগে পরীক্ষা করে নিতে হবে। যদি ৩৫ বছরের নিচে মেয়েদের বয়স হলে আমরা বলতে পারি, সে এক বছর অপেক্ষা করতে পারে। তবে ৩৫ বছরে যদি কারো বিয়ে হয়, তার যদি ছয় মাসের মধ্যে গর্ভধারণ না হয়, তাকে সব পরীক্ষা করে কারণ নির্ণয় করে তার চিকিৎসা দেওয়া উচিত।
একুশে টিভি অনলাইন: কোন কোন ক্ষেত্রে কী কী চিকিৎসা দেবেন সেটি নির্ভর করে কিসের ওপর?
ডা.লতিফা আক্তার: পুরুষের বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা আসলে খুবই কম। যদি শুক্রাণুর পরিমাণ কম থাকে আমরা কিছু অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ভিটামিন দেই। তাদের জীবন যাপনের ধরন পরিবর্তনের পরামর্শ দেই। ধূমপান করলে বলি এটি করবেন না। কম্পিউটারে কতক্ষণ কাজ করে বা বাইরে কতক্ষণ কাজ করে এর ওপর আমরা কিছু পরামর্শ দেই। তাকে বলা হয় ঢিলা পোশাকে থাকবেন। বিকেল বেলা বা রাতে একটু খোলা বাতাসে এক ঘণ্টা হলেও হাঁটবেন। গরম পানি বেশি ব্যবহার করা ভালো না। এতে শুক্রাণুর ক্ষতি হয়। এ ধরনের পরামর্শ দেই। আর নারীর জন্য আমাকে আগে বের করতে হবে, যে তার ডিম নিঃসরণে কোনো সমস্যা আছে কি না। পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজিজ তরুণীদের ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখা যায়। এখানে মেয়েদের অস্বাভাবিক ওজন হয়। অনেক সময় শরীরের লোমগুলো বেড়ে যায়। এদের ঋতুস্রাবও মাসে মাসে হয় না। এদের ক্ষেত্রে আমরা হরমোন পরীক্ষা করলে এই বিষয়ে আরো নিশ্চিত হতে পারি। এদের বেলায় ওভুলেশন ইনডিউসিং ড্রাগ দিতে হয়। আর টিউব যদি ব্লক থাকে তখন একটি চিকিৎসা হলো টেস্ট টিউব বেবি।