শায়েস্তাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে স্কাউটিং ও বিএনসিসি
মো. গিয়াস উদ্দিন
প্রকাশিত : ১১:১৯ পিএম, ৮ এপ্রিল ২০১৮ রবিবার
স্কাউটিং হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবামূলক আন্দোলন। এটি একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবা ও বাস্তবভিত্তিক শিক্ষামূলক কার্যক্রম। বিশ্বব্যাপী স্কাউট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা রবার্ট স্টিফেন স্মিথ লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল। তার জন্ম হয় ১৯৫৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি লন্ডনের হাইড পার্কে। দেশের শিশু, কিশোর ও যুবক-যুবতীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পরিকল্পিত অনুশীলনের মাধ্যমে দেশপ্রেমিক নাগরিক ও সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ স্কাউট প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ৯ এপ্রিল ১৯৭২ সালে গঠিত হয় বাংলাদেশ বয় স্কাউট সমিতি। ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে রাষ্ট্রপতির আদেশ বলে বাংলাদেশ স্কাউটসকে সরকারি স্বীকৃতি দেয়া হয়। ১৯৭৪ সালের ১ জুন বিশ্ব স্কাউট সংস্থা বাংলাদেশ বয় স্কাউট সমিতিকে বিশ্ব স্কাউট কনফারেন্সের ১০৫ নম্বর সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
১৯৭৪ সাল থেকে শায়েস্তাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে সাবেক প্রধান শিক্ষক মরহুম আবদুন নূর চৌধুরীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জনাব আব্দুল জলিল সাহেবের তত্ত্ববধানে হাঁটি হাঁটি পা পা করে স্কাউটিংয়ের যাত্রা শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় শায়েস্তাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের আটজন ছাত্র নিয়ে ১৯৮৭ সালে স্কাউট জাম্বুরি এবং ১৯৮৮ ও ১৯৮৯ সালে চট্টগ্রামে পলোগ্রাউন্ড আঞ্চলিক সমাবেশে অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের সাথে সনদ অর্জন করে। অত্র বিদ্যালয়ের স্কাউট দল ১৯৯১ সালের ১২-১৮ জানুয়ারি গাজীপুরের মৌচাকে স্কাউট জাতীয় জাম্বুরিতে অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের সাথে সনদ অর্জন করে। ১৯৯৩ সালের ৭-১২ জানুয়ারি সিলেটে অনুষ্ঠিত স্কাউট সমাবেশে অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের সাথে সনদ অর্জন করে।
এই বিদ্যালয়ের আটজন ছাত্র নিয়ে ১৯৯৪ সালের ৫-১২ জানুয়ারি গাজীপুরের মৌচাকে পঞ্চম বাংলাদেশ জাতীয় ১৪শ’ এশিয়া প্যাসিফিক স্কাউট জাম্বুরিতে অংশগ্রহণ করে সাফল্যের সাথে সনদ অর্জন করে।
এই বিদ্যালয়ের আটজন ছাত্র নিয়ে ১৯৯৭ সালের ৩-৬ জানুয়ারি ১৫শ’ চট্টগ্রাম অঞ্চলিক স্কাউট সমাবেশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়াজ মোহাম্মদ স্টেডিয়ামে অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের সাথে সুনাম অর্জন করে।
একইভাবে স্কাউট দল ১৯৯৯ সালের ৬-১৩ জানুয়ারি গাজীপুরের মৌচাকে অনুষ্ঠিত স্কাউট জাতীয় জাম্বুরিতে অংশগ্রহণ করে সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়।
শায়েস্তাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় স্কাউট দল ২০০৯ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর জাম্বুরি পার্টিসিপেন্টস এক্সপ্লোরিং এবং হবিগঞ্জ জেলা স্কাউট র্যালিতে অংশগ্রহণ করে সফলতার সাথে সনদ অর্জন করে।
অত্র বিদ্যালয়ের স্কাউট দল ২০১০ সালের ১৪-২২ জানুয়ারি অষ্টম জাতীয় স্কাউট জাম্বুরিতে অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের সাথে সনদ অর্জন করে।
বিদ্যালয় স্কাউট দল ২০১৫ সালের দশম উপজেলা স্কাউট সমাবেশ ২৩-২৬ জানুয়ারি ২০১৬-তে অংশগ্রহণ করে সন্তোষজনক ফলাফল অর্জন করে। বিদ্যালয়ের স্কাউট দল পঞ্চদশ হবিগঞ্জ স্কাউট সমাবেশ-২০১৬ ইং ১২-১৬ জানুয়ারি ২০১৭-তে অংশগ্রহণ করে সন্তোষজনক ফলাফল অর্জন করে।
অত্র বিদ্যালয়ের স্কাউট দল পঞ্চম আঞ্চলিক সমাবেশ এমসি একাডেমি, গোলাপগঞ্জ ২০১৮ সালের ৩-৮ জানুয়ারি অংশগ্রহণ করে পূর্বগৌরব অক্ষুন্ন রাখে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) কার্যক্রমে শায়েস্তাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর হচ্ছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর ক্যাডেটদের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় সারির আধাসামরিক, স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী। এটি সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা, জেসিও, এনসিও, বেসামরিক কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে গঠিত।
বিএনসিসি’র মূলমন্ত্র হলো জ্ঞান, শৃঙ্খলা, একতা। ২৩ মার্চ ১৯৭৯ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি একটি সরকারি আদেশে বিসিসি ও জেসিসি-কে সংগঠিত করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর প্রতিষ্ঠা করেন। উক্ত সাল থেকে শায়েস্তাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে বিএনসিসি সংস্থাটি প্রধান শিক্ষক মরহুম আবদুন নূর চৌধুরীর হাত ধরে এবং আব্দুল জলিলের (টিইউও) ব্যবস্থাপনায় সাফল্যের সাথে কোরটির সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
প্রতি বছর ২৭ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বার্ষিক প্রশিক্ষণ ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর জুলাই মাসে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে আঞ্চলিক ক্যাপসুল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। ওইসব ক্যাম্পে শায়েস্তাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর ১০ জন ক্যাডেট নিয়ে অংশগ্রহণ করে থাকে। অংশগ্রহণকারী ক্যাডেটরা কর্মজীবনেও সফলতার স্বাক্ষর রেখে দায়িত্ব পালন করছেন।
লেখক: সিনিয়র শিক্ষক, শায়েস্তাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়