রাজীবকে নিয়ে উদ্বিগ্ন চিকিৎসকরা, দোয়া চেয়েছে পরিবার
প্রকাশিত : ০৩:৪৯ পিএম, ১০ এপ্রিল ২০১৮ মঙ্গলবার
রাজধানীতে দুই বাসের চিপায় ডান হাত হারানো রাজীব হোসেনের শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক। তাঁকে নিয়ে উদ্বিগ্ন চিকিৎসকেরা। আজ মঙ্গলবার বেলা পৌনে দুইটার দিকে রাজীবের এই অবস্থার কথা জানান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগের প্রধান শামসুজ্জামান শাহীন। তিনি রাজীবের পরিস্থিতির বর্ণনা করতে গিয়ে আবেগতাড়িত হন। হাত চোখে-মুখে চেপে কান্না সংবরণ করেন।
ডা. শামসুজ্জামান বলেন, রাজীবের সর্বশেষ সিটিস্ক্যান রিপোর্ট খুবই উদ্বেগজনক। তিনি জানান, গ্লাসগো কমা স্কেল (জিসিএস) ১৪ থেকে ১৫ হলে মানুষের মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবে কাজ করে বলে ধরে নেওয়া হয়। ৮ থেকে ৯ হলে বুঝতে হবে রোগীর অবস্থা সংকটজনক। রাজীবের জিসিএস লেভেল এখন ৩।
এর আগে সকালে অধ্যাপক শামসুজ্জামান জানিয়েছিলেন, মাথায় আঘাতের কারণে নিউরোলজিক্যাল অবস্থার অবনতি হওয়ায় ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ার রাজীবকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, গতকাল রাজীব নিজে উঠে বসে কথা বলেছে। আমি ওকে বলেছি, তুমি খাওয়াদাওয়া করো ঠিকমতো। আমাদের সহযোগিতা করো। আমরা তোমার কৃত্রিম হাত বানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমরা কাজও শুরু করেছি।
রাজীবের মামা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল রাত নয়টার দিকে রাজীব বলেছিল, আমি বাড়ি যাব।’ শামসুজ্জামান বলেন, গতকালও রাজীবের সিটিস্ক্যান রিপোর্ট ভালো ছিল। ভোররাত চারটার দিকে তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তাঁকে প্রথম অক্সিজেন দেওয়া হয়। নেবুলাইজেশন করার ফলে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে থাকেন। তখন সাপোর্ট তুলে নেওয়া হয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রাজীবের শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য ও নিউরোসার্জন কনক কান্তি বড়ুয়া ঢাকা মেডিকেলের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিসিইউ) এসে রাজীবকে দেখেছেন। সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, আইসিসিইউয়ের প্রটোকল অনুযায়ী যে চিকিৎসা হওয়ার কথা তা রাজীবের হয়েছে। তাঁকে নতুন একটি ওষুধ দেওয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা এই ওষুধ চলবে। অস্ত্রোপচার হবে না। তাঁর অবস্থা খুবই সংকটজনক।
রাজীবের খালা জাহানারা একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে জানান, গতকাল কিছুটা উন্নতি হলেও রাত থেকে ক্রমশ অবনতি হতে থাকে। সে এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে। সে ফিরে আসবে কি না তাও অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। আমরা রাজিবের জন্যে দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।
উল্লেখ্য, গত ৩ এপ্রিল দুপুরে রাজধানীর কারওরান বাজারের সার্ক ফোয়ারার কাছে বিআরটিসির একটি দ্বিতল বাসের পেছনের ফটকে দাঁড়িয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীব হোসেন। বাসটি হোটেল সোনারগাঁওয়ের বিপরীতে পান্থকুঞ্জ পার্কের সামনে পৌঁছালে হঠাৎ পেছন থেকে স্বজন পরিবহনের একটি বাস বিআরটিসির বাসটিকে গা ঘেঁষে অতিক্রম করে। এ সময় দুই বাসের প্রবল চাপে গাড়ির পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা রাজীবের ডান হাত কনুইয়ের ওপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর পর সঙ্গে সঙ্গে রাজিব আর্তনাদ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পান।
এরপর তাকে তাৎক্ষণিকভাবে শমরিতা হাসপাতাল ভর্তি করা হয়। একদিন থাকার চিকিৎসা খরচ না চালাতে পেরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয় ।
কেআই/ এআর