ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

ভারত অচল আন্দোলনে নিহত ৭

প্রকাশিত : ০৯:৩১ পিএম, ২ এপ্রিল ২০১৮ সোমবার

ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের একটি রায়কে কেন্দ্র করে ‘ভারত অচল’ আন্দোলনে অন্তত ৭জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মধ্য প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ এবং রাজস্থানসহ ভারতের বেশকিছু রাজ্যে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পরেছে।

ভারতে দলিত সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অপরাধ দমনের জন্য ১৯৮৯ সালের একটি আইনে পরিবর্তন আনে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। দ্য শিডিউল কাস্টস(এসসি) এন্ড শিডিউল ট্রাইবস (এসটি) অ্যাক্ট, ১৯৮৯ এর আইনে দলীতদের বিরুদ্ধে হওয়া অপরাধকে ‘আমলযোগ্য এবং জামিন অযোগ্য’ অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হতো। কিন্তু সম্প্রতি দেশটির সর্বোচ্চ আদালত এই আইনে পরিবর্তন এনে দলীতদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধকে ‘আমল অযোগ্য এবং জামিন যোগ্য’ হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর থেকেই ভারতজুড়ে আন্দোলন শুরু হয়। আজ সোমবার এই আন্দোলন সহিংস রূপ ধারণ করে।

দলীত শ্রেণীর নেতারা মনে করছেন যে, সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ের ফলে দলীতদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন আগের থেকে অনেক বেড়ে যাবে।

দলীত সম্প্রদায় এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ডাকা ‘ভারত অচল’ আন্দোলনে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৭ জন। আনত হয়েছেন প্রায় শতাধিক ব্যক্তি। এদের মধ্যে মধ্য প্রাচ্যেই নিহত হয়েছেন ৫ আন্দোলনকারী।

রাজস্তান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরখান্ড, ঝাড়খান্ড, বিহার, উড়িষ্যা এবং উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছে আন্দোলনকারীরা। অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি স্থাপনায়। এর জবাবে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। কোথাও কোথাও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে গুলি বর্ষণ করে পুলিশ এবং দাঙ্গা দমন বাহিনী।

বিভিন্ন জায়গায় সড়ক ও রেল লাইন অবরোধ করে আন্দোলন করছেন আন্দোলনকারীরা। আর এর ফলে বেশকিছু রাজ্যের মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে সড়ক ও রেল যোগাযোগ। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে কয়েকটি ক্লাসের শিক্ষা কার্যক্রম এবং পরীক্ষা।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। মাঠে নামানো হয়েছে দাঙ্গা দমনে বিশেষায়িত বাহিনীর ৮০০ সদস্যকে। এছাড়াও মিরাটে ১৫ প্লাটুন এবং উত্তর প্রদেশের আগ্রা এবং হাপুরে ১ প্লাটুন করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।

দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সার্বিক অবস্থার ওপর নজর রাখছে। সেই সাথে রাজ্যগুলোর সাথে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। রাজ্যগুলোতে কেন্দ্রীয় ফোর্স নামানো হয়েছে”।

এদিকে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে দলীতদের আন্দোলনে সমর্থন দিচ্ছে কংগ্রেস এবং বিজেপি। তবে উদ্ভুত পরিস্থিতি এবং সহিংসতার জন্য একে অপরকে দায়ী করছে কংগ্রেস এবং বিজেপি।

এক টুইট বার্তায় কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী বলেন, “দলীতদেরকে সমাজের সবথেকে নিচু স্তরে রাখাটাই আরএসস আর বিজেপি’র রাজনৈতিক আদর্শ। যারাই এই অবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে গেছে তাদেরকে নির্যাতনের মাধ্যমে চুপ করানো হয়েছে”।

রাহুলের টুইটের জবাবে বিজেপি নেতা এবং কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবি শংকর প্রসাদ কংগ্রেসকে ‘দলীতদের হাতিয়ার করে রাজনীতি করা’ হিসেবে অভিযোগ করেছেন। দলীত নেতা এবং ভারতের অন্যতম সংবিধান প্রণেতা বিআর আম্বেদকারের প্রসঙ্গ টেনে রাহুলের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, “মোদি সরকার এবং বিজেপি’র পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, আমরা দলীত এবং আদিবাসীদের উন্নয়নে কাজ করে যেতে চাই। কিন্তু একদল মানুষ আছেন যারা দলীতদের পুঁজি করে রাজনীতি করেন”।

“আমি কংগ্রেসকে জিজ্ঞেস করতে চাই যে, কারা এই সব গোলযোগ সৃষ্টি করছে? আম্বেদকার কখন ভারত রত্ন পেলেন? আমি বলি কখন পেলেন। বিজেপি সমর্থিত ভিপি সিং এর সরকারের সময় আম্বেদকার ভারত রত্ন পেয়েছিলেন। তিনি ১৯৫৬ সালে মারা গেলেন। এরপর কংগ্রেস অনেক দিন ক্ষমতায় ছিলেন। কই, তাঁরা তো তাঁকে ভারতরত্ন দেয়নি। আর এখন কংগ্রেস আমাদেরকে প্রশ্ন করে?”

এদিকে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়ে সবাইকে শান্তি-শৃংখলা বজায় রাখার আহবান জানিয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। তিনি বলেন, “আদালতে আমরা ইতোমধ্যে রিভিউ পিটিশন জমা দিয়েছি। সকল পক্ষকে শান্তি-শৃংখলা এবং ধৈর্য্য রাখার আহবান জানাচ্ছি”।

আদালতের রায়ের সাথে সরকারও দ্বিমত পোষণ করে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবি শংকর প্রসাদ।

এসএইচএস/টিকে