ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

স্মৃতির পাতা থেকে

মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ

প্রকাশিত : ০৬:০৪ পিএম, ১০ এপ্রিল ২০১৮ মঙ্গলবার

শতবর্ষে হাজারো প্রাণের স্পন্দনে মুখর হবে শায়েস্তাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রিয় আঙ্গিনা- বিষয়টি ভাবতেই মনে কেমন যেন এক শিহরণ জাগে। সেই স্মৃতিময় দিনগুলো আজও হাতছানি দেয়। মনে পড়ে অজস্র স্মৃতিকথা।১৯৮১ সালে শায়েস্তাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তিও সময়টা ছিল আমার জন্য কিছুটা দুঃখের। কারণ বড় ভাই স্কুল ফাঁকি দেওয়ার কারণে আব্বা আমাকে হাই স্কুলে ভর্তি করাবেন না বলে দেন। তিন দিন না খেয়ে থেকে আম্মার অনেক অনুরোধে শেষ পর্যন্ত ক্লাস সিক্সে ভর্তি হয়েছিলাম। ক্লাস সিক্স, সেকশন সি, রোল নাম্বার ছিল ছত্রিশ। এরপর থেকে নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া, শ্রদ্ধেয় আব্দুল জলিল স্যারের নেতৃত্বে স্কাউটে, বিএনসিসিতে, মরহুম রহিম আলী স্যারের নেতৃত্বে খেলাধুলাসহ বিভিন্ন ক্যাম্পেইনে অংশ নেওয়ার রয়েছে অনেক স্মৃতি। ১৯৮৪ সালে ক্লাস নাইনে থাকাকালীন স্কুল কর্তৃপক্ষ হঠাৎ স্কুল টিফিনের খাবারের ফি দুই টাকা থেকে চার টাকায় বাড়িয়ে দিলেন। আমরা স্কুলের সব শিক্ষার্থী প্রতিবাদ শুরু কওে দিলাম। ক্লাস নাইনের সেকশন এ-এর ক্লাস ক্যাপ্টেন হিসেবে আমি আমারসহ পাঠীসহ সব ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে ক্লাস বর্জন করে স্কুল মাঠের গাছ তলায় জড়ো হয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করছিলাম। দুদিন ক্লাস বর্জনের পর শ্রদ্ধেয় প্রধান শিক্ষক মরহুম আবদুন নূর চৌধুরী স্যার আমাদের ডেকে নিয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন এখন থেকে সব শিক্ষার্থীকে টিফিন দ্বিগুণ করে দেওয়া হবে।

আমরা সবাই আবার নিয়মিত ক্লাস শুরু করলাম; কিন্তু দুদিন পরেই সহপাঠীরা অভিযোগ করলো সবাইকে নিম্নমানের টিফিন দেওয়া হয়েছে, টিফিনের কলা ছিল আধাপচা। ক্লাস ক্যাপ্টেন হিসেবে আবারও গেলাম প্রধান শিক্ষকের রুমে, সাথে ছিলেন ক্লাস নাইনের ক্লাস শিক্ষক শ্রদ্ধেয় ফরিদ উদ্দিন স্যার। নিম্ন মানের টিফিনের অভিযোগ শুনে প্রধান শিক্ষক বলেছিলেন, ‘ঠিক আছে এখন থেকে চেক কওে ভালো টিফিন দেওয়া হবে।’ আমি তখন অপরিপক্ব নেতৃত্বেও আবেগে প্রধান শিক্ষকের টেবিল চাপড়ে বলেছিলাম,‘এখন থেকে টিফিন দিলে যেন ভালোটা দেওয়া হয়, অন্যথায় আমরা টিফিন নেব না।’ সেদিন শ্রদ্ধেয় আবদুন নূও স্যার গর্জে উঠে বলেছিলেন, ‘আমার সামনে আমার টেবিল চাপড়ে কথা বলার সাহস এই ছাত্র পেল কোথা থেকে!’


সেদিন শ্রদ্ধেয় ফরিদ উদ্দিন স্যার আবদুন নূও স্যারকে শান্ত করেছিলেন। বলেছিলেন,‘স্যার, ও বাচ্চা ছেলে, বুঝতে পারেনি।’আমি সেদিন বুঝতে পারিনি একজন শিক্ষকের সামনে একজন ছাত্রের টেবিল চাপড়ে কথা বলা যে কত বড় অন্যায়, তা বোঝার জ্ঞান সেদিন আমার ছিলনা। ক্লাস ক্যাপ্টেন হিসেবে আমি শুধু প্রতিবাদ করতে এই কথাগুলো বলেছিলাম। সেই ভুলের অনুশোচনায় আজও নিজেকে অনেক অপরাধী বলে মনে হয়। প্রতিনিয়ত শুধু বলি, ‘হে শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষাগুরু, আপনি যেখানেই থাকুন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আপনাকে যেন জান্নাতবাসী করেন। আমিন।’

এমনি অনেক স্মৃতি বিজড়িত শায়েস্তাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাটির সুবাস আর শিক্ষকদের ভালোবাসা নিয়ে ১৯৮৬ সালে এসএসসি পাস কওে বিদায় নেই। সেই দুষ্টামি, সেই দুরন্তপনা, স্বলিখিত নাটক মঞ্চায়ন আর অসাধ্যকে সাধ্য করার স্পৃহা আজও আমায় আলোড়িত করে। অনেক স্মৃতির কথাই আজ এই স্বল্প পরিসওে বলে শেষ করা যাবেনা। শতবর্ষ পূর্তিও এই শুভ লগ্নে নিজেকে খুব গর্বিত মনে হচ্ছে যে, আমিও এই অনুষ্ঠানের একজন অংশীদার হতে পেরেছি বলে। আজ শতবর্ষ উৎসব আয়োজনে দাঁড়িয়ে শুধু এটুকুই বলব, ‘হে আমার প্রিয় বিদ্যাপীঠ, তুমি বিলিয়ে যাও জ্ঞানের আলো আর কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যুগ যুগ ধওে হাজারো নবীন এবং প্রবীণের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে। সফল হোক শতবর্ষ উৎসব ২০১৮।

লেখক: এসএসসি ব্যাচ ১৯৮৬
বিশেষ প্রতিনিধি, চ্যানেল আই, ইউরোপ।
সাধারণ সম্পাদক, শায়েস্তাগঞ্জ সমিতি, ইউকে।