মমতার প্রস্তাবে যা বললেন সোনিয়া
প্রকাশিত : ১২:৪৬ পিএম, ২৯ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০১:১৭ পিএম, ২৯ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার
সামনের বছর অনুষ্ঠেয় ভারতের লোকসভা নির্বাচনে প্রথমবারের মতো বাঙালি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এজন্য তিনি বিজেপি বিরোধীদের নিয়ে জোট গঠন করতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
গতকাল বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। দিল্লিতে বেশ কয়েকজন প্রবীণ নেতার সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠকও করেছেন মমতা। ইউপিএ জোট নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে গতকাল সন্ধ্যায় বৈঠক করেছেন মমতা। এ বৈঠকের ফল নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কৌতুহলের শেষ নেই। মমতার জোট করার প্রস্তাবে সোনিয়া গান্ধী কী জবাব দিয়েছেন সেটি নিয়েই চলছে কানাঘুষা।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর মমতা সোমবার দিল্লিতে হাজির হন। কথা বলেন বিরোধী নেতাদের সঙ্গে। কথা বলেন, বিজেপির বিক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গেও। এঁদের মধ্যে ছিলেন শত্রুঘ্ন সিনহা, অরুণ শৌরী ও যশোবন্ত সিনহা। এ ছাড়া দিল্লির সংসদ ভবনে মহারাষ্ট্রের শারদ পাওয়ারের এনসিপি, শিবসেনা, বিহারের আরজেডি তেলেঙ্গানার টিআরএস সাংসদদের সঙ্গে কথা বলেন। কাশ্মীরের ফারুক আবদুল্লাহর সঙ্গেও কথা হয়। সবার কাছে মমতা তুলে ধরেন ফেডারেল ফ্রন্ট গঠনের একটি চিত্র। মমতার লক্ষ্য বিভিন্ন রাজ্যে ফেডারেল ফ্রন্টের আসনসংখ্যা যদি কংগ্রেসের আসনসংখ্যার বেশি হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে মমতা চান মোদিকে সরাতে কংগ্রেস ফেডারেল ফ্রন্টকে সমর্থন করুক। তবে মমতা যেসব নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাঁরা সবাই একবাক্যে বলেছেন, মোদিকে সরাতে কংগ্রেসকে চাই। কংগ্রেস ছাড়া মোদিকে সরানো কঠিন।
অবশ্য মমতা আগেভাগে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে রাজি নন। তিনি চাইছেন, ২০১৯ সালের ভোটের পর এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হোক যেখানে তাঁর প্রস্তাবিত ফেডারেল ফ্রন্টের আসনসংখ্যা কংগ্রেসের চেয়ে বেশি হয় এবং কংগ্রেসও ফেডারেল ফ্রন্টকে সমর্থন দিতে বাধ্য হয়। যেমনটা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রশেখর, এইচডি দেবগৌড়া, আইকে গুজরালের ক্ষেত্রে। সেই লক্ষ্য নিয়েই মমতা এগোতে শুরু করছেন।
মমতার কথা—যে রাজ্যে যে দল শক্তিশালী সেই দলের প্রার্থী লড়বে বিজেপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে। অর্থাৎ, ‘একের বিরুদ্ধে এক’ প্রার্থী নিয়ে লড়তে হবে বিরোধী দলকে। আর এটা হলে বিজেপি পরাস্ত হবে দেশ থেকে। এ লক্ষ্যে মমতা দিল্লিতে রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছেন।
শারদ পাওয়ার থেকে শুরু করে কানিমোজি, ফারুক আবদুল্লাহর মতো নেতাদের মমতা গতকাল বুঝিয়েছেন, ২০১৯ সালের আগে তারা যেন তার প্রস্তাবিত ফেডারেল ফ্রন্টে যোগ দেন। তবে কংগ্রেসের বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা শারদ পাওয়ার ওই প্রস্তাবে রাজি নন। উল্টো কংগ্রেস মমতাকে ইউপিএর আহ্বায়ক করার প্রস্তাব দিয়েছে। ডিএমকে নেত্রী কানিমোজি, এনসি নেতা ফারুকও ইউপিএ ছাড়ার প্রতিশ্রুতি দেননি মমতাকে।
তবে রাহুলের সঙ্গে বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকলেও কংগ্রেসের জন্য দরজা পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে চান না মমতা। মমতা এ প্রসঙ্গে বলেন, সোনিয়া গান্ধী তো কংগ্রেসেরই। তবে তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন সূত্রের দাবি, আসলে রাহুলের নেতৃত্ব মানতে রাজি নন মমতা। সোনিয়ার সঙ্গে বৈঠক করলেও তৃতীয় ফ্রন্ট নিয়ে তার অবস্থানের কোনো বদল হচ্ছে না।
এসবের মাঝেই মমতা গতকাল বুধবার রাতে এক বৈঠক করেন ইউপিএর চেয়ারপারসন ও কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে। সন্ধ্যার পর তিনি সোনিয়া গান্ধীর বাড়িতে হাজির হন। সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের দুই এমপি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডেরেক ও’ব্রায়েন। আধঘণ্টার বৈঠক করেন তাঁরা। মমতার প্রস্তাব শুনে সোনিয়া গান্ধী পাল্টা জবাবে বলেছেন, ‘বিজেপিকে হটাতে গেলে দেশের সব থেকে বড় বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতৃত্বে এগিয়ে এসে লড়তে হবে।’
সোনিয়া চান, মমতাও তাদের জোটে শামিল হোন। তবে মমতা এখনো কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে মেনে নিতে পারছেন না। সোনিয়ার সঙ্গে মমতা যেভাবে মিশছেন সেভাবে রাহুলের সঙ্গে তাঁর মতের মিল হচ্ছে না। সোনিয়া মমতাকে এদিন জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের আলোচনার বিষয়বস্তু তিনি জানিয়ে দেবেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে।
সূত্র : আনন্দবাজার।
এ সংক্রান্ত আরও খবর