ইরফানের চোখ কথা বলে, ওর চোখে ম্যাজিক আছে : দিব্যা
প্রকাশিত : ০৪:২৮ পিএম, ৫ এপ্রিল ২০১৮ বৃহস্পতিবার
মুক্তি পাচ্ছে ‘ব্ল্যাকমেল’ সিনেমা। সিনেমাতে অভিনয় করেছেন দিব্যা দত্ত। এদিকে সিনেমা মুক্তির পূর্বে প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত অভিনেত্রী। সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি গণমাধ্যমেও চলছে প্রচারণা। সম্প্রতি দিব্যা এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কলকাতার গণমাধ্যমে। ইটিভির পাঠকদের জন্য সেই সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন : ‘বাবুমশাই বন্দুকবাজ’র মতো অ্যাকশন ক্রাইম ড্রামায় অভিনয়ের পরই, ‘ব্ল্যাকমেল’র মতো ডার্ক কমেডি সিনেমা বেছেনিলেন কেন?
উত্তর : (হাসি) তাতে কী হয়েছে? এই সিনেমার গল্পটাও কিন্তু বেশ...!
প্রশ্ন : ‘ব্ল্যাকমেল’এ আপনার চরিত্রটা কিন্তু বেশ ‘ইন্টারেস্টিং’!
উত্তর : শুধু আমার চরিত্রটাই কেন, সিনেমার গল্পটাই দারুণ ইন্টারেস্টিং। সেই কারণেই তো কাজটা করতে রাজি হয়েছি! সিনেমার ট্রেলারটা নিশ্চয়ই দেখেছেন। স্বামী-স্ত্রী’র (ইরফান খান এবং কীর্তি কুলহারি) সম্পর্কের স্পার্কটা ফুরিয়ে যাওয়ার পর, স্ত্রী পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তখন স্বামী ঠিক করেন, স্ত্রীয়ের প্রেমিককে একটা শিক্ষা দেবেন! তারপর কী কী হয়, এই নিয়েই সিনেমার গল্প। স্বামী এবং স্ত্রী’র একে অপরকে ক্রমাগত মিথ্যা বলে যাওয়া— আশা করি দৃশ্যগুলো দর্শকের ভাল লাগবে। ডার্ক হিউমার জঁরের গল্প এটা!
প্রশ্ন : এই নিয়ে তো বেশ কয়েকটা সিনেমাতে আপনি ইরফান খানের সঙ্গে অভিনয় করলেন?
উত্তর : হ্যাঁ, এর আগে তিনটে সিনেমা করেছি ইরফানের সঙ্গে। তবে ‘ব্ল্যাকমেল’এ আমার সঙ্গে ওর খুব বেশি দৃশ্য নেই। ইন্ডাস্ট্রিতে ওর মতো দক্ষ অভিনেতা কমই রয়েছে। ইরফান আমারও খুব প্রিয় একজন অভিনেতা। ওর চোখ কথা বলে জানেন! অ্যান্ড ইট’স জাস্ট লাইক ম্যাজিক। আমি দিনকয়েক আগেই ‘ব্ল্যাকমেল’এর বিশেষ স্ক্রিনিংয়ে গিয়েছিলাম। সত্যি, অসামান্য অভিনয় করেছে ইরফান।
প্রশ্ন : উনি তো চিকিৎসার জন্য লন্ডনে। কেমন আছেন এখন? তার সঙ্গে আপনার কথা হয়েছে?
উত্তর : আমি সত্যিই জানি না, ইরফান এখন কেমন আছে! আমি শুধু প্রার্থনা করতে চাই, যত দ্রুত সম্ভব ইরফান সুস্থ হয়ে উঠুক এবং ইন্ডাস্ট্রিতে ফিরে আসুক।
প্রশ্ন : যে চরিত্রই আপনাকে দেওয়া হোক না কেন, এত ভালো অভিনয় করেন কীভাবে বলুন তো?
উত্তর : (হেসে) এই প্রশ্নটা আমাকে অনেক সাংবাদিকই করেন। দেখুন, প্রথমে চিত্রনাট্য পাওয়ার পর আমি খুব মন দিয়ে সেটা পড়ি। তারপর চরিত্রটার সম্পর্কে নিজের মনে একটা ভাবনা তৈরি করে নেই এবং শ্যুটিংয়ে সেটাই পারফর্ম করি। আমাকে যে চরিত্র দেওয়া হয়, বাস্তব জীবনে সেই চরিত্রগুলো যেভাবে চলাফেরা করে, হাসে কিংবা কথা বলে— সেভাবেই অভিনয়টা করার চেষ্টা করি। তার মানে কিন্তু এটা ধরে নেবেন না, যে আমি মেথড অ্যাক্টিংয়ের কথা বলছি।
প্রশ্ন : আপনার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা যে অসাধারণ, সেটা স্বীকার করলেন তাহলে?
উত্তর : হ্যাঁ, ওই ব্যাপারটা আমার মধ্যে রয়েছে। আমার তো মনে হয়, অবজারভেশন পাওয়ার ব্যাপারটা কম-বেশি সব অভিনেতার মধ্যেই রয়েছে। ধরুন, আপনি কোনও মানুষকে অবজার্ভ করলেন। আপনার পর্যবেক্ষণ সেই মুহূর্তে কোনও কাজে ব্যবহার করতে পারলেন কি না, সেটা ম্যাটার করে না। কাজ করতে করতে দেখবেন, কোনও না কোনও চরিত্রে আপনার সেই পর্যবেক্ষণটা কাজে লেগেই গিয়েছে! যত বেশি অবজার্ভ করবেন, ধীরে ধীরে তত বড় মাপের অভিনেতা হয়ে উঠতে পারবেন। আমি আমার কথাই বলতে পারি— নতুন কারও সঙ্গে আলাপ হলে, আমি সেই মানুষটার বডি-ল্যাঙ্গোয়েজ লক্ষ্য করার চেষ্টা করি। ব্যাপারটা খানিকটা অভ্যাসেও পরিণত হয়ে গিয়েছে।
প্রশ্ন : খুব ছোট বয়সে আপনার বাবা মারা যান। মায়ের কাছেই আপনার এবং আপনার ভাইয়ের বড় হয়ে ওঠা। মায়ের সঙ্গে আপনার ‘বন্ডিং’ নিয়ে আপনি তো একটা বইও লিখেছেন!
উত্তর : হ্যাঁ, ‘মি অ্যান্ড মা’! মা কীভাবে একা হাতে আমাকে আর ভাইকে বড় করে তুলেছে, সেটা নিয়েই লেখা বইটা। মা আমার জীবনে কতটা জায়গা জুড়ে রয়েছে, সেটাই লিখেছি বইতে। মা না থাকলে, হয়তো আজ আমি এই জায়গায় পৌঁছতেও পারতাম না। অনেকেই মনে করেন, সিঙ্গল পেরেন্ট হওয়াটা বোধহয় খুব সহজ! বাট ফর মি, শি ওয়াজ আ সিঙ্গল পেরেন্ট অ্যান্ড আ ওয়ার্কিং উওম্যান অ্যাজ ওয়েল! আমাকে আর ভাইকে বাবার অনুপস্থিতি কোনওদিন বুঝতেই দেয়নি মা। পেশাগত নানা সমস্যা, পঞ্জাবের দাঙ্গা— কোনও কিছুর আঁচ মা আমাদের কাছ অবধি এসে পৌঁছতে দেয়নি। যাই হোক না কেন, মায়ের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি লেগেই থাকত!
প্রশ্ন : পঞ্জাব ইনসারজেন্সির সময়টাও তো আপনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন!
উত্তর : শুধু ইনসারজেন্সি কেন? জীবনের অনেক খারাপ অধ্যায়ই আমি সামনে থেকে দেখেছি। আর সেই ঘটনাগুলো আমাকে জীবন সম্পর্কে আরও শিক্ষিত করে তুলেছে। আপনি জানতেও পারবেন না, কিন্তু একটা সময় দেখবেন জীবন সম্পর্কে আপনি অনেক কিছু শিখে গিয়েছেন। মজাটা এখানেই!
প্রশ্ন : অল্প বয়সে বাবাকে হারানো, বিবাহ বিচ্ছেদ, পেশাগত নানা অবসাদ— নিজেকে সামলান কীভাবে?
উত্তর : আই লাইক টু অ্যাবজর্ব দ্য ডার্ক পিরিয়ড! আমি প্রথমে খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে পথ চলি। খারাপ সময়ের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেই। তারপর যত দ্রুত সম্ভব, সেখানে থেকে নিজেকে বার করে আনি। আমি এই রকমই! আর এই ব্যাপারগুলোই মানুষ হিসেবে আমাকে আরও পরিণত করে তোলে এবং সেখান থেকে মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের প্রতি আস্থা জন্মায়।
প্রশ্ন : ‘খারাপ সময়ের সঙ্গে মানিয়ে নিই’— এই ব্যাপারটা একটু বিশদে বলুন না!
উত্তর : পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে তো নিতেই হবে, কারণ এই জীবনটা আপনারই! প্রিয়জনেরা এগিয়ে এসে সহানুভূতি দেখাতেই পারেন, কিন্তু খারাপ সময়টা আপনাকেই পার হবে। কোনও মানুষের প্রতি বা কোনও বিষয়ের প্রতি আপনার যে অনুভূতি রয়েছে, সেটা তো এক মুহূর্তে কমিয়ে ফেলা সম্ভব নয়! তাই না? আমার মনে হয়, পালিয়ে না গিয়ে, পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়ানোটাই বুদ্ধিমানের কাজ!
প্রশ্ন : কোনও প্রজেক্ট শুরুর আগে কোন কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখেন?
উত্তর : চরিত্র নির্বাচনের আগে আমি খুব বেশি ভাবি না। চিত্রনাট্য শোনার পর আমার ভেতর থেকে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’— আগে যেটা বেরিয়ে আসে, সেটাই আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আমি জানি, সেই মুহূর্তে যদি আমার ভেতর থেকে ‘হ্যাঁ’ বেরিয়ে আসে, তাহলে পরদা কাঁপিয়ে অভিনয় করব! কোনও চরিত্রে অভিনয় করে আমি নিজে উপভোগ করছি কি না, সেটাই আসল। আমি যদি উপভোগ করি, তাহলে দর্শকও আমার কাজ দেখে আনন্দ পাবে।
প্রশ্ন : বলিউডে আপনার কোনও ‘গডফাদার’ ছিল না। তা-ও অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। পথটা কি এতটাই সহজ ছিল?
উত্তর : একেবারেই না! ইন্ডাস্ট্রিতে আমি যেটুকু প্রতিষ্ঠা পেয়েছি, সেটা আমাকে কেউ উপহার হিসেবে তুলে দেয়নি। অর্জন করতে হয়েছে! তবে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি, যে পরিমাণ নতুন ঘরানার চরিত্রে আমি অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছি, খুব কম অভিনেত্রীই সেটা পান। সকলে নেপোটিজম নিয়ে এত মাতামাতি কেন করেন, সেটা আমি বুঝতে পারি না। নেপোটিজম একটা লেভেল অবধি আপনাকে সাপোর্ট করবে মাত্র। তার পরের রাস্তাটা কিন্তু আপনাকেই হাঁটতে হবে। আমাকে পরিচালকদের প্রয়োজন ছিল, তাই আমার কেরিয়ার সামনে এগিয়েছে।
প্রশ্ন : ‘ফ্যানি খান’ এর কাজ কতদূর?
উত্তর : কাজ প্রায় শেষের পথে। আমার আর কয়েকদিনের শ্যুটিং বাকি রয়েছে।
প্রশ্ন : সেখানে আপনার চরিত্রটা কী রকম?
উত্তর : আই অ্যাম প্লেয়িং আ স্ট্রং ক্যারেক্টার দেয়ার। গল্পে আমাকে আমার স্বামীর সাপোর্ট সিস্টেম হিসেবে দেখানো হয়েছে।
সূত্র : এবেলা
এসএ/