ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

‘সুপার শপের উন্নতিতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে’   

প্রকাশিত : ০৯:১৫ পিএম, ৭ এপ্রিল ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ১২:৫৫ পিএম, ১৫ এপ্রিল ২০১৮ রবিবার

বর্তমান সময়ে সুপার শপ বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে। এ খাতকে কিভাবে আরও জনপ্রিয় খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায় সেদিকেই বেশি নজর দিচ্ছেন সুপার শপের সংশ্লিষ্ট মালিকরা। এ খাত থেকে সরকারও ভালো কর পাচ্ছে। তাই এই খাতকে আরও বেশি গতিশীল করার জন্য উদ্যোক্তরা মনে করছেন ভ্যাটের হার কমানোসহ সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করলে তা আরও বেশি লাভজনক খাত হিসেবে পরিণত হবে। এ কথাগুলো বলছিলেন এসিআই লজিস্টিকস লিমিটেডের (স্বপ্ন) নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির।         

তিনি একুশে টেলিভিশনের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান একুশে বিজনেস এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সুপার চেইন শপ, নিরাপদ খাদ্য, সুপার স্টোর, ফুড সেইফটি, সুপার মার্কেট ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য এই সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।               

একুশে টেলিভিশন: এই খাতের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের বলুন? 

সাব্বির হাসান নাসির: এই খাতকে বর্তমানে আমরা স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাচ্ছি। তাই সবাই চেষ্টা করছে এই খাতকে কিভাবে আরও বেশি গ্রাহক বান্ধব খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। গত বছরের তুলনায় স্বপ্ন এবং আগোরার আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং এ খাতটি আস্তে আস্তে জনপ্রিয় ও লাভজনক খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।   

একুশে টেলিভিশন:  স্বপ্নসহ সুপার শপগুলোর শুরুর দিকে অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে এর চ্যালেঞ্জগুলো কি কি বলে আপনি মনে করেন?   

সাব্বির হাসান নাসির: দেখুন একটি খাতকে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। তবে বর্তমানে সুপার শপের চ্যালেঞ্জগুলো একটু ভিন্ন। আমরা এখন যে কাজটি করছি সেটি হচ্ছে আরও বেশি নিরাপদ খাদ্যের দিকে যাওয়া। সাম্প্রতিক সময়ে যে লোকাল গ্যাপ রয়েছে যা গ্লোবাল গ্যাপেরই একটি অংশ। তা পূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ জন্য  আমরা ‘শুদ্ধ’ নামে একটি নতুন ব্র্যান্ড নামানোর চেষ্টা করছি। মাটি থেকে যে তাজা পণ্য বা সবজি  উৎপন্ন করা হচ্ছে তাতে যেন বিষাক্ত কোনো উপাদান যা ক্ষতিকর ক্যামিকেল ব্যবহার করা না হয় তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।    

নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আভ্যন্তরীন যে সংযোগগুলো আছে তা স্বচ্ছ আছে কিনা সেটা একটা চ্যালেঞ্জ। যেমন ধরুন অনেক আমদানিকারক আমাদের কাছে পণ্য সরবরাহ করেন। অনেক সময় এর ভেতর কি আছে সেটা দেখার সুযোগ আমাদের হয় না বা দেখতে পারিনা। ফলে ম্যাজিস্ট্রেট আসছেন এবং পণ্য খুলে দেখেন যে এর মধ্যে কোনো একটা সমস্যা আছে। এর জন্য আমাদের লোকজনকে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন এবং শাস্তি দিচ্ছেন। এভাবে  আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর হাতে হয়রানি হচ্ছি। কিন্তু তারা জানেনা যে এই পণ্যগুলো আমরা উৎপাদন করি না। তাই প্যাকেটের মধ্যে যদি কোনো সমস্যা থাকে সে জন্য উৎপাদনকরীকে ধরতে হবে অথবা আমদানিকারককে ধরতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। আপনারা জানেন, এর আগে আমাদের সুপার মার্কেট ওনার এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিকেও এক বছরের জন্য কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। এখন কথা হলো এই পণ্যগুলোতো আমারা তৈরি করি না। এগুলো তৈরি করছেন উৎপাদনকারীরা। তাই উৎপাদনকারীদের  আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশে এই আইনটা সাপোর্ট করছে না। এটাকে এই খাতের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ বলে আমি মনে করছি।   

ইদানিং আমরা ডেটা নিরাপত্তা নিয়ে ভুগছি। সম্প্রতি হয়তো আপনি শুনেছেন একটি ক্রেডিট কার্ড নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। ডেটা সেফটি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং কর্মচারীদের নৈতিক দিক থেকে ঠিক রাখা এগুলো হচ্ছে বর্তমানে সুপার মার্কেটের প্রধান চ্যালেঞ্জ।  

একুশে টেলিভিশন: বিএসটিআই খাবারের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ করছে। সেখানে প্রায়ই নিরাপদ খাবার নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। বর্তমানে মানুষের মধ্যে সচেতনতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজের জায়গাটা কিভাবে তৈরি করা যায় বলে আপনি মনে করেন।        

সাব্বির হাসান নাসির: আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একটা বিষয় বার বার বলে আসছি। সেটা হলো আমাদেরকে  নীতি নির্ধারণের জন্য একসঙ্গে বসতে হবে। আমাদের কথাগুলো শুনতে হবে। আপনি এখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দিলেন এবং বললেন আইন প্রয়োগ কর এবং আপনি ভাবলেন এতে সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। তাতে আসলে সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ ব্যবসায়ীরা কখনই ভোক্তাকে খারাপ জিনিস দিতে চায় না। সুপার শপে হয়তো এই পদ্ধতি চালু করা যাচ্ছে, কিন্তু বাজারে তা চালু করা যাচ্ছে না।   

আমি মনে করি এ সমস্যা সমাধানে সুপার চেইন শপের সংশ্লিষ্ট মালিক, উৎপাদনকারী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং মন্ত্রণালয়ের সদস্যদের একসঙ্গে বসা উচিত। একসঙ্গে বসে একটি দীর্ঘ মেয়াদী আইন প্রণয়ন করতে পারলে সমস্যা আশা করি কেটে যাবে।      

এছাড়া আমাদের একটি মাইক্রো বায়োলজিক্যাল ল্যাব দরকার। এটি স্থাপন করা না হলে খাদ্য দ্রব্য সহজে পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। অনেক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সবকিছু পরীক্ষা করতেও চায় না। কারণ পরীক্ষা করাটা অনেক বেশি ব্যয় বহুল। তাই কিভাবে পরীক্ষা করা যায় এ বিষয়ে এক সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।  

একুশে টেলিভিশন:  যারা ভোক্তা তাদের ভ্যাট নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে। যেমন নরমাল একটা বাজারে একটি জিনিস কিনছেন হয়তো সুপার শপে ওই জিনিসটাই আরেকটু ভালো পরিবেশে কিনছেন। কিন্তু তাতে ভ্যাট বিষয়টা সামনে চলে আসে। এ বিষয়টার কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে?     

সাব্বির হাসান নাসির: এ ক্ষেত্রে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। সরকার হয়তো মনে করে যারা সুপার শপে আসে তারা বড় লোক। তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ ভ্যাট নেওয়া যেতে পারে। যারা বাজারে বা নরমাল জায়গায় বিক্রি করছে তাদেরকে মনে করা হচ্ছে গরীব এবং তাদের কাছে আসেও গরীব ক্রেতারা। আমার মনে হচ্ছে এটা মোটেই ঠিক না। কারণ বিশ্বব্যাপী মুক্ত অর্থনীতি অনুশীলন হচ্ছে। সুপার স্টোর ও আধুনিক ব্যবসা থেকে সরকার কর পাচ্ছে। সেখানে এই বিষয়টিকে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তাই আমি মনে করি ভ্যাটের হার সমান হওয়া উচিত। ওইখানে যদি জিরো ভ্যাট থাকে তাহলে এখানেও জিরো ভ্যাট থাকা উচিত। এর ফলে সুপার মার্কেটের সংখ্যা বাড়বে। ক্রেতা বাড়বে এবং বিক্রির পরিমাণও বাড়বে। এর মাধ্যমে সরকারও অনেক বেশি  লাভবান হবে।  

একুশে টেলিভিশন:  আমাদের দেশে একটু দেরিতে সুপার শপ চালু হয়ে চ্যালেঞ্জিং অবস্থায় ছিল, সেখান থেকে আয়ের জায়গায় আসা সম্ভব হয়েছে। এ বিষয়টা নিয়ে যদি একটু বলেন। 

সাব্বির হাসান নাসির: এই খাতে যারা প্রথমে বিনিয়োগ করে তারা এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতো না। এই খাত থেকে কিভাবে আয় করবে সে সম্পর্কেও কারো ধারণা ছিল না। এর থেকে কোন পদ্ধতি অবলম্বন করলে বেশি লাভ হবে সেটাও জানা ছিল না। ব্যবসা শুরু করার পর সবার মধ্যে আস্তে আস্তে আত্মবিশ্বাস তৈরি হতে  থাকে।  যার ফলে এই সুপার শপ ব্যবসা লাভজনক হওয়ার পথে হাঁটা শুরু করে।    

একুশে টেলিভিশন:  কৃষক থেকে শুরু করে খুচরা ক্রেতাদের কাছে আসতে মধ্যস্বত্বভোগীদের একটা প্রভাব থাকে। যেখানে ৫ টাকার বেগুন হয়ে যায় ৪০ টাকা। এ বিষয়টা নিয়ে সুপার শপ কি করছে?  

সাব্বির হাসান নাসির: আপনি কাঁচা বাজার থেকে পণ্য ক্রয় করছেন। সেখানে কি আপনি আপনার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারছেন? আপনি যে জিনিষটা খুঁজছেন সেটারও কিন্তু মূল্য আছে। বাজারে জিনিষ ক্রয় করতে গিয়ে আপনাকে অনেক কষ্ট করতে হয়। আবার আপনি নিশ্চিত নন যে পণ্যটি ভালো না খারাপ। ভালো না হলে ফেরত দেওয়ারও সুযোগ নেই। ফেরত দিতে চাইলেও বিক্রেতাকে খুঁজে পাওয়া বা নেবে কিনা তার নিশ্চয়তা নেই। 

অন্যদিকে সুপার শপে একজন ক্রেতা আলাদা সুবিধা পাচ্ছে। কোনো পণ্য খারাপ হলে সেটা ফেরত দেওয়ার যেমন সুযোগ রয়েছে তেমনি অভিযোগ থাকলে সেটাও করার সুযোগ আছে। এটা অনেক বড় একটা বিষয়। যা নরমাল বাজার থেকে পাওয়া যায় না। আবার এখানে রয়েছে শীতাতপ এর মধ্যে বাজার করার ভালো পরিবেশ। এটাও একজন ক্রেতার জন্য বাড়তি পাওনা।    

একুশে টেলিভিশন: সামনে যে বাজেট রয়েছে সেটা নিয়ে আপনাদের প্রত্যাশা কি? 

সাব্বির হাসান নাসির: আমরা আশা করছি, ৪ শতাংশ যে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে সেটা ২ শতাংশে কমিয়ে আনা হবে। যদি এটা করা হয় তাহলে আমাদের বিক্রি বাড়বে। ব্যবসার আরও প্রসার ঘটবে। এতে সরকারও বেশ লাভবান হবে। সরকারের আয় বৃদ্ধি পাবে। এ জন্য আমি মনে করি এই খাতের ওপর সরকারের নজর দেওয়া উচিত। আর সরকারকে দেখতে হবে কিভাবে এই খাতকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। সেখানে আমাদের করণীয় কি? সরকার আমাদের কাছ থেকে কি পেতে পারে। এসব বিষয় পরিস্কার করতে হবে। দ্বিতীয় আর একটি কথা হলো আমাদের জন্য যে যন্ত্রপাতি আসে সেগুলোতে নজরদারি যদি একটু কমানো যায়। তাহলে ভালো হয়। এরপর আমাদের জন্য যদি শহরে একটা স্পেস দেওয়া হয় এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয় তাতেও এ খাত উন্নত হবে। কেননা শপিংও কিন্তু অপকাঠামোর একটা অংশ।    

সবশেষ কথা হলো আপনি কোথা থেকে পণ্যটি ক্রয় করবেন? অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে যেখানে ই-কোলাতেই  ব্যাকটেরিয়া ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেখানের শপিংটা কতটা নিরাপদ সেটাও সরকারের বিবেচনায় আনা উচিত। তাই সরকার এই খাতের দিকে নজর দিয়ে স্বাস্থ্যকর মেগা স্টোর করার কথা ভাবতে পারেন। সর্বপরি এই খাতের সার্বিক উন্নয়নে বাংলাদেশে একটা রিটেইল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।        

 এমএইচ/এসি