ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

কোটা সংস্কার : কাবেরী গায়েনের নিন্দা ও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব

প্রকাশিত : ০২:৫১ পিএম, ৯ এপ্রিল ২০১৮ সোমবার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন বলেছেন, ‘প্রান্তিক মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো সন্তান/পৌত্র-দৌহিত্র অভাবের কারণে পড়তে না পারলে তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব রাষ্ট্র নেবে, উচ্চ শিক্ষায়তনে ভর্তির সময়ে কোটার সুযোগ পাবে কিন্তু তাদের বিসিএস কোটা থাকবে না। আর যদি ভর্তিপরীক্ষায় তারা কোটা না নেন, তবে বিসিএস পরীক্ষায় পাশ করলে তাদের কোটার আওতায় নেয়া হোক। যে কোনো একটা কোটার সুযোগ পাবেন তারা। সেই কোটা তখন সাকূল্যে ৫%-এর বেশি হবে না।’

একই সঙ্গে তিনি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর এবং ছাত্রীদের ওপর আক্রমণের নিন্দা জানান। সোমবার বেলা ১১টা ৩২ মিনিটে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে এমন মন্তব্য করেন তিনি। এছাড়া তিনি কোটা সংস্কারের বিষয়ে পাঁচটি সুপারিশসহ সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দেন।

প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কারের দাবিতে গতকাল রোববার দুপুর আড়াইটা থেকে শাহবাগ মোড়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থী। একই সঙ্গে সারাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালিত হয়।
সোমবার ঢাবির ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। সোমবার সকালে দুপুরের মধ্যে আটক সব আন্দোলনকারীকে মুক্তি দেওয়া না হলে সারা দেশে দাবানল ছড়িয়ে পড়বে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাবির অধ্যাপক কাবেরী গায়েন ফেসবুকে নিজের কিছু প্রস্তাব ও সুপারিশ তুলে ধরেন।
নিম্নে কাবেরী গায়েনের সুপারিশগুলো তুলে ধরা হলো-

১। জেলা কোটা বাতিল হোক। যারা বিসিএস পর্যন্ত যান, তারা প্রত্যেকেই ভালো স্কুল-কলেজের সার্টিফিকেটধারী।

২। নারীরা এতো ভালো করছেন বহুদিন থেকে যে নারীকোটা রীতিমতো অপমানজনক অনেক নারীর জন্য। তবে অনগ্রসর এলাকা চিহ্নিত করে কিছু কোটা সেখানে থাকতে পারে। সর্বোচ্চ ৫%। তবে অনগ্রসর এলাকার নারীরাও যদি ভালো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী হন তাদের ক্ষেত্রেও এ কোটার বিরোধী আমি। তারা স্বেচ্ছায় বিসিএস ফর্ম পূরণ করার সময় এ কোটার সুযোগ নিতে চান না মর্মে আন্ডারটেকিং দিতে পারেন।

৩। আদিবাসী কোটা থাকতে হবে আরও বহু বছর। পৃথিবীর সব দেশে আছে। ৫% থাকুক।

৪। প্রতিবন্ধী কোটা বাড়ানো হোক, ২%।

৫। মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ নিয়ে ঝামেলাটা হচ্ছে। যুদ্ধফেরত/যুদ্ধে নিহত ভ্যাটারানদের সন্তান-সন্ততি পৃথিবীর সব দেশেই বিশেষ সুবিধা পান। মুক্তিযুদ্ধে কতজন অংশগ্রহণ করেছেন, সেই মর্মে তালিকা নিশ্চয়ই আছে। সেখান থেকে প্রান্তিক মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান-সন্ততি/পৌত্র-দৌহিত্রদের সুযোগের পক্ষে আমি। সেই সংখ্যা কোনভাবেই ৩০% হবে না। এমনকি ৫% হবে কিনা সন্দেহ। মুশকিল হলো, এ কোটার সুযোগ নেয়া পর্যন্ত তারা পৌঁছাতে পারেন না। বরং খুব প্রতিষ্ঠিত ঘরের, ভালো স্কুল-কলেজে শিক্ষিত শ্রেণির অনেকে ছেলে-মেয়েকে নির্লজ্জভাবে পিতামহ/মাতামহের মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তি করান বিশ্ববিদ্যালয়ে/ উচ্চ শিক্ষায়তনে। ফের চাকরির সময়ও যদি এ কোটা বহাল থাকে তাহলে সেই সন্তানদের মেধা নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। সচ্ছল, প্রতিষ্ঠিত ঘরের ছেলে-মেয়েদের মুক্তিযোদ্ধা পিতামহ/মাতামহ কোটায় উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিরও বিপক্ষে আমি।

তার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবগুলো হলো-
প্রান্তিক মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো সন্তান/পৌত্র-দৌহিত্র অভাবের কারণে পড়তে না পারলে তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব রাষ্ট্র নেবে, উচ্চ শিক্ষায়তনে ভর্তির সময়ে কোটার সুযোগ পাবে কিন্তু তাদের বিসিএস কোটা থাকবে না। আর যদি ভর্তিপরীক্ষায় তারা কোটা না নেন, তবে বিসিএস পরীক্ষায় পাশ করলে তাদের কোটার আওতায় নেওয়া হোক। যে কোনো একটা কোটার সুযোগ পাবেন তারা। সেই কোটা তখন সাকূল্যে ৫%-এর বেশি হবে না।

সব মিলিয়ে দাঁড়াবে তখন নারী (৫%)+ আদিবাসী (৫%)+ প্রতিবন্ধী (২%)+ মুক্তিযোদ্ধা (৫%)= ১৭% কোটা। সেটা গ্রহণযোগ্য। আস্তে আস্তে সে`সব কোটাও তুলে দেয়া হোক। আদিবাসী এবং প্রতিবন্ধী কোটা বহাল থাকবে শুধু তখন, পৃথিবীর যে কোনো দেশের মতো।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর এবং ছাত্রীদের উপর আক্রমণের নিন্দা জানাই।

এসএইচ/