থাইরয়েড ক্যান্সার পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব : ডা. দেলোয়ার
প্রকাশিত : ০৬:০৩ পিএম, ৮ এপ্রিল ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ০৬:১৭ পিএম, ৮ এপ্রিল ২০১৮ রবিবার
অধ্যাপক ডা. দেলোয়ার হোসেন
থাইরয়েড এক ধরনের গ্রন্থি। এটি মানুষের গলার সামনের ভাগে অবস্থান করে। থাইরয়েড শরীরের সব রেচন প্রক্রিয়ার সাহায্য করে। থাইরয়েডে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমাদের দেশে বর্তমানে থাইরয়েডজনিত রোগ অনেক মানুষ আক্রান্ত। কিন্তু সঠিক সময় যথাযথ চিকিৎসা না দিতে পারলে, ক্যান্সার আক্রান্ত হতে পারে।
থাইরয়েডিজমের চিকিৎসা হচ্ছে অ্যান্টিথাইরয়েড ওষুধ। যেটি থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতাকে কমিয়ে দেয়। ওষুধের পাশাপাশি সার্জারি করাই ভালো। ক্যান্সার গ্রন্থিটিতে যে পরিমাণ আক্রান্ত করছে, সেই পরিমাণ গ্রন্থি কেটে কার্যকারিতা কমিয়ে দেওয়া যেতে পারে এবং রেডিও আয়োডিন থেরাপি, নিউক্লিয়ার মেডিসিনে ব্যবহার করা যেতে পারে। এর ভূমিকা ক্যান্সার নিমূর্লে ভূমিকা রাখে।
যখন অ্যান্টি থাইরয়েড ওষুধ ব্যবহার করা হয়, এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেড় থেকে দুই বছর ব্যবহার করা হয়। তারপর এই ওষুধ তাকে বন্ধ করে দিতে হবে। রোগী যদি স্বাভাবিক থাকে, খুব ভালো কথা, তবে যদি আবারও আক্রান্ত হয় এই ওষুধ দিয়ে তাকে চিকিৎসা করার কোনো সুযোগ নেই। অস্ত্রোপচার করতে হবে। আর অস্ত্রোপচার এর মাধ্যমে থাইরয়েড ক্যান্সার সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। এমনটিই জানালেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রিনিউলোজি-হেড এন্ড নেক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. দেলোয়ার হোসেন। সম্প্রতি একুশে টিভি অনলাইনকে এক বিশেষ সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন। সাক্ষাতকার নিয়েছেন একুশে টিভি অনলাইন প্রতিবেদক তবিবুর রহমান।
একুশে টিভি অনলাইন : থাইরয়েড ক্যান্সার অস্ত্রোপচারে কতটুকু সফলতা আসে?
ডা. দেলোয়ার হোসেন: থাইরয়েড ক্যান্সার আস্ত্রোপচার করে শতভাগ সফলতা আসে। কিন্তু আক্রান্ত হওয়ার উপরে নির্ভর করে অস্ত্রোপচার। আমাদের দেশে থাইরয়েড ক্যান্সার সর্ম্পকে সাধারণ মানুষ এখনও তেমন সর্তক নয়। ফলে যখন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানতে পারি থাইরয়েড ক্যান্সার আক্রান্ত হয়েছে। তখন অস্ত্রোপচার ছাড়া চিকিংসা করা সম্ভব হয় না। আর অস্ত্রোপচার সম্ভব নয়।
একুশে টিভি অনলাইন: থাইরয়েড ক্যান্সার আস্ত্রোপচারে খরচ কেমন? গরীব রোগীদের কোন বিশেষ ব্যবস্থা আছে কি না।
ডা.দেলোয়ার হোসেন: থাইরয়েড ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীকে আগে পরীক্ষা নিরীক্ষা কররে দেখতে হবে। থাইরয়েড ক্যান্সারে আক্রান্ত কি না। যদি আক্রান্ত হয় তাহলে তার পরিমাণ কতকুটু। যদি আক্রান্ত পরিমাণ বেশি হয় তাহলে আস্ত্রোপচার ছাড়া মুক্তি সম্ভব নয়। অস্ত্রোপচারে হাসপাতাল ভেদে খরচের ভিন্নতা রয়েছে। যেমন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এর আস্ত্রোপচারে খরচ হয় ২০ হাজার টাকা। রাজধানীর অন্যান্য হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করলে খরচ হয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। গরীব রোগীদের জন্য ঢাকা মেডিকেল সমাজ সেবা অধিদফতরে যোগাযোগ করলে কম খরচে অস্ত্রোপচার করা যায়।
একুশে টিভি অনলাইন : থাইরয়েড গ্রন্থির ক্যান্সার ছাড়া আর কি কি ধরনের সমস্যা হতে পারে?
ডা. দেলোয়ার হোসেন: থাইরয়েডে শুধু ক্যান্সার না অনেক ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে। শিশুর ক্ষেত্রে থাইরয়েড সমস্যা তৈরি হয় পারে। যেমন জন্মগতভাবেই যদি শিশুর থাইরয়েড গ্রন্থি তৈরি না হয় অথবা ভুলভাবে তৈরি হয়, ঠিকমত বৃদ্ধি না পায়, অথবা তৈরি হলেও ঠিকমতো কাজ না করে, তাহলে থাইরয়েড হরমন তৈরি হবে না। সেক্ষেত্রে বাচ্চার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যহত হয়।
আর বড়দের ক্ষেত্রে থাইরয়েড গ্রন্থির বিভিন্ন রকম রোগ হতে পারে। থাইরয়েড যে হরমন তৈরি করছে এটি একটি স্বাভাবিক মাত্রার মধ্যে থাকবে। তবে যদি স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কম তৈরি হয়, একে বলা হয় হাইপোথাইরয়েডিজম। এতে বিভিন্ন রকম অসুবিধা হয়। আবার যদি বেশি তৈরি হয়, বলা হয় হাইপার থাইরয়েডিজম। সেখানে আবার নানা রকম সমস্যা হবে। এটি হচ্ছে কাজঘটিত সমস্যা। এ ছাড়া যে সমস্যা হতে পারে, থাইরয়েড গ্রন্থি নিজেই বড় হয়ে যেতে পারে। যাকে আমরা বলি গলগণ্ড। এখানে থাইরয়েড গ্রন্থি বড় হয়ে যায়। এটি বিভিন্নভাবে বড় হতে পারে, বিভিন্ন কারণে বড় হতে পারে। আয়োডিনের অভাব আছে এমন এলাকায় যারা বাস করে তাদের হতে পারে বা যারা কম খায় তাদের হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আয়োডিন ডেফিসিয়েন্সি গয়েটার বা এনডিমিক গয়েটার হয়। গ্রন্থিটি সমানভাবে বড় হয়ে যেতে পারে। আয়োডিন যেহেতু হরমোন তৈরির বিশেষ একটি উপাদান। আয়োডিন যদি কম থাকে গ্রন্থি চেষ্টা করবে শরীরের হরমোনকে স্বাভাবিক রাখতে। সেই ক্ষেত্রে সে আস্তে আস্তে বড় হয়ে যাবে। যাকে হাইপারট্রোফি বলা হয়। গ্রন্থি বড় হয়ে যাবে। তবে হরমোন স্বাভাবিকভাবে বের করার চেষ্টা করবে। করতে করতে এক সময় আর স্বাভাবিকভাবে তৈরি করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে হাইপোথাইরয়েডিজম হয়ে যাবে। যদিও লবণের মাধ্যমে আয়োডিন থাকার কারণে আমাদের দেশে এই রোগ অনেকটা কমে গেছে।
একুশে টিভি অনলাইন : এই রোগ নির্ণয়ের জন্য নিউক্লিয়ার মেডিসিনের কাজ কী?
ডা. দেলোয়ার হোসেন: নিউক্লিয়ার মেডিসিনে থাইরয়েডের যেসব পরীক্ষা করে থাকি, তার মধ্যে প্রথম হলো থাইরয়েডের হরমোন। টিথ্রি, টি ফোর, ফ্রি টিথ্রি, থ্রি টিফোর এবং থাইরয়েড হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে টিএসএইচ- এই হরমোনগুলোর আমরা করে থাকি। এছাড়া নির্দিষ্ট পরিমাণ তেজস্ক্রিয় আয়োডিন রোগীকে খাওয়ানোর পরে, নির্দিষ্ট সময় পরে কত শতাংশ আপটেক হচ্ছে থাইরয়েড গ্রন্থিতে এটি দেখি। দেখে আমরা বলতে পারি এর কার্যকারিতা কম, না কি বেশি। যেমন : হাইপার থাইরয়েডিজমে আপটেকটা বেড়ে যাবে। হাইপো থাইরয়েডিজমে কমে যাবে।
একুশে টিভি অনলাইন : আপনার মূল্যবান সময় দেওয়া জন্য ধন্যবাদ।
ডা. দেলোয়ার হোসেন: একুশে টিভি পরিবারকেও ধন্যবাদ।
/এআর /