‘জনসেবা খাতে কমছে বিনিয়োগ বাড়ছে ভোগান্তি’
প্রকাশিত : ১১:৫৮ পিএম, ২৮ মার্চ ২০১৮ বুধবার
বাংলাদেশের জনসেবা খাতে আর্থিক ও সামাজিক বিনিয়োগ কমছে। পাশাপাশি অন্তর্ভূক্তিমূলক নীতি, পর্যবেক্ষণ, স্বচ্ছতা এবং জাবাদিহিতার অভাবে সেবা নিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হন সাধারণ মানুষ। এক্ষেত্রে নারী সেবাগ্রহীতার অভিজ্ঞতা আরো খারাপ।
জনসেবা খাতে সরকারের বাজেট, উদ্যোগ, বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা পর্যালোচনা করে এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে একশন এইড বাংলাদেশ। বুধবার ঢাকার ব্র্যাক সেন্টার ইন-এ আয়োজিত জেন্ডার সংবেদনশীল জনসেবা ও অন্তর্ভূক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি’ বিষয়ক দু’দিন ব্যাপি একটি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই পর্যবেক্ষন তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলাদেশের জনসেবা খাতের পরিস্থিতি তুলে ধরেন একশনএইড বাংলাদেশ-এর ব্যবস্থাপক নুজহাত জাবিন।
সম্মেলনের ধারণাপত্রে বলা হয়, সরকারি জনসেবাসমূহ, বিশেষ করে স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও নগর সেবায় বিনিয়োগ হ্রাস পাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের চিত্র তুলে ধরা হয়। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৪.৭১ শতাংশ। যেখানে ২০০৯-১০ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল ৬.০২ শতাংশ। এর সাথে যুক্ত হয়েছে দক্ষ ও পেশাজীবী সেবাদাতার অভাব।শিক্ষাক্ষেত্রে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ১৪.৩৯ শতাংশ। যেখানে ২০০৯-১০ অর্থ বছরেছিল ১৪.৩০ শতাংশ।
আবার কেন্দ্রীভ‚ত বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন ব্যবস্থার ফলে নাগরিকদের সঠিক চাহিদার প্রতিফলন বাজেটে হচ্ছে না।বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা এবং পরিবহন সেবার ক্ষেত্রে সরকারেরদুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে দিন দিন সেবা ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি ও সেবা বেসরকারিকরনের ফলে সেবা নিতে খরচ বাড়ছে সাধারণ মানুষের। ইন্টারন্যাশনাল বাজেট পার্টনারশিপ ওপেন বাজেট সার্ভে ২০১৭ অনুযায়ী, অংশগ্রহণ সূচকে বাংলাদেশের অর্জন ১০০-তে মাত্র ১৩, স্বচ্ছতার সূচকে প্রাপ্তি ১০০-তে ৪১, যার অর্থ তথ্য সরবরাহে বাংলাদেশ এখনও অনেক দুর্বল।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, সরকার নির্বাচিত হয় মানুষের সেবার জন্য। আর দেশের সকল নাগরিকের জন্য একই ধরনের সেবা নিশ্চিত করা উচিত। কিন্তু সেবা দেওয়ার জন্য যেই পরিকল্পনা করা হয় তা আসলে সবার কথা চিন্তা করে করা হয় না। ১০ বছর আগের বাজেটে জনসেবা খাতে যে হারে বরাদ্দ ছিল বর্তমানে যে ঠিক সেই হারে বরাদ্দ দিতে হবে, তা ভাবা ঠিক না। বাস্তব চিত্র হলো, প্রয়োজন অনুসারে জনসেবা খাতে বরাদ্দ ও বাস্তবায়ন হয় না।”
বাংলাদেশ আরবান ফোরামের উপদেষ্টা মোস্তফা কাইয়ূম বলেন, আমাদের দেশের উন্নয়নে পিছিয়ে পড়া মানুষের অবদানই বেশি। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য এই জনগোষ্ঠী আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা কিংবা বাস্তবায়নে জায়গা পায় না। আবার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে জনসেবা পেতে গিয়ে তারা নিগৃহীত হন। যে কৃষকবা শ্রমিক দেশের উন্নয়নে সবচাইতে বেশি ভূমিকা রাখে, সেই আবার হাসপাতাল কিংবা পরিবহনের সেবা নিতে গিয়ে নিগৃহীত হন।”
আয়োজকরা বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবহনেরমতো গুরুত্বপূর্ণ জনসেবা খাতগুলো জেন্ডার সংবেদনশীল না। এ বিষয়ে সাম্প্রতিক একটি গবেষণার ফলাফলও তুলে ধরা হয়। একশনএইড-এর নারীর জন্য নিরাপদ নগরী নামের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৪২ শতাংশ নারী হাসপাতালে গিয়ে খারাপ ব্যবহারের শিকার হন।
ওই গবেষণায় অংশ নেওয়া ৮৪ শতাংশ নারী মনে করেন শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং সেবাসমূহ অনিরাপদ। গবেষণায় উঠে এসেছে যে, নারীরা প্রতিনিয়ত হয়রানির (স্পর্শ, বাজে ও অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য) শিকার হন।
গবেষণায় দেখা গেছে, ক্রমাগত নগরায়নের ফলে শহরে জেন্ডার সংবেদনশীল জনসেবা নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জ দিন দিন বাড়ছে। নগরে নারীরা সরকারি জনসেবা গ্রহনের ক্ষেত্রে একদিকে যেমন যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, অন্যদিকে নিরাপদ জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে তাদের সুযোগ কমছে।
বাংলাদেশ আরবান ফোরামের সাবেক সহ-সভাপতি সালমা এ শাফি বলেন, এখনো মেয়েরা বাইরে স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে না, চাইলেই কাজ করতে পারে না। এছাড়া নারীদের নিরাপত্তার জন্য বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হয় না। কিন্তু আমরা সেটা নিয়ে কোন কথাই বলি না। যেহেতু মানুষের সচেতনতা খুব কম, মানুষ একত্রিত নয়। তাই মানুষ কথা বলতে পারে না। আমরা যদি পরিবর্তন চাই তাহলে আমাদের আরো সক্রিয় হতে হবে।
এ বিষয়ে সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাহ্ বলেন, আমাদের দেশের নারীরা সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে নিগৃহীত। জনসেবা খাতে নারীর পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য তাদেররাজনৈতিক ক্ষমতা বাড়াতে হবে। কারণ, নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নই মৌলিক বিষয়। আর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ না বাড়লে নারী বঞ্চিত হবেই। কোনভাবেই তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না এমনকি নির্যাতন বন্ধও করা যাবে না। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
এমএইচ/