মালয়েশিয়ায় স্টুডেন্ট ভিসায় চটকদারী বিজ্ঞাপনে প্রতারণা
শেখ আরিফুজ্জামান, মালয়েশিয়া থেকে
প্রকাশিত : ১২:০৮ এএম, ৭ এপ্রিল ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ১১:০২ এএম, ৮ এপ্রিল ২০১৮ রবিবার
বছরের অধিকাংশ সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও স্থানে বিদেশে উচ্চ শিক্ষা ও ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে পড়তে যাওয়ার নানা রকম চমকপ্রদ ও লোভনীয় বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে৷ নামে বেনামে বিভিন্ন স্টুডেন্ট কনসালটেন্সি ফার্ম ও প্রতিষ্ঠান এসব বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে৷ তাতে প্রলোভিত হয়ে প্রতিনিয়ত ওসব প্রতিষ্ঠানে ভিড় জমান কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে-মেয়ে ও তাদের অভিভাবক৷ মালয়েশিয়ায় পড়াশোনার পাশাপাশি কাজের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে প্রচার করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করছে বিভিন্ন কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান। আর এই প্রতারণার মাধ্যমে কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।
সরেজমিন মালয়েশিয়ায় শিক্ষা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এখানে কোন পার্ট টাইম জবের সুযোগ নেই। তারপরও নিজেদের খরচ মেটানোর জন্য সামান্য বেতনে পার্ট টাইম হিসেবে শিক্ষার্থীরা অবৈধভাবে বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্ট, বার, শপিংমলে কাজ করে থাকে। কিন্তু সেক্ষেত্রে অনেক সময় পুলিশি অভিযানের মুখে পড়তে হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে। আর এক্ষেত্রে থেকে যায় বড় ধরণের বিপদের আশঙ্কা।
তবে এজেন্টরা শিক্ষার্থী আনার সময় বলেন, ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা কাজ করেই মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করা যায়। এ প্রলোভন সম্পূর্ণ মিথ্যা। এখানে সব ক্ষেত্রেই স্থায়ী কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয় না।
ইসলামি ইউনির্ভাসিটির ছাত্র শফিকুর রহমান বলেন, দেশে দালালের খপ্পরে পড়ে মালয়েশিয়ায় এসে অনেকেই বিপদে পড়ে। কাজ দেওয়ার কথা বলে অনেককে পার্টটাইম জব হিসেবে চাকরি দেওয়া হয় আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্টে। কিন্তু সেখানে ১২ ঘণ্টার নিচে চাকরি নেই। অনেক সময় মালিক চাইলে আরো বেশি সময়ও দিতে হয়। আর এ ধরনের চাকরি করলে পড়াশোনা করা যায় না। তার ফল স্বরুপ বছর শেষে ক্লাসে এটেনডেন্স থাকে না এবং ভিসা পেতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। ১২ ঘণ্টা কাজের জন্য দেওয়া হয় ৩৫ থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ রিঙ্গিত। যা মাসিক খরচের একটা অংশ বাদ দিলে সামান্য কিছু টাকা থেকে যায়। যা বাংলাদেশি টাকায় অতি সামান্য।
ইউনিভার্সিটি মালায়ার ছাত্র এবাদুল্লাহ বলেন, এখানে প্রফেশনাল কোর্স করতে ২ থেকে ৩ বছর সময় লাগে। কোর্স ফি পড়বে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার মতো। আর থাকা-খাওয়া মিলিয়ে মাসে ৮০০ থেকে ১২০০ রিঙ্গিত, মানে ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা চলে যায়। তবে এ খরচটা পরিবার থেকেই নিতে হবে, যদি পড়াশোনা করতে চায় শিক্ষার্থী। অথচ বাংলাদেশের এজেন্সিগুলো সেখানে দেখাচ্ছে পার্টটাইম জবের প্রলোভন। অনেক সময় এসব প্রলোভন দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের মালয়েশিয়াতে দালালের কাছে পাঠানো হয়। যারা পাসপোর্ট আটকে রেখে বা গুম করে শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের থেকে আদায় করে কয়েক লাখ টাকা।
দেশের জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতে অনেক এজেন্সি মালয়েশিয়ায় পড়াশোনার বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়েছে, সেখানে পার্ট টাইম জবের মাধ্যমে মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় করার ব্যবস্থা করে দেবে। যা পুরোটাই প্রতারণা। মূলত শিক্ষার্থদের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের অর্থ হাতিয়ে নেওয়াই এসব এজেন্সির উদ্দেশ্য। মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এ ধরনের প্রতারণার ফাঁদে না পড়ার জন্য এবং দালালদের কাছ থেকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
টিকে