আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান : ফের উত্তাল ঢাবি
প্রকাশিত : ০৩:২৫ পিএম, ১০ এপ্রিল ২০১৮ মঙ্গলবার
সরকারের আশ্বাসে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনকারীদের একটি পক্ষ ফের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে কয়েকশ’ শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের একটি মিছিল রোকেয়া হলের সামনে দিয়ে টিএসসি হয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে জড়ো হয়। রাজু ভাস্কর্যের সামনে শত শত আন্দোলনকারী কোটা সংস্কারের পক্ষে স্লোগান দিচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ঢাবি উপাচার্যের (ভিসি) বাসভবনের হামলার বিচার যদি হয় তবে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার বিচার কেন হবে না? শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ প্রশাসনকে এর জবাব এবং শিক্ষার্থীদের উপর হামলার বিচার করতে হবে।
এসময় শিক্ষার্থীরা হলে হলে হামলা কেন’, ‘ক্যাম্পাসে হামলা কেন প্রশাসন জবাব চাই’,‘রামদা নিয়ে ক্যাম্পাসে কেন’,‘ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন’, ‘ছাত্রদের উপর হামলা কেন’, ‘ছাত্রের বুকে গুলি কেন’ প্রসাশন তুমি জবাব দে এমন স্লোগান দিতে থাকেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় তিনটি মিছিল এসে মিলিত হয় রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থা নিয়ে শিক্ষার্থীরা এসব দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।
কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাবির আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ভিসির বাসভবনে হামলাকারী কয়েকজনকে চিহ্নিত করা গেছে। আন্দোলনের নামে যারা ভিসির বাসভবনে হামলা করেছে তাদের বিচার হবে। আমাদের প্রশ্ন যারা ক্যাম্পাসে ঢুকে রামদা নিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা করল, পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়লো, হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হলো, রক্ত ঝরল, সেই হামলাকারীদের বিচার তো তিনি চাইলেন না।
রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান নেওয়া রাকিব নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, পুলিশ হলে হলে টিয়ারশেল, গুলি ছুড়েছে, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে। ঢাবি প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে। আমরা এমন অথর্ব প্রশাসন চাই না।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আন্দোলনকারীদের কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন এই পক্ষটিকে মিছিল না করার অনুরোধ জানান। সরকার শেষ পর্যন্ত কী করে, তা দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ জানান। তবে সেই অনুরোধ উপেক্ষা করে মিছিল শুরু করে আন্দোলনকারীদের একটি পক্ষ।
বিদ্যমান কোটার বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে, সরকারে এমন আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলন আগামী ৭ মে পর্যন্ত স্থগিত করেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল সোমবার বিকেলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সরকারের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সচিবালয়ে আন্দোলনকারীদের প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আতাউল্লাহ এ বিষয়ে বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যে কোনো বিভাজন নেই। আমরা আন্দোলনকারীদের বোঝাচ্ছি, অন্তত ৭ মে পর্যন্ত তারা যেন আন্দোলন স্থগিত রাখেন। আমরা দেখতে চাই সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়। ৭ মের মধ্যে সরকার কোটা সংস্কারের পক্ষে দাবি মেনে না নিলে আমরা আবারও আন্দোলন শুরু করব।’তিনি বলেন, যাঁরা এখন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁরা এ বিষয়ে না জেনেই আন্দোলন করছেন। একটি বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করছেন।
মো. আতাউল্লাহ জানান, কোটা সংস্কারের পক্ষে ফেসবুকে একটি গ্রুপ আছে, যার সদস্য ১৪ লাখের ওপরে। এদিকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে কয়েকজন জানান, আন্দোলন স্থগিত রাখলে সরকার দাবি পূরণ করবে না।
বিদ্যমান কোটার সংস্কার চেয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এ দফায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে আন্দোলন করে আসছে। গত রোববার তাদের পদযাত্রা ও অবস্থান কর্মসূচি চলার সময় ঢাকায় পুলিশ বাধা দিলে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা করে ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে।
/এআর/