ওপেন হার্ট সার্জারি ছাড়াই হার্টের ছিদ্র বন্ধ!
প্রকাশিত : ০১:৪৭ পিএম, ২৯ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার
কাজ করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলেন। তবুও প্রায় জোর করেই ঘরের কাজকর্ম করতেন বছর চব্বিশের সেলভা মোহন (নাম পরিবর্তিত)। কিন্তু, একটা সময়ে এসে আর পেরে উঠছিলেন না। নিজের চার বছরের বাচ্চাকে কোলে নিলেও কষ্ট হচ্ছিল। ঘরের কাজ তো অনেক দূরের ব্যাপার।
ঝাড়খণ্ডের মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহবধূ সেলভা। স্ত্রীর শরীরের যখন এ রকম অবস্থা, সেলভার স্বামী তখন তাকে নিয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান। পরীক্ষানিরীক্ষার পর জানা যায়, সেলভার হার্টে বড় একটা ছিদ্র রয়েছে। হার্টের ডান এবং বাঁ দিকের এট্রিয়ামের মধ্যে এই ছিদ্রকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘এট্রিয়াল সেপ্টাল ডিফেক্ট’। সেলভা বছর পাঁচেক আগেও সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। কিন্তু, এই ক্লান্ত হওয়ার মধ্যে আসলে জটিল সমস্যার ইঙ্গিত ছিল।
এর পর স্থানীয় ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকরাই সেলভাকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য তার স্বামীকে পরামর্শ দেন। সেই মতো, সেলভাকে নিয়ে তিনি কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে আসেন। তত দিনে সেলভা খুবই রোগা হয়ে গিয়েছেন। ওজন নেমে এসেছে ৩২ কিলোগ্রামে। ওই হাসপাতালে ট্রান্স ইসোফেগাল ইকোকার্ডিওগ্রাম (টিইই) পরীক্ষায় ধরা পড়ে সেলভার এএসডি রয়েছে। এক পাশে বেশি চাপ পড়ার কারণে তার হার্টের ডান দিকের প্রকোষ্ঠে সরু ডায়ালেশন হয়েছিল। আর সে কারণেই হার্টের ওই ছিদ্র যত দ্রুত সম্ভব বন্ধ করা জরুরি ছিল।
হার্টে এই ধরনের ছিদ্র থাকলে সাধারণত ওপেন হার্ট সার্জারি করে সমাধান করা হয়। এই ধরনের অস্ত্রোপচারের পর অনেক দিন হাসপাতালে থাকতে হয় রোগীকে। কিন্তু, সেলভারা অস্ত্রোপচারে রাজি ছিলেন না। কারণ তাদের মনে হয়েছিল, ওই অস্ত্রোপচারের পরে বুকের দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। এর পর অভিজ্ঞ দুই ইন্টারভেনশনাল পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট অনিলকুমার সিংঘী এবং রানা রাঠৌরের নেতৃত্বে একটি মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি হয়। হার্টের ওই ছিদ্র বন্ধ করার কাজটা সত্যিই বেশ ঝুঁকির ছিল বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন। কারণ, ছিদ্রের মুখের যে পরিমুখ, তা-ও বেশ সমস্যা তৈরি করছিল। মেডিকা সুপার স্পেশালটি হাসপাতালের সঙ্গে আগে থেকেই চুক্তি থাকার ফলে এই চিকিৎসার পুরো খরচটাই বহন করেছে ঝাড়খণ্ড সরকার।
ওই মেডিক্যাল বোর্ড জানিয়েছে, কার্ডিয়াক ক্যাথেরাইজেশন ল্যাবরেটরিতে বেলুনের সঙ্গে একটি যন্ত্র নেওয়া হয়েছিল সেলভার অস্ত্রোপচারের জন্য। ফ্লুরোস্কোপিক ও ট্রান্স ইসোফেগাল ইকো কার্ডিওগ্রাম-এরও প্রয়োজন হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। অস্ত্রোপচারের জন্য সব মিলিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লেগেছিল। অস্ত্রোপচার শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেলভাকে ওয়ার্ডে দিয়ে দেওয়া হয়।
পরের দিন চিকিৎসকেরা পরীক্ষানিরীক্ষার পর নিশ্চিত হয়ে জানান যে, সেলভার হার্টের ওই ছিদ্র সম্পূর্ণভাবেই বন্ধ হয়েছে। সে দিনই সেলভাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানান, রোগীর পরিবার প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারছিল না যে, কোনও রকম খুঁত বা দাগ ছাড়াই অস্ত্রোপচার হয়েছে। তা ছাড়া ওঁরা ভাবতেও পারেননি সেলভা দু’দিনের মধ্যেই ছুটি পেয়ে যাবেন!
হার্টের এ রকম বড় ছিদ্র বড় কোনও অস্ত্রোপচার ছাড়াই বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব। কম খরচে এবং হাসপাতালেও রোগীকে বেশি দিন থাকতে হয় না। চিকিৎসকদের দাবি, যে কোনও অস্ত্রোপচারেই অনিশ্চয়তা থাকে। কিন্তু, এ ক্ষেত্রে বিপদের ঝুঁকি অনেক কম।
সুস্থ হওয়ার পর সেলভা মেডিকার কাছে তার কৃতজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। পরে এক দিন তিনি নিয়ম মেনে চেকআপে এসেছিলেন। বাড়ির কাজকর্ম করতে তার আর কোনও অসুবিধা হচ্ছে না বলেই জানিয়েছেন তিনি। মেডিকা গ্রুপ অব হসপিটালের চেয়ারম্যান অলোক রায় বলেন, এএসডি ক্লোজারের এই পদ্ধতি সত্যিই বেশ আলাদা। মেডিকাতে আমরা সব সময়েই চেষ্টা করি কীভাবে এমন অসুখ কম খরচের অস্ত্রোপচারে সারানো যায়। সেলভার এই সেরে ওঠা আমাদের কাছে ভীষণ অনুপ্রেরণা।
তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার।
এসএইচ/