ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন করতে হবে

প্রকাশিত : ১১:৫৭ পিএম, ৩ এপ্রিল ২০১৮ মঙ্গলবার

মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের উপর চালানো বর্বরোচিত গণহত্যাকে জাতিগত নিধনের ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশসহ সাতটি দেশের প্রতিনিধিরা। “রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট: টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে” একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে “ঢাকা ঘোষণা”-এ এমন মন্তব্য উঠে এসেছে।

ঢাকা ঘোষণায় বলা হয়, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক, সর্বজনস্বীকৃত এবং নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে যারা এই ঘটনার জন্য দায়ী তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে। একই সাথে রোহিঙ্গাদের পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা প্রদান করতে হবে।

মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে একশনএইড বাংলাদেশ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ আয়োজিত দু’দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী দিনে বাংলাদেশ সরকার, সাবেক ও বর্তমান কূটনৈতিক, গবেষক ও ১১টি দেশের প্রতিনিধিরা এই ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন।

এই ঘোষণার বাস্তবায়নে বাংলাদেশ, ভারত, থাইল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন এবং সিঙ্গাপুরের বিশেষজ্ঞরা সংহতি জানিয়েছেন।

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে দুই দিনের সম্মেলন শেষে “ঢাকা ঘোষণা”-তে ১৬টি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। যেখানে বলা হয়,  গ্লোবাল সামিট-২০০৫ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, জাতিংঘের চার্টার অনুসারে গণহত্যা এবং গণ-দেশান্তরের মত পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানের সুস্পষ্ট ঘোষণার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতেই হবে।

এছাড়া রোহিঙ্গা নারী, শিশু এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর নিরাপত্তা এবং অধিকার নিশ্চিতে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সদস্যদের যথাযথ কূটনৈতিক চ্যানেলসমূহ ব্যবহারের মাধ্যমে পর্যাপ্ত মানবিক এবং অন্যান্য সহায়তা প্রদানের আহবান জানানো হয় ঢাকা ঘোষণায়।

মিয়ানমারের চলমান গণহত্যা, গণসহিংসতা, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং জাতিগত নিধনের ঘটনা ব্যাপক ও গভীরভাবে তদন্ত এবং দায়ী অপরাধীদের বিচার এবং রোহিঙ্গাদের আরো ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সক্রিয়ভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে ঢাকা ঘোষণায়। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সামাজিক-সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অধিকার সমুন্নত রাখতে আইন প্রণয়নসহ সকলের জন্য নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা পুনরুদ্ধার ও রক্ষায় মিয়ানমারের দায়িত্বের উপর জোর দেওয়া হয়।

দুই দিনের এই আলোচনায়, দেশী-বিদেশী মানবাধিকার দলিল, আইন, গবেষণা ও বিভিন্ন পর্যালোনার উপর ভিত্তি করে ‘ঢাকা ঘোষণা’ আসে। প্রস্তাবনার পাশাপাশি “ঢাকা ঘোষণা”-এর শুরুতে প্রাসঙ্গিক কিছু দাবিও তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয় মানবাধিকার সার্বজনীন।

আয়োজকদের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ ‘ঢাকা ঘোষণা’ উপস্থাপন করেন।

‘ঢাকা ঘোষণা’ উপস্থাপনের পর এর উপর বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। তিনি বলেন, “মিয়ানমার আন্তর্জাতিক নীতি অনুসারে কাজ করছে না বলেই মূলত: সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে এই সমস্যা আমাদের কারণে তৈরি হয়নি। তাই সমাধানও শুধু আমরা করতে পারবো না। যেখান থেকে সমস্যার উৎপত্তি হয়েছে সেখান থেকেই সমাধান সম্ভব হবে। আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এটা প্রমাণ করতে যে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের উপর নৃশংস অত্যাচার চালিয়েছে এবং তাদের দেশ ত্যাগে বাধ্য করেছে। মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের অধিকার। তবে আন্তর্জাতিক চাপ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া কোনভাবেই মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে না। কারণ মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ নয়।”

ঢাকা ঘোষণাপত্রটি বাংলাদেশ সরকার, মিয়ানমার সরকার, জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন দেশের সরকার, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মিশনসহ গুরুত্বপূর্ণ সব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে পাঠানো হবে। যাতে দ্রুত রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হয়।

রোহিঙ্গা সংকটে একটি দূরদর্শী ও টেকসই সমাধানের জন্য একশনএইড বাংলাদেশ,  ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। যার উদ্দেশ্য, পরবর্তী সময়ে সহিংসতা প্রতিরোধ, শান্তিপূর্ণ অবস্থার পুনর্বহাল এবং রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের উপায় বের করা।

কৌশলগত আলোচনার মাধ্যমে মানবিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, আইনগত, অর্থনৈতিক, জেন্ডার, সুরক্ষা, অধিকার এবং নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গা সংকটে মানবিক সহায়তা, সুরক্ষা, অর্থনৈতিক ঝুঁকি, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইন, নিরাপত্তা এবং ভূ-রাজনৈতিক মাত্রা নিয়ে আলোচনা করা হয়। বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা এসব বিষয়ে বিশ্লেষণপত্র ও গবেষণা তুলে ধরেন।

কেআই/টিকে