ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

বৈশাখে টালিউডে চরম লড়াই

প্রকাশিত : ০১:৩২ পিএম, ৪ এপ্রিল ২০১৮ বুধবার

বিভিন্ন দিবস ও উৎসব মানেই সব যান্ত্রিকতা ছেড়ে একটু বিনোদন নেওয়া। ছুটির দিনগুলোতে প্রিয়জনকে নিয়ে নতুন সিনেমা দেখা। নির্মাতারাও এখন সেই চিন্তা মাথায় রেখে নির্মাণ করছেন। সেই সঙ্গে মুক্তির দিনক্ষণও ঠিক করেন তারা। সামনে নববর্ষ। বেশ কিছু নতুন সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। বিশেষ করে টালিউডে একই সময় বেশ কিছু নতুন ও ভালো সিনেমা মুক্তি পাবে। অনেকটা প্রতিযোগিতা ও লড়াই চলবে এবারের বৈশাখে।

ইতিমধ্যে সিনেমা মুক্তি নিয়ে লেগে গেছে জোর লড়াই। গত বছর পুজাতেও মুক্তি পেয়েছিল ছয়টি সিনেমা। পুজার সঙ্গে এবার যুক্ত হচ্ছে বাংলা নববর্ষ। উৎসবর মৌসুমে সিনেমা মুক্তি দিতে বদ্ধপরিকর প্রযোজক-পরিচালকরা। এত দিন বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম দিনটিতে দুটি বা তিনটি সিনেমা মুক্তি পেলেও এবার সংখ্যাটা অনেক বেশি। তবে এবছর একই সময়ে এতোগুলো সিনেমা মুক্তি নিয়ে অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজকদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতা।

এর আগে একই দিনে এক জন তারকার একাধিক সিনেমাও মুক্তি পেয়েছে। তবে এবার নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি হচ্ছে। পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের ‘কবীর’ ছাড়াও ‘শঙ্কর মুদি’ও মুক্তি পেতে পারে একই দিনে। যদিও প্রযোজক কৌস্তুভ রায়ের জেলযাত্রার কারণে ‘শঙ্কর মুদি’র মুক্তি নিয়ে কিছুটা সংশয় দেখা দিয়েছে। আসছে হরনাথ চক্রবর্তীর ‘কাঁটায় কাঁটা’, অঞ্জন দত্তর ‘আমি আসবো ফিরে’। জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের ‘চালবাজ’।

এ বিষয়ে ‘কবীর’-এর প্রযোজক ও নায়ক দেব জানালেন, ‘আটটা সিনেমার সঙ্গে লড়েছি, আর ভয় নেই। গত বছর পুজার সময়েই জানিয়েছিলাম, ‘কবীর’ মুক্তি পাবে নববর্ষে। পরে শুনলাম, ওই দিন মুক্তি পাচ্ছে এত সিনেমা। এক ছাদের তলায় ইন্ডাস্ট্রির আসতে সময় লাগবে। তবে আমরা চেষ্টা করছি। তবে বুম্বাদার ‘দৃষ্টিকোণ’ তো পিছিয়ে গিয়েছে।’

পরিচালক অনিকেতের দু’টি সিনেমা একই দিনে মুক্তি পাওয়ার কথা উঠলেও একে সৌভাগ্য হিসেবে দেখতে নারাজ তিনি।

তার মতে- ‘দুটো সিনেমা আলাদা দিনে মুক্তি পেলে সেই উত্তেজনার শরিক থাকতে পারতাম।’

তবে নিজের সিনেমার কনটেন্ট নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী অনিকেত। ‘মূল বিষয় হিসেবে ‘কবীর’-এ উঠে এসেছে সন্ত্রাসবাদ। অন্য দিকে ‘শঙ্কর মুদি’ আদ্যন্ত রাজনৈতিক সিনেমা।’ তাই একে অপরের জনপ্রিয়তায় ভাগ বসবে না বলেই মনে করেন পরিচালক।

নববর্ষে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘দৃষ্টিকোণ’-এর মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও সিনেমার প্রযোজক নিসপাল সিংহ পিছিয়ে দিয়েছেন সিনেমার মুক্তির তারিখ। তিনি বলেন, ‘পুজোয় কয়েকটা দিন ছুটি থাকে বলে, পিছিয়ে যেতে চায় না কেউই। কিন্তু এক দিনের উৎসবে এটুকু মানিয়ে নেওয়াই যায়।’ কৌশিকও সাধুবাদ জানাচ্ছেন এই সিদ্ধান্তকে। তবে এত সিনেমামুক্তির প্রসঙ্গে বললেন, ‘নম্বরে কিছু এসে যায় না। দেখতে হবে ক’টা সিনেমা তাৎপর্যপূর্ণ।’ পরিচালক হিসেবে ভিড় এড়ালেও ‘শঙ্কর মুদি’ মুক্তি পেলে অভিনেতা কৌশিকও সামিল হবেন প্রতিযোগিতায়।

এদিকে অনেক দিন ধরেই বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম দিনে নিজেদের সিনেমা নিয়ে হাজির থাকে এসভিএফ। ব্যতিক্রম হচ্ছে না এ বছরও। অঞ্জন দত্তর ‘আমি আসবো ফিরে’ও মুক্তি পাবে নববর্ষের প্রাক্কালেই। সিনেমার অন্যতম প্রযোজক মহেন্দ্র সোনি জানালেন, ‘এবারও আমরা ভালো সিনেমা নিয়ে আসছি। আশা করি দর্শকের ভালই লাগবে।’

অ়ঞ্জনও বলছেন, ‘আমি যে ধরনের সিনেমা তৈরি করতে এসেছিলাম, সেটাই আবার তুলে ধরেছি এই সিনেমাতে। ‘বং কানেকশন’, ‘ম্যাডলি বাঙালি’র মতো এটাও মিউজিক্যাল।’

বাংলা নতুন বছরে পুরোপুরি বাণিজ্যিক সিনেমা হিসেবে থাকছে শাকিব খানের ‘চালবাজ’। সিনেমার প্রযোজক অশোক ধানুকা বলেছেন, ‘এখানে দু’ধরনের সিনেমা হয়। একটা মাল্টিপ্লেক্সের, অন্যটা সিঙ্গল স্ক্রিনের। ‘চালবাজ’ বাদে সব সিনেমাই মাল্টিপ্লেক্স মুভি। সিঙ্গল স্ক্রিনগুলোরও তো নতুন সিনেমার প্রয়োজন। সেই চাহিদা থেকেই ‘চালবাজ’ নিয়ে আসছি।’

সাহিত্যপ্রেমী বাঙালির জন্য এই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে যোগ দিচ্ছেন নবাগত প্রযোজক ইন্দ্রজিৎ রায়ও। তাঁর প্রযোজনায় ‘কাঁটায় কাঁটা’ মুক্তি পাবে নববর্ষে। তিনি জানালেন, ‘বাকিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নিজেদের মান যাচাই করতেই এই সিদ্ধান্ত।’

আর পরিচালক হরনাথের বক্তব্য, ‘নারায়ণ সান্যালের কাহিনী অবলম্বনে ‘কাঁটায় কাঁটা’ সাহিত্যপ্রেমীদের মন জয় করবেই। সঙ্গে রঞ্জিতদাকেও (মল্লিক) দেখা যাবে নতুন ভাবে।’

এ অবস্থায় পর্দার লড়াইয়ে শেষ হাসিটা আসলে কে হাসবেন তা নিয়ে ভাবনায় টালিউড বোদ্ধারা। উত্তেজনাটা চরম। এখন দর্শকই বলবে কে সফল হবেন। কারণ এতোগুলো ভালো সিনেমার মধ্যে দর্শক কোনটি বেছে নিবেন সেটাই দেখার বিষয়।

সূত্র : আনন্দবাজার

এসএ/