যে কারণে বাদ পড়লেন মান্নান
আলী আদনান
প্রকাশিত : ০৭:১০ পিএম, ১০ এপ্রিল ২০১৮ মঙ্গলবার
ফাইল ছবি
`দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ` বলে পরিচিত হলেও গাজীপুরে বিএনপিকে অবহেলা করার সুযোগ নেই। ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনে তা প্রমাণ হয়েছে বারবার। গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনটাও ব্যতিক্রম নয়। সারা দেশে যখন আওয়ামী লীগের শাসন তখন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী এমএ মান্নান বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লাহ খানকে;যিনি ছিলেন টঙ্গী পৌরসভার টানা তিনবারের দক্ষ মেয়র।
এবারও বিএনপি`র কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এমএ মান্নান মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন বঞ্চিত হতে হয় তাকে। অনেক জল্পনা কল্পনার পর দল মনোনয়ন দেয় দলের অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশী হাসান উদ্দিন সরকারকে। হাসান উদ্দিন সরকার বিএনপি`র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য।
গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এমএ মান্নান মেয়র নির্বাচিত হলেও পুরো মেয়াদের বেশীরভাগ সময় তাকে থাকতে হয় চেয়ার বাইরে। কখনো জেলে কখনো মামলা-হুলিয়া নিয়ে চেয়ারের বাইরে। ৫ বছর মেয়াদের প্রায় অর্ধেকটা সময় তার কেটেছে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্টে।
বিরোধী দলের রাজনীতিবিদ হিসেবে একদিকে মেয়র হয়েও ছিলেন কোনঠাসা অন্যদিকে মামলা হামলায় ছিলেন জর্জরিত। ত্রিশটিরও বেশী মামলা এখনো তার কাঁধে। তবে সাধারণ ভোটারদের মাঝে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। এরপরও দল তাকে কেন মনোনয়ন দিলো না, সে প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে।
বর্তমান মেয়র এমএ মান্নানকেকে মনোনয়ন না দিয়ে হাসান উদ্দিন সরকারকে কেন মনোনয়ন দেওয়া হলো এমন প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় বিএনপি`র সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন বলেন, এমএ মান্নান দলের ত্যাগী নেতা। রাজনীতির দীর্ঘ দিনের চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে তিনি বিএনপির সঙ্গে আছেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে বেশ। মূলত রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন তিনি। এ থেকে নানা ধরণের অসুধ বাসা বেধেছে তার শরীরে। সেজন্য সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মতো কঠিন চ্যালেঞ্জে আমরা তাকে মাঠে নামাতে চাইনি। তবে এটাও সত্য, নির্বাচনে তার সমর্থন ছাড়া বিজয় কঠিন।
প্রায় একই কথা বললেন গাজীপুর জেলা বিএনপি`র সিনিয়র যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সোহরাব উদ্দিন। একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে তিনি বলেন, আমরা হাসান উদ্দিন সরকারকে নিয়ে এমএ মান্নানের বাসায় গিয়েছিলাম। মান্নান সাহেব হাসান সরকাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং নির্বাচনে পুরো সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। সোহরাব উদ্দিন এ সময় বলেন, এমএ মান্নান শারীরিক ভাবে অসুস্থ হওয়ায় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দল হাসান সরকারকে মনোনয়ন দিয়েছে। এমএ মান্নানের যে জনপ্রিয়তা আছে তা বিএনপি`র ভোট ব্যাংক হিসেবে কাজে লাগবে।
অধ্যাপক এমএ মান্নান ১৯৭৮ সাল থেকে বিএনপি`র সঙ্গে জড়িত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত রসায়নে এমএসসি পাস করা এমএ মান্নান কর্মজীবন শুরু করেন স্থানীয় টঙ্গী সরকারি কলেজে। পরে আজিমুদ্দিন সরকারি কলেজে অধ্যাপনা করেন দীর্ঘসময়। আদর্শ শিক্ষক ও গরীব ঘরের সন্তান হওয়ায় সাধারণ মানুষের মন তিনি সহজেই জয় করেন। ব্যাক্তিগত সারল্য, শিক্ষা, মানুষের সঙ্গে মেশার অসাধারণ গুণ-এ তিনের সমন্বয়ে মান্নান গাজীপুরে অল্প সময়েই জনপ্রিয় নেতা হয়ে উঠেন। তাই তো গ্রাম সরকার থেকে এমপি, প্রতি মন্ত্রী ও শেষে মেয়র হন।
অধ্যাপক এম এ মান্নান সাংগঠনিকভাবে গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক, সভাপতি, কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এমএ মান্নান ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ( বিএনপি) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তখন প্রথমে তাকে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও পরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী করা হয়। দীর্ঘ দিনের পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ মান্নান মনোনয়ন না পাওয়ায় তার সমর্থকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভও বিরাজ করছে। জেল-জুলমের শিকার হওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্র মান্নানকে কেন মূল্যায়ন করলো না এ নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
কেউ কেউ বলছেন, প্রথম দিকে মনোনয়নের বিষয়ে উদাসীন ছিলেন মান্নান। যে কারণে নির্বাচনী ঢামাঢোল যখন বইছে তখন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন মান্নান। ওইসময় স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেন নি। এমনকি ফোনও রিসিভ করেন নি। আবার কেউ কেউ বলছেন, মান্নান মনোনয়নের বিষয়ে এতোটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, কেন্দ্র ও তৃণমূল কারো সঙ্গে নির্বাচনের আগের এক মাসে তেমন যোগাযোগ করেননি। মান্নান ধরেই নিয়েছিলেন গাজীপুর সিটিতে তাঁকে ছাড়া বিএনপিতে অন্য কোনো বিকল্প তৈরি হয়নি।
তবে এম এ মান্নানের মনোনয়ন না পাওয়ার জন্য তার দুর্বলতা নয়, বরং শারিরীক অসুস্থ্যতাকেই বড় করে দেখছে গাজীপুর বিএনপি। যেমনটি ফুটে উঠেছে গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইয়্যেদুল আলম বাবুলের বক্তব্যে। তিনি একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, এমএ মান্নান মনোনয়ন না পাওয়া মানে তার রাজনীতি শেষ হয়ে যাওয়া নয়। তাকে এখনো কোনো ভাবে অবহেলা করার সুযোগ নেই। বরং বিরোধী দলের রাজনীতিতে দৌড় ঝাঁপ করার জন্য যে শারীরিক সামর্থ্য দরকার তা মান্নান সাহেবের না থাকায় দল হাসান উদ্দিন সরকারকে মনোনয়ন দিয়েছে। তবে নির্বাচনে বিজয়ের লক্ষে তার সমর্থন সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন।
/ এআর /