পাবনায় দেশের প্রথম সমকামীর বিয়ে
প্রকাশিত : ০৯:০২ পিএম, ৪ এপ্রিল ২০১৮ বুধবার
পাবনায় এক যুবকের সাথে এক কিশোরের বিয়ে হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ছেলের সাথে ছেলের বিয়ে হওয়ার ঘটনায় এটিকে দেশের প্রথমবারের মত হওয়া ‘সমকামী’ বিয়ে হিসেবেই মনে করা হচ্ছে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
পাবনার চাটমোহর থানায় সম্প্রতি এই সমকামী বিয়ের ঘটনা ঘটে। ২৩ বছর বয়সী এক হিন্দু যুবকের সাথে ১৩ বছর বয়সী এক মুসলিম কিশোরের বিয়ে দেওয়া হয়।
তবে কিশোরের বাবার দাবি তার ছেলেকে আটকে রেখে জোর করে এই বিয়ে দিয়েছেন যুবকের পরিবার।
যুবক এবং কিশোরের এই বিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহসান হাবিবি। তবে বিষয়টি সমকামিতা নয় বলে দাবি করেন তিনি।
কিশোরের পরিবার এবং স্থানীয়দের বরাত দিয়ে তিনি জানান, “কিছুদিন আগে যুবকটির বাবা অসুস্থ হলে তার মা সুস্থতা কামনা করে পূজা দিতে চেয়েছিল। পরে তাঁর স্বামী সুস্থ হলেও তিনি স্বপ্নে দেখেন যে একটি মুসলিম ছেলের সাথে তার ছেলের বিয়ে দিলে পরিবারের জন্য ভালো হবে। যেহেতু ছেলে-ছেলে বিয়ে হয়েছে সেজন্য অনেকে এটাকে সমকামিতা হিসেবে ধরে নিচ্ছে।"
যুবক ও কিশোর দুই ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হলেও হিন্দু রীতিতে তাদের বিয়ে হয়েছেন বলেও জানান আহসান হাবীব। আর কিশোর বাবার লিখিত অভিযোগ থানায় এজাহার হিসেবে গৃহিত হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
এজাহার সূত্রে পুলিশ জানায়, গত ২৮ তারিখে ১৩ বছর বয়সী ছেলেটি মাদ্রাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়।
রাস্তায় বৃষ্টি এলে সে একটি দর্জির দোকানে অপেক্ষা করতে থাকে। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় দর্জি ওই ছেলেটিকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে যায় এবং কয়েকদিনের জন্য তাকে থাকতে দেয়।
এক পর্যায়ে দর্জির ২৩ বছর বয়সী ছেলের সাথে ১৩ বছর বয়সী ছেলেটিকে ভুল বুঝিয়ে বিয়ে দেয়া হয় বলে পুলিশ উল্লেখ করেছে।
তবে পুলিশ যাই বলুক, ঘটনাটিকে ‘সমকামিতা’ হিসেবেই দেখছেন স্থানীয় লোকজন। থানার বিলচলন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলীর বক্তব্যে তেমনটাই জানা যায়।
বালকটিকে পুলিশ `ভিকটিম` হিসেবে উল্লেখ করলেও ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলীর দাবি, এ কথিত বিয়ের বিষয়ে উভয় পরিবারই আগে থেকেই অবগত ছিল। কয়েকদিন আগে গোপনে এ বিয়ে সংগঠিত হয়েছে।
তিনি বলেন, "একজনকে পুরোহিত সাজিয়ে হিন্দু রীতিতে গোপনে এ বিয়ে করানো হয়। কয়েকদিন আগে এ বিয়ে হয়েছিল। পরে এ ঘটনা এলাকাবাসী জানতে পারে। এরপর আমি বিষয়টি ইউএনও স্যারকে জানিয়েছি।"
চাটমোহর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বা ইউএনও সরকার অসীম কুমার বিষয়টিকে `সমকামী বিয়ে` হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
কুমার বলেন, "তদন্তে যে বিষয়গুলো চলে আসছে সেটা হলো আসলেই গে ম্যারেজের (সমকামী বিয়ে) মতো ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে যে তারা সমকামী। এ মুহূর্তে ঐভাবে প্রমাণ করা সম্ভব নয়। তবে সমকামী হিসেবে মোটামুটি প্রতীয়মান হয়েছে।"
ইউএনও এবং পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনা সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে খোঁজ-খবর নেওয়া হয়েছে, তবে বিস্তারিত একটি তদন্তও চালানো হচ্ছে।
বাংলাদেশের আইনে পুরুষদের ক্ষেত্রে বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ২১ বছর। এছাড়া, দেশটিতে সমকামিতাও আইনত নিষিদ্ধ।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এসএইচএস/টিকে