অভিন্ন বিধিতে সরকারি কর্মচারী নিয়োগ পদোন্নতি
প্রকাশিত : ১০:১৬ এএম, ২ এপ্রিল ২০১৮ সোমবার
সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের নিয়োগ ও পদোন্নতি ভবিষ্যতে আর ভিন্ন ভিন্ন বিধিতে হবে না বলে জানা গেছে। দেশের সব সরকারি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের একই নিয়মে নিয়োগ ও পদোন্নতি দিতে বিধিমালা প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত অভিন্ন নিয়োগ ও পদোন্নতির বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। শিগগির এটি প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠকে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীদের নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে একেক প্রতিষ্ঠানের বিধিমালা একেক রকম। এতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীরা একই পদে একই মেয়াদে চাকরি করে আগে পদোন্নতি পাচ্ছেন; আবার কোনো প্রতিষ্ঠানে একই পদে থেকেই যেতে হচ্ছে অবসরে। নিয়োগের ক্ষেত্রেও রয়েছে এক ধরনের বৈষম্য। চাকরির নতুন বিধিমালা প্রণয়ন হলে একই নিয়মে সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী নিয়োগ হবে। পদোন্নতিও হবে একই নিয়মে। এতে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া পদোন্নতির সুযোগ তৈরির জন্য সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামো (অর্গানোগ্রাম) সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারি বিভিন্ন অফিসে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি পদে প্রায় পাঁচ লাখ কর্মচারী রয়েছেন।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান জানান, সরকারি চাকরিতে একই ধরনের পদে নিয়োগের যোগ্যতা অভিন্ন করা হচ্ছে। বর্তমানে একই পদের নিয়োগে আলাদা বিধিমালা থাকায় নানা প্রশাসনিক জটিলতা হচ্ছে। তাই একই ধরনের পদের জন্য অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন করছে সরকার। পদোন্নতির ক্ষেত্রে যেসব জটিলতার কথা কর্মচারীরা বলছে, সেগুলোও পর্যালোচনা করে সমাধান করা হবে।
জানা গেছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি দফতরের তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির পদে (নিম্নমান সহকারী, সাঁটলিপিকার, এমএলএসএস, ডেসপাস রাইটার, দপ্তরি ও এমএলএসএস বা অফিস সহকারী ইত্যাদি) পদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নিয়োগবিধি রয়েছে। যার একটির সঙ্গে অন্যটির মিল নেই। এতে বিভিন্ন সংস্থায় একই সময়ে একই পদে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তির চাকরি স্থায়ী ও নিয়মিত হওয়া ছাড়াও পদোন্নতিতে জটিলতা হচ্ছে।
যেমন, রাজউকে ইউডি পদে আট বছর চাকরি করলে অফিস সুপার পদে পদোন্নতি পাওয়া যায়। একই পদে চাকরি করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একজন কর্মচারীর ওপরের পদে পদোন্নতি পেতে সময় লাগে ১২ বছর। এ ধরনের একাধিক নজির রয়েছে বহু সরকারি দফতরে। এসব জটিলতা দূর করতে `মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও এর সংযুক্ত অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, দপ্তর এবং সংবিধিবদ্ধ সংস্থা ও করপোরেশনের কমন পদের নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৮` চূড়ান্ত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও সংযুক্ত অধিদপ্তরের কমন ক্যাটাগরির পদের আলাদা একাধিক নিয়োগ বিধিমালা রয়েছে। বর্তমানে এ সংক্রান্ত পাঁচটি বিধিমালা ছাড়াও সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অফিস স্মারক/পরিপত্রও রয়েছে। এসব পদের নাম ও বেতন স্কেল একই হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিয়োগ পদ্ধতি ও শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিন্নতা রয়েছে।
অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালার প্রস্তাবে বলা হয়, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কমন পদের মধ্যে রয়েছে নিম্নমান সহকারী, পেল্গইন পেপার কপিয়ার, ডুপিল্গকেটিং মেশিন অপারেটর, সাঁটলিপিকার, সাঁটমুদ্রাক্ষরিক, অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক, মুদ্রাক্ষরিক কাম অফিস সহকারী, ডেসপাস রাইডার, দপ্তরি ও এমএলএসএস। সচিবালয়ে উল্লিখিত পদের জন্য `বিশেষ নিয়োগ বিধিমালা ২০১০` অনুসরণ করা হয়। এ ছাড়া অনুসরণ করা হয় সচিবালয়ের ভেতরের `ক্যাডারবহির্ভূত গেজেটেড কর্মকর্তা ও নন-গেজেটেড কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা ২০১৪`। এক সংস্থার নিয়োগবিধির সঙ্গে অন্য সংস্থার কোনো মিল নেই। বরং বিপরীতধর্মী। এতেও জটিলতা হচ্ছে। ব্রিটিশ আমলের বেশ কিছু পদের নাম ও পদবি পরিবর্তন হওয়াতেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে জটিলতা হয়েছে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়।
মূলত এসব দপ্তর, অধিদপ্তর, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান যখন সৃষ্টি করা হয়, তখন এগুলোর সাংগঠনিক কাঠামো এভাবেই তৈরি হয়। কিন্তু এতদিন সিলেকশন গ্রেড বা টাইম স্কেলের সুযোগ থাকায় আর্থিক দিক থেকে তাদের কোনো ক্ষতি হতো না। এখন সেই সুযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সরকার সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের অর্গানোগ্রাম সংস্কার করে পদোন্নতির সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে। ফলে সরকারি তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সবার জন্যই অভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাবে।
এসএইচ/