চক্ষু শিবিরে গিয়ে চোখ হারালেন ২০ জন
প্রকাশিত : ০১:২০ পিএম, ২৯ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার
চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের একটি চক্ষু শিবিরে অপারেশনের পর ২০ রোগীর মধ্যে ১৯ জনের চোখ তুলে ফেলতে হয়েছে। এছাড়া হায়তান নামের অপর একজন চোখে দেখতে পারছেন না।
কয়েক মাস আগে বাম চোখে ঝাপসা দেখতে থাকেন ৫০ বছরের দিনমজুর আহাম্মদ আলী। এক পর্যায়ে তিনি বাধ্য হন একটি এনজিও থেকে ক্ষুদ্রঋণ তুলে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে যেতে। গত ৫ মার্চ তার বাম চোখের ছানি অপারেশন করা হয়। সেখানে ভুল চিকিৎসার কারণে এখন চোখটিই তুলে ফেলতে হয়েছে তাকে। শুধু তিনিই নন, এরকম আরও ২০ রোগীই এ পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। এরা সবাই গরিব। তাই হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিতেও ভয় পাচ্ছেন।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমুনিটি হেল্থ সেন্টারে তিন দিনের চক্ষু শিবিরের দ্বিতীয় দিন গত ৫ মার্চ ২৪ জন নারী-পুরুষের চোখের ছানি অপারেশন করা হয়। বাসায় ফিরেই ২০ জন রোগীর চোখে ইনফেকশন দেখা দিলে পরদিনই তারা যোগাযোগ করেন ইম্প্যাক্ট হাসপাতালে। তাদের তখন গুরুত্ব না দিয়ে কোনো রকম চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু যন্ত্রণা অসহনীয় হয়ে উঠলে ফের তারা ইম্প্যাক্টে গেলে সেখান থেকে তখন কয়েকজন রোগীকে স্থানীয় এক চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। স্থানীয় ওই চক্ষু বিশেষজ্ঞ তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন। এদের মধ্যে চারজন রোগী নিজেদের উদ্যোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত স্বজনদের নিয়ে ঢাকায় আসেন। পরে ইম্প্যাক্ট থেকে গত ১২ মার্চ একসঙ্গে ১৬ জন রোগীকে ঢাকায় নেওয়া হলে ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ৫ মার্চের ওই অপারেশনের ফলে এদের চোখের এত ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে যে, ১৯ জনের একটি করে চোখ তুলে ফেলতে হয়েছে। এ ছাড়া হায়াতুন (৬০) নামে এক নারীর অপারেশন করা বাম চোখের অবস্থাও ভালো নয়।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. খায়রুল আলম গতকাল বুধবার বিকালে ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেল্থ কেয়ার সেন্টারের অপারেশন থিয়েটারসহ ওয়ার্ড পরিদর্শন করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে তিন কার্যদিবস তথা ২ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, তদন্ত দল ইতিমধ্যেই ইম্প্যাক্ট হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের যন্ত্রপাতির নমুনা সংগ্রহ করেছে। সেগুলো পরীক্ষা করা হবে। চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ওই হাসপাতালের আই (চক্ষু) কনসালটেন্ট ডা. মোহাম্মদ শাহীনের সব শিক্ষা সনদের ফটোকপি সংগ্রহ করেছেন। তার এমবিবিএসসহ অন্যান্য সনদ যাচাইয়েরও বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এ ঘটনায় ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ইম্প্যাক্ট হাসপাতালের পরিচালক ডা. হাসিব মাহমুদ। তিনি বলেন, ক্ষতিপূরণ বাবদ খরচ দেওয়া হবে। কিছু খরচ দেওয়াও হয়েছে।
ডা. হাসিব মাহমুদ বলেন, গত ১৩ মার্চ আইসিডিডিআরবি`র ল্যাবে পরীক্ষা করে জানা গেছে, অপারেশনের সময় ব্যবহূত `ট্রাইপেন ব্লু`তে একটা জীবাণু পাওয়া গেছে। সেটি থেকে এই ইনফেকশন হতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি। ইম্প্যাক্ট হাসপাতাল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আইরিসের কাছ থেকে ট্রাইপেন ব্লু সংগ্রহ করে। বিষয়টি আইরিসকে জানানো হয়েছে বলে জানান ডা. হাসিব।
একে// এআর