আমরা কখন এমন হব?
আবু এন এম ওয়াহিদ
প্রকাশিত : ০৭:০৬ পিএম, ১০ এপ্রিল ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৭:০৬ পিএম, ১০ এপ্রিল ২০১৮ মঙ্গলবার
২০০৬ সালের মে মাস। আমেরিকার টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি`-র সাথে তিউনিসিয়ার ‘ইউনিভার্সিটি অফ টিউনিস- এল্ মানার’-এর এক যৌথ গবেষণা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে মাত্র। এ উপলক্ষে দু’সপ্তাহের জন্য আমাকে যেতে হয়েছিল তিউনিসিয়ার রাজধানী ‘তিউনিস’-এ। সুদূর উত্তর আফ্রিকায় ভূ-মধ্যসাগরের পাড়ে, লিবিয়া আর আলজেরিয়ার মাঝখানে এক কোটি লোকের ছোট্ট দেশ তিউনিসিয়া। সে দেশের এক বড় অংশকে সাহারা এমনিতে গ্রাস করে ফেলেছে। তার ওপর মরুভূমির বালুর চাদর আগ্রাসী আক্রোশে ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছে তিউনিসিয়ার অবশিষ্ট সবুজাঞ্চলের দিকে। এই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েও সে দেশের সংগ্রামী মানুষ টিকে আছে শত শত বছর ধরে। তথাপি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ‘জেসমিন বিপ্লব’-এর আগে, বাংলাদেশের অনেক লোক এ দেশটির নামও জানতেন না। সে দেশের কথা আমি প্রথম শুনেছি মাত্র ১৯৭০ সালে যখন তৎকালীন জর্ডানের বাদশাহ্ হোসেন বিন তালাল পিএলও এবং ইয়াসির আরাফাতকে তাঁর দলবলসহ জর্ডান থেকে বের করে দেন তখন। ওই সময় তিউনিসিয়া সরকার ইয়াসির আরাফাত ও তাঁর অস্থায়ী ভ্রাম্যমাণ সরকারকে আশ্রয় দিয়ে সারা মুসলিম বিশ্বের সম্মান ও সুনাম অর্জন করেছিল।
ন্যাসভিল থেকে শিকাগো এবং প্যারিস হয়ে আমি যখন তিউনিস গিয়ে পৌঁছালাম তখন দুপুর গড়িয়ে সূর্য পশ্চিম আকাশে মাত্র একটুখানি হেলেছে। কাস্টমস্ এবং ইমিগ্রেশনের কাজ সেরে আধা ঘণ্টার মধ্যে বেরিয়ে এলাম। দূর থেকে দেখতে পেলাম আগমনী এলাকায় আমার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন পেশাগত বন্ধু ও তিউনিসে আমার সেবারকার আমন্ত্রয়িতা‘শিহেব বোডউইন’। বিমানবন্দর থেকে বের হয়েই বুঝলাম, ভর দুপুরে মরুভূমি দেশের লুহাওয়ার উত্তাপ কতখানি প্রখর। গাড়িতে ওঠার পরই শিহেব বললেন, ‘সন্ধ্যা নামতে এখনো অনেক দেরি, যদি তোমার আপত্তি না থাকে তাহলে চলো হোটেলে যাওয়ার আগে তোমাকে এক চক্কর তিউনিস শহর ঘুরে দেখিয়ে নিয়ে যাই’। আমি তাঁর প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলাম। দেখলাম এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে শহরে যাওয়ার পথ খুব সুন্দর, সাজানো গোছানো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ঝকঝকে তকতকে। দু’দিকে রাস্তা, মাঝখানে সবুজ আয়ল্যান্ড-হরেক রকমের রঙিন ফুল আর নানা জাতের বাহারি গাছগাছালি দিয়ে খুব রুচি সম্মতভাবে সাজানো।
শিহেব গাড়ি চালাচ্ছেন, শহর ঘুরেফিরে দেখাচ্ছেন আর ধারাবাহিক বর্ণনা দিচ্ছেন। এর মধ্যে এক সময় সাগর পাড়েও নিয়ে গেলেন। সাগরের দিকে চোখ তুলে বললেন তিউনিসিয়ার সমুদ্র সৈকতের সঙ্গে ইটালির সিসিলি দ্বীপপুঞ্জের ন্যূনতম দূরত্ব মাত্র ত্রিশ-পয়ত্রিশ মাইল। দুঃসাহসী তিউনিসীয়রা সাধারণ নৌকো চড়ে ওই পথে ইটালি চলে যায়। তার আগে এক জায়গায় নিয়ে তিনি আমাকে একটি তিন-চারতলা বড় বিল্ডিং দেখিয়ে বললেন, সত্তর সালে যখন পিএলওর লটবহর নিয়ে চেয়ারম্যান আরাফাত এদেশে এসে আশ্রয় নেন, এটাই ছিল তাঁর হেডকোয়ার্টার। কথা প্রসঙ্গে এক সময় তিনি গৌরবের সাথে বললেন তাঁরা মহান মনিষী ইবনে খালদুনের উত্তরাধিকারীর। এর আগে আমি জনতাম না ইবনে খালদুনের মত মহান পুরুষের জন্ম হয়েছিল তিউনিসিয়ায়। সেবার তিউনিস থেকে ফিরে এসে ইবনে খালদুনের ওপর আমার বিশেষ আগ্রহ জন্ম নেয়। কিছু লেখাপড়া করি তাঁর ওপর, এখনো পড়ছি, তাঁকে জানার ও বুঝার চেষ্টা করছি। যতই পড়ছি ততই অবাক হচ্ছি এই ভেবে যে, ইবনে খালদুন কত বড় মাপের ইতিহাসবিদ এবং কত বড় সমাজতাত্তি¡ক ছিলেন! এর মধ্যে তাঁর জীবন ও কাজের ওপর একটি রচনাও লিখেছি।
গেল শতকে তিউনিসিয়া ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল, তারও আগে দীর্ঘদিন ছিল অটোমান সাম্রাজ্যের অঙ্গীভূত। আরও পেছনে গেলে দেখা যায়, দেশটি রোমানদের অধীনে ছিল। এ-সব বিদেশী শাসন ও শোষণে তাঁরা এক দিকে অনেক কিছু হারিয়েছে, আবার অন্য দিকে তাঁদের সমাজ ও সংস্কৃতি সমৃদ্ধও হয়েছে। কিভাবে সে লম্বা ব্যাখ্যাতে আজ আর নাই বা গেলাম। আমার সে-দিনের ট্যুর গাইড তাঁর দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নমুনা দেখাতে নিয়ে গেলেন যাদুঘরে। ঘুরে ঘুরে দেখলাম প্রাচীন সব আর্ট ইফেক্টস। যাদুঘরের পাশেই রোমান আমলের গোলাকার গ্লেডিয়েটার-অবাক হয়ে দেখলাম, পাথরের বাঁধানো সেই প্রাচীন যুদ্ধক্ষেত্র প্রায় অক্ষতই আছে। এখানে বন্দি ক্রিত দাসরা বাঘ ও সিংহপুরুষের মত বীরদর্পে হীংস্র বন্য জানোয়ারের সাথে লড়াই করত, প্রাণ দিত। আর চার দিকে গোল হয়ে নিরাপদে বসে রোমানরা কাপুরুষের মত মানুষের সাথে পশুর লড়াই উপভোগ করত, মানবতাকে পদদলিত করত!
শিহেবের সাথে গাড়িতে করে তিউনিস ঘুরতে ঘুরতে দেশটি সম্পর্কে আমার মধ্যে একটা দারুণ ইতিবাচক ধারণা জন্মালো। যদিও আমি অর্থনীতির ছাত্র, তবু আমার জানা ছিল না আফ্রিকার কোনো দেশ এত সুন্দর, এত উন্নত হতে পারে। বন্ধু শিহেবকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তোমরা এত অল্প সময়ে এত এগিয়ে গেলে কেমন করে’? শিহেব জানালেন, সম্ভবত দুই কারণে, প্রথমত, গত দুই যুগ ধরে তাঁদের সরকার উন্নয়ন পরিকল্পনায় শিক্ষা এবং মানব সম্পদের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আসছে। দ্বিতীয়ত, তাঁদের ‘ভৌগোলিক অবস্থান ইউরোপের কাছে এটিও একটি বড় অনুষঙ্গ’- অর্থাৎ ইউরোপের সাথে তিউনিসিয়ার নৈকট্য উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় তাঁদেরকে কিছুটা হলেও বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি আরো বললেন, সকালবেলা মনস্থ করে তাঁরা দুপুরে প্যারিস পৌঁছে যান এবং কাজ সেরে রাতে ফিরেও আসতে পারেন। ইউরোপের সাথে এই ঘনিষ্ট যোগাযোগ তাঁদের জনগণের মাঝে একটি আস্থা এবং প্রতিতির জন্ম দিয়েছে, ‘ইউরোপ যদি পারে তো এত কাছে থেকে আমরা পারব না কেন’।
বুঝতে আমার অসুবিধে হলো না, শিহেব আমাকে যে পথে নিয়ে ঘুরছেন সেটা ‘নিউ তিউনিস’ অর্থাৎ তিউনিসের অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছল এবং নতুন অংশ। নিশ্চয়ই তিউনিসেও ময়লা দুর্গন্ধ, ঘিঞ্জিময় পুরনো অঞ্চলও আছে, আছে গরিবদের থাকার জায়গা, বস্তিতূল্য অঞ্চল। বোধগম্য কারণেই প্রথম দিন তিনি আমাকে সে পথে নিয়ে যাচ্ছেন না। মনে মনে নতুন ঢাকার সঙ্গে নিউ তিউনিসের তুলনা করলাম। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় ১০০’র মধ্যে তিউনিস ৮০ পেলে ঢাকা পাবে বড়জোর ১০ কি ১২, এর বেশি নয়। ২০১৬তে তিউনিসিয়ার গড় মাথাপিছু জিডিপি ছিল বাাংলাদেশের ৪ গুণেরও বেশি। তিউনিসিয়ার শিক্ষার হার প্রায় শতভাগ। এ-সব বিবেচনায় নিয়েও আমি বলতে চাই, বুঝলাম আমরা গরিব, লেখাপড়ায় পিছিয়ে, তার না হয় ঐতিহাসিক কারণ আছে, কিন্তু আমরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় এত পেছনে পড়ে থাকব কেন, এর কারণ কী? সস্প্রতি লন্ডনভিত্তিক ইকনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের এক সমীক্ষায় দেখা যায় পৃথিবীর ১৪০টি জনবহুল নগরের মধ্যে বসবাস যোগ্যতার মানদণ্ডে সবার ওপরে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন এবং সবার নিচে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। আমার প্রিয় ঢাকা শহর। এর আগে ঢাকার অবস্থান ছিল নিচের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে। জিম্বাবুয়ের রাজধানী হারারের একটু ওপরে। এখন আমরা সবার নিচে, অর্থাৎ নোংরামির বিচারে সবার ওপরে। আমার প্রশ্ন, কেন আমাদের এই করুণ দশা, কে দেবে এ প্রশ্নের জবাব, সরকার, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, না তাঁরা কেউ নন। এই কঠিন প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে হবে ঢাকায় বসবাসকারী প্রতিটি নাগরিককে। কেউই এ দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন না। সরকার কিংবা সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে একা একা এতবড় একটি শহরকে পরিষ্কার করে রাখা সম্ভব নয়। এ কাজে সবার দায়িত্ব আছে যাঁর যাঁর অবস্থান থেকে সবাইকে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসতে হবে, ঢাকা শহরের মানসম্মান বাঁচাতে হবে।
ঘোরাঘুরি করে যখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে তখন শিহেব এক দোকান থেকে আমাকে কিছু বোতলের পানি, মিষ্টি ফল, আর শুকনো খাবার কিনে হোটেলে নামিয়ে দিয়ে বাড়ি চলে গেলেন। যাওয়ার সময় তিনি বলে গেলেন, ‘তুমি একটুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে গোসল সেরে ইচ্ছে করলে এখানে এই সব রেস্টুরেন্টে এসে রাতের খাবার খেতে পার’। আমি গোসল করলাম ঠিকই, কিন্তু বেরোতে ইচ্ছে হলো না, সফর ক্লান্তিতে চোখ দুটো বুজে আসছিল। একটি কলা, কয়েক টুকরো বিস্কুট এবং তিন চার ঢোক বোতলের পানি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সাধারণত বিছানা বদলে আমার ঘুমের সমস্যা হয়, কিন্তু সে-রাতে তেমন কোনো অসুবিধা হলো না। অতিরিক্ত ক্লান্তির কারণে এক ঘুমে ভোর বেলা উঠলাম। সকালে হোটেলের বেসমেন্টে নাস্তা খেয়ে সামনের রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ালাম। ভাবলাম, উত্তর আফ্রিকায় প্রথম এসেছি, দেশটি কেমন, তার মানুষজন কেমন, একটু দেখি। হোটেলটি যে সড়কের উপর সেটা অনেকটা ঢাকার মিরপুর রোডের মতন। চওড়া রাস্তা এবং যান চলাচলেও বেশ ব্যস্ত।
রাস্তায় দাঁড়িয়ে চারিদিকে তাকালাম। কয়েকটি জিনিস আমার চোখে ধরা পড়ল। প্রথমত, ছোটবড় বাড়ি, বড় বড় অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং সর্বত্র বিল্ডিংএর ছাদে, ঘরের দেয়ালে টিভির ডিশ অ্যান্টেনা। বুঝলাম সবাই স্যাটেলাইট টিভি দেখেন। উঁচু উঁচু অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং এর ছাদে, বারান্দায় ও বেলকনিতে লোকজন রঙ-বেরঙের ভেজা কাপড় মেলে দিয়েছেন। বুঝলাম এব্যাপারে বাংলাদেশের সাথে একটি মিল আছে। আরেকটা বিষয় আমার নজর কাড়ল, সেটা হলো রাস্তায় রিক্সা বা ওই জাতীয় কোনো ধীর গতির যানবাহন নেই। সবাই গাড়িতে চলছে। আরো ভালো করে খেয়াল করে যা দেখলাম তাতে অবাক না হয়ে পারলাম না। গুনে দেখলাম প্রতি ১০টি গাড়ির মধ্যে ৬টির স্টিয়ারিং হুইল ধরে যিনি বসে আছেন তিনি একজন নারী। অর্থাৎ তিউনিসিয়ার নারী সমাজ খুব অগ্রসরমান, তাঁরা রান্নাঘরের চার দেয়ালে আবদ্ধ নয়, ঘরের বাইরেও তাঁদের আরেকটি জগৎ আছে যেখানে তাঁরা কাজ করেন, নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে চলাফেরা করেন। চেহারা সুরতে, চলনে বলনে এবং বেশ ভূষায় তিউনিসীয় নারীগণ একেবারে ইউরোপীয়দের মতন। আধুনিক ভাষায় যাকে বলে স্মার্ট।
কতক্ষণ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকার পর হোটেলের উল্টোদিকে কিছুদূর হাঁটলাম। ওদিকে দেখলাম একটি বিশাল আবাসিক এলাকা। সবই বড় ও মাঝারি সাইজের পাকা বাড়ি। সবকটা বাড়িই দেয়াল ঘেরা। ভেতরে বাড়ির সামনে আছে সুন্দর সুন্দর ফুলের বাগান। দেখে মনে পড়ল ষাটের দশকের ধানমন্ডির কথা। ওই সময় ঢাকার ধানমন্ডি এ-রকমই সুন্দর ছিল-একেবারে ছবির মতন। আবাসিক এলাকায় লোক চলাচল তেমন নেই, নেই ফেরিয়ালাদের হাঁকডাক ও ফকির মিসকিনদের আহাজারি। মাঝে মাঝে দেখলাম বাড়ির সামনে বাগানে লোকজন ফুলগাছের পরিচর্যা করছেন। দু’তিন রাস্তা পরপর মোড়ের কোণায় কোণায় ছোট ছোট দোকান। এ-সব দোকানে চাল, ডাল, ডিম, রুটি, তেল, পানি, তরিতরকারি, ফলমূল, কুকি-বিস্কুট, চকলেট, ললিপপ ইত্যাদি পাওয়া যায়। এ-ভাবে হাঁটতে হাঁটতে বুঝতে পারলাম রোদের তেজ বাড়ছে, আর বেশি সময় বাইরে থাকা যাবে না, তাই সোজা হোটেলে ফিরে এলাম।
দুপুরের দিকে শিহেব আসলেন। আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিয়ে গেলেন। একটি ক্লাসে গেলাম। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বললাম। তাদের সাথে পরিচিত হলাম। তাদের কতাবার্তা ও চিন্তা ভাবনার কথা জেনে অবাক হলাম! তারা খুব চটপটে, আধুনিক। আমেরিকার প্রতি তাদের কৌতূহলের সীমা নেই, তবে তারা একেবারেই অন্ধ আমেরিকা অনুসারীও নয়। কথাবার্তায় পরিশীলিত, কাপড়ে চোপড়ে ভদ্র ও শালীন। তারা চারটি ভাষায় স্বচ্ছন্দে কথা বলতে জানে। আরবি, ফরাসি, ইংরেজি এবং এই তিন ভাষার সংমিশ্রণে চতুর্থ আরেক ভাষা যার কোনো নাম নেই। বাংলাদেশের স্কুল-কলেজে চারটি নয়, তিনটি নয়, মাত্র দু’টি ভাষা শেখানো হয়, তাও কতিপয় শহুরে স্কুল ছাড়া আমাদের শিক্ষার্থীরা ইংরেজি তো জানেই না, বাংলাটাও ঠিকমত রপ্ত করতে পারে না। সব মিলে উত্তর আফ্রিকার একটি ছোট্ট দেশ তিউনিসিয়ার সাথে আমার জন্মভূমি বাংলাদেশের তুলনা করে হতাশ হলাম। মনে বড় কষ্ট পেলাম। ভাবলাম, আমরা কখন এমন হব? এ-কথা বললেও ‘তিউনিয়া’ কিন্তু আমাদের আদর্শ নয়, আমরা বৈষয়িক উন্নতি, নৈতিক ও চারিত্রির বলে দুনিয়ার সবাইকে ছাড়িয়ে যেতে চাই। এই হোক আমাদের অঙ্গীকার!
লেখক: আবু এন. এম. ওয়াহিদ; অধ্যাপক - টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি
এডিটর : জার্নাল অফ ডেভোলাপিং এরিয়াজ
Email: awahid2569@gmail.com