অন্ত:সত্ত্বার ডায়াবেটিস লক্ষণ ও চিকিৎসা
প্রকাশিত : ১২:৩৫ পিএম, ৪ এপ্রিল ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ১২:৩৬ পিএম, ৭ এপ্রিল ২০১৮ শনিবার
ডা. লতিফা আক্তার
সাধারণত ডায়াবেটিস বলতে আমরা বুঝি, রক্তে শর্করার আধিক্য। এ রোগ হলে জীবনযাপনে পরিবর্তন আনতে হয়। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীকে সন্তানধারণের পুরো সময়জুড়েই বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে।
যারা আগে থেকেই ডায়াবেটিস রোগী অন্ত:স্বত্তা অবস্থায় তাদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে। গর্ভাবস্থা থেকে সন্তান প্রসব পর্যন্ত একজন ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে থাকলে ভালো হয়। এমনটাই মনে করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস অ্যান্ড গাইনি বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার ডা. লতিফা আক্তার।
সম্প্রতি একুশে টিভি অনলাইনকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে তিনি অন্ত:স্বত্ত্বাদের ডায়াবেটিস ঝুঁকি, লক্ষণ ও চিকিৎসা নিয়ে এসব কথা বলেন। সাক্ষাতকার নিয়েছেন একুশে টিভি অনলাইনের প্রতিবেদক তবিবুর রহমান। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব আজ প্রকাশিত হলো-
একুশে টিভি অনলাইন: গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস বলতে আমরা কী বুঝি?
ডা.লতিফা আক্তার : ডায়াবেটিস মানে রক্তের শর্করার আধিক্য। ডায়াবেটিস হলে জীবনযাপনে পরিবর্তন আনতে হবে। যেকোনো সময় ডায়াবেটিস রোগ হতে পারে। গর্ভধারণের আগে ডায়াবেটিস ছিলো না তাদেরও গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হতে পারে। মুলত সন্তান ধারণ অবস্থায় ডায়াবেটিস হলে অবশ্যই আগে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে জানতে হবে। গর্ভবস্থায় যদি সন্তানের অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি পায় তবে ব্লাড সুগার পরীক্ষা করাতে হবে। যদি ব্লাডে সুগারের মাত্রা কম থাকে তাহলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কম থাকবে।
একুশে টিবি অনলাইন : অন্ত:স্বত্ত্বার ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো কি?
ডা. লতিফা আক্তার : ডায়াবেটিস লক্ষণ বুঝতে আমরা প্রথমে আগের ইতিহাসগুলো দেখে থাকি। যদি রোগীর পিতা-মাতার ডায়াবেটিস থাকে তাহলে সন্তানের হতে পারে। গর্ভাবস্থায় দুইবার চেকআপ করলেই বোঝা যায় ডায়াবেটিস আক্রান্ত হয়েছে কি না। থাকলে তাঁদের সন্তান গ্রহণের সময়ও সতর্ক থাকা খুবই জরুরি। এসব ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে এবং প্রসব অবশ্যই হাসপাতালে করাতে হবে।
একুশে টিভি অনলাইন: গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হওয়ার কী কী ধরণ রয়েছে?
ডা. লতিফা আক্তার: সাধারণত গর্ভাবস্থায় তিন ধরনের ডায়াবেটিস হয়। এক. রোগীর হয়তো আগে থেকেই ডায়াবেটিস আছে এবং সে ইনসুলিন নির্ভর। অর্থাৎ তাঁকে ইনসুলিন দিয়েই চিকিৎসা করতে হয়। তাঁর শরীরের পেনক্রিয়েজ হয়তো ইনসুলিন উৎপাদন করে না। পেনক্রিয়েজে উৎপাদিত ইনসুলিন রক্তের শর্করা মেটাবলিজমে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
দুই. এসব রোগী সাধারণত মোটা হয়। এদের হয়তো পেনক্রিয়েজের মাধ্যমে ইনসুলিন তৈরি হয়। কিন্তু রক্তে ইনসুলিনের চাহিদা মেটায় না। অর্থাৎ তাঁদের রক্তে শর্করার আধিক্য থাকে।
তিন. সাধারণত নারীর ডায়াবেটিস থাকে না। কিন্তু গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হয়। তাকে বলা হয় জেসটেশনাল ডায়াবেটিস। এটি সন্তান ডেলিভারি হলে আর থাকে না। তবে পরবর্তী গর্ভধারণের সময় ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া যদি সে খাবার নিয়ন্ত্রণ না করে, জীবন-যাপন পরিবর্তন না করে তাহলে ভবিষ্যতে তাঁর ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
একুশে টিভি অনলাইন: গর্ভাবস্থায় একজন নারী কীভাবে বুঝবেন তিনি ডায়াবেটিস আক্রান্ত কি না ?
ডা.লতিফা আক্তার: আমরা আগে তার ইতিহাস দেখবো। তার আগে ডায়াবেটিস আছে কিনা। ডায়াবেটিস আক্রান্ত হলে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন- গর্ভবস্থায় বাচ্চার অর্জন বেড়ে যায়। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বের করে আসে। আক্রান্ত ব্যক্তি অস্বাভাবিক হারে ক্ষুধা বেড়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা রোগীর ইতিহাস জানেন। এছাড়া আগে শিশু জন্মানোর সময় ডায়াবেটিস ছিল কি না সেটি জানা হয়। আগের শিশু চার বা সাড়ে চার কেজির ওপরে ছিল কিনা, আগে যদি স্টিলবার্থ (মৃত শিশু প্রসব) হয়, অথবা তাঁর শরীরের সূচক ত্রিশের ওপরে আছে কি না—এসব তথ্য জানা হয়। এসব ক্ষেত্রে ওজিটিটি পরীক্ষা করানো হয়। শিশু গর্ভে আসার প্রায় ২০ সপ্তাহের মধ্যে এটি করানো হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে পুনরায় করা লাগে। ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যে এই পরীক্ষা করা হয়।
একুশে টিভি অনলাইন : মূল্যবান স্বাস্থ্য পরামর্শ দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ডা. লতিফা আক্তার : আপনাকেও ধন্যবাদ। একুশে টিভি পরিবারের প্রতি শুভেচ্ছা।
এ সংক্রান্ত আরও খবর