উন্নয়নের গতি ধরে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ: ড. সালেহ উদ্দিন
প্রকাশিত : ০৭:৪৭ পিএম, ১ এপ্রিল ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ০৩:৩৮ পিএম, ৪ এপ্রিল ২০১৮ বুধবার
স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীলের কাতারে বাংলাদেশের উত্তরণ, বিশাল এ অর্জনের পেছনে চ্যালেঞ্জ ও তা টপকানোর উপায়, পুঁজিবাজারের বিদ্যমান সমস্যা ও সম্ভাবনা, জনশক্তি রফতানি, জনসংখ্যার বোনাসকাল, কর্মসংস্থানসহ ব্যাংকের সুদের হার, ঋণ, ঝুঁকিসহ অর্থনীতির আরো সব অনুসঙ্গ নিয়ে একুশে টেলিভিশন মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদের। তিনি ২০০৫ সালের ১ মে থেকে ২০০৯ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পদে ছিলেন। তিনি বর্তমানে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করছেন।
ড. সালেহ উদ্দিন মনে করেন, স্বল্পোন্নত তকমা কাটিয়ে বাংলাদেশ যে উন্নয়নশীল দেশে যাচ্ছে এটিই এখন চ্যালেঞ্জ। এই উন্নয়নের গতি ধরে রাখাই সামনের দিনগুলোয় বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ। তিনি টেকসই উন্নয়নের উপর জোর দেন। বলেন, আমাদের এ অর্জনে (এলডিসি থেকে উত্তরণ) ৪৭ বছর লেগেছে। অথচ এতো সময় লাগার কথা না। তাই এখন আমাদের উন্নয়নের দিকে দ্রুত আগাতে হবে। উন্নয়নের গতি আরো বাড়াতে হবে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইন প্রতিবেদক রিজাউল করিম। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব আজ প্রকাশিত হলো-
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ হয়েছে। এখন বাংলাদেশকে ৬ বছর পর্য্যবেক্ষণে রাখা হবে। পর্য্যবেক্ষণকালে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেতে গিয়ে আমাদের কী ধরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা লাগতে পারে?
সালেহ উদ্দিন : আমাদের প্রধানতম চ্যালেঞ্জ আমরা যে উন্নয়নশীলের এ জায়গায় এসেছি এটা ধরে রাখা। এটার টেকসই নিশ্চিত করা। আমাদের এ অর্জনে ৪৭ বছর লেগেছে। তারমধ্যে গণতান্ত্রিক সরকার আছে ১৯৯০ থেকে। সে হিসেবে প্রায় ২৮ বছর লেগেছে। কিন্তু এতো সময় লাগার কথা ছিলো না। তাই এখন আমাদের উন্নয়নের দিকে দ্রুত আগাতে হবে। উন্নয়নের গতি আরো বাড়াতে হবে।
আমাদের উন্নয়ন হয়েছে ঠিকই। কিন্তু মানুষের যে জনকল্যানমুখী উন্নয়ন, কোয়ালিটি অব লাইফের ক্ষেত্রে দিনদিন বৈষম্য বাড়ছে। এটা কমাতে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া কর্মসংস্থানের দিকেও আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। সবার জন্য গুণগত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের দেশে যে ভৌত অবকাঠামো-বন্দর রাস্তাঘাট গড়ে উঠেছে তাও কিন্তু উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত তা নয়। সুতরাং আমাদের অবকাঠামো উন্নয়নেও আরো গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের দেশে দ্রুত নগর উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু গ্রামীণ পর্যায়ে সেভাবে হচ্ছে না। তাই উন্নয়নটাও বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরের ক্ষেত্রে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের করণীয় ঠিক কী হতে পারে?
সালেহ উদ্দিন: দক্ষ ও সৎ ব্যাক্তিদের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে আনতে হবে। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোকে আরো দক্ষ ও জবাবদিহি করতে হবে। কারণ আমাদের যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে অনেক সময় লাগে। আমাদের প্রযুক্তিগত দিকে নজর দিতে হবে। আমাদের সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা সেভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। তবে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী বাস্তবায়ন হয় তবে উন্নয়নশীলের মাপকাঠিতে আমরা যোগ্য বলে বিবেচিত হবো।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: বিশ্বের অন্য যেসব দেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল হয়েছে, তাদের কোনো অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ কাজে লাগাতে পারে কি না ?
সালেহ উদ্দিন: বতসোয়ানা, শ্রীলঙ্কা, ভারতের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই যে, তারা অর্থনৈতিক সূচকের পাশাপাশি সামাজিক ও প্রশাসনিক উন্নয়নের সমন্বয়ে নজর দিয়েছে। যেমন বতসোয়ানা এমন একটি দেশ যারা বিশ্ব ব্যাংকসহ যেকোনো প্রতিষ্ঠানের প্রগ্রাম বাস্তবায়ন করতো। তারা প্রশাসনিক পনর্গঠনেও নজর দিয়েছে। আমাদের সরকারের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নীতিমালার পরিবর্তন হলে চলবে না। নীতিমালা ঠিক রাখতে হবে। নির্দিষ্ট নীতিমালা নিয়ে এগোতে হবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: জনসংখ্যার বোনাস যুগ (ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড) অতিবাহিত করছে দেশ। এ সুযোগ বাংলাদেশ কতটা কাজে লাগাতে পারছে বলে আপনি মনে করেন?
সালেহ উদ্দিন: এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশ জনসংখ্যার বোনাসকাল কাজে লাগাতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তেমন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিতে পারেনি। আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার হয়েছে। অনেক গবেষণাও হয়েছে। কিন্তু মানবসম্পদ দক্ষ করার জন্য কোন গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। কোন ক্ষেত্রে কী পরিমান লোক লাগবে তার কোন গবেষণা নেই। আমাদের ছেলে-মেয়েরা শিক্ষিত হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু তাদের শিক্ষাটা চাহিদা অনুযায়ী হচ্ছে না। যে ক্ষেত্রে লোক দরকার সেক্ষেত্রে হচ্ছে না। আমাদের প্রযুক্তি ও কারিগরি বিষয়ে দক্ষতা নেই। অথচ এটা দেশে খুবই সম্ভাবনাময়। আমাদের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোরও জনবল প্রশিক্ষণের কোনো গুরুত্ব নেই। আর সরকার তো এ বিষয়টি গুরুত্বের বাইরে রেখেছে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড তো চীন ও সিঙ্গাপুরও ভোগ করছে। তারা কিভাবে সেটি কাজে লাগাচ্ছে, তাদের কাছ থেকে আমরা কি শিক্ষা নিতে পারি?
সালেহ উদ্দিন: পৃথিবীর অন্য দেশ কোন কোন খাতে কি পরিমান লোক লাগবে সেটা জেনে সেভাবেই পরিকল্পনা নিচ্ছে। যেমন ভারতের হায়দ্রাবাদ অন্ধ্য প্রদেশে ছোট পরিসরে উৎপাদনমুখী উদ্যোক্তা তৈরি করতে সরকার বেশ গুরুত্ব দিয়েছে। আমাদেরও সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে উৎপাদনমুখী ব্যবসায় তরুণদের আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে। দেশের যুব সমাজ যদি বুঝতে পারে যে চাকরি-ই একমাত্র জীবিকা নয়, ব্যবসাও করলে নিজের পাশাপাশি দেশও উপকৃত হবে। তবে তারা উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে আসবে। কিন্তু এখানে সরকারকে তরুণদের জন্য উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে প্রণোদনার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
আরকে// এআর