ঢাকা, মঙ্গলবার   ২২ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ৮ ১৪৩২

কোটা সংস্কার

সংক্ষুব্ধ ছাত্রদের বিভক্তি দূর হলো মতিয়া চৌধুরীর উক্তিতে

প্রকাশিত : ০৮:৩৬ এএম, ১১ এপ্রিল ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ০৯:২৩ এএম, ১১ এপ্রিল ২০১৮ বুধবার

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া-না-যাওয়া নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একটা বিভক্তি তৈরি হলেও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর এক উক্তিতে ক্ষুব্ধ হয়ে আবার এক হয়ে গেছেন তারা। যে নেতারা সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করার পর আন্দোলন স্থগিত করেছিলেন- তারা এখন বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

এই নাটকীয় মোড় পরিবর্তন ঘটেছে গতকাল মঙ্গলবার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দিনের চেহারাই ছিল অন্যরকম। দিনের প্রথমদিকে সেখানে চলছিল কোটা-সংস্কার প্রশ্নে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার পক্ষে বিপক্ষে সমাবেশ আর পাল্টা সমাবেশ।

গত রোববার ছাত্র অধিকার পরিষদের যে নেতারা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন তারা সরকারের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে বিক্ষোভ স্থগিত করেছিলেন। কিন্তু এ সমঝোতা বিক্ষোভরত ছাত্রদের একাংশ মেনে না নিলে দৃশ্যত: ছাত্র অধিকার পরিষদেই একটা বিভক্তি দেখা দেয়।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্তের বিরোধী একদল শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নেন। এদের মধ্যে একজন ছাত্রী বলছিলেন, সরকারের বক্তব্যে তারা ভরসা পাচ্ছেন না এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যেতে চান।

তারা দাবি বাস্তবায়নে সরকারের একমাস সময় নেওয়া নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন।

মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনাকারী নেতাদের একজন মোহাম্মদ উজ্জ্বল বলেন, তারা প্রধানমন্ত্রী আশ্বাসের ওপর আস্থা রেখে আন্দোলন স্থগিত করেছেন। যারা এর পরও আন্দোলন করছে তাদের ভিন্ন কোন উদ্দেশ্য থাকতে পারে, এর মধ্যে বিভিন্ন চক্রান্ত ঢুকে গেছে বলে মনে হচ্ছে।

কিন্তু আন্দোলন চালানোর পক্ষের ছাত্রদের একজন নেতা এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, তাদের অরাজনৈতিক আন্দোলনকে রাজনৈতিক চেহারা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।

মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে পাল্টা সমাবেশ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থক ছাত্রলীগ। তাদের নেতারা বলছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ভিসির বাসভবনে হামলা ও নানা রকম গুজব ছড়ানোর পেছনে ষড়যন্ত্র আছে।

বিকেলেই দেখা যায় পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন। সরকারের মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর এই আন্দোলন সম্পর্কে সংসদে দেওয়া এক বক্তব্যে ছাত্রদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। যারা আন্দোলন স্থগিত করেছিলেন- তারাই আবার আন্দোলনরতদের সঙ্গে মিলে গিয়ে আন্দোলনের নেতৃত্ব নিয়ে নেন। ফলে ছাত্র অধিকার পরিষদে আগে একটা বিভক্তি তৈরি হলেও মতিয়া চৌধুরীর বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে আবার তারা এক হয়ে গেছেন।

পরিষদের একজন নেতা মোহাম্মদ রাশেদ খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, তারা সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকের পর সরকারি আশ্বাসের ভিত্তিতে আন্দোরণন স্থগিত করেছিলেন, কিন্তু মতিয়া চৌধুরীর বক্তব্যে তারা ক্ষুব্ধ।

তারা দাবি করেন, মতিয়া চৌধুরীকে বিকেল পাঁচটার মধ্যে এ জন্য দু:খ প্রকাশ করতে হবে। শেষ খবর পর্যন্ত মতিয়া চৌধুরীর দিক থেকে অবশ্য কোন দু:খ প্রকাশের খবর আসেনি।

এ ছাড়া অর্থমন্ত্রী এ. এম. এ. মুহিতের একটি বক্তব্যও ছাত্রদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করে- যাতে তিনি বলেন, কোটা সংস্কারের ব্যাপারটা বাস্তবায়নের প্রশ্ন আসবে বাজেটের পর।

এ নিয়ে ছাত্র নেতারা বলছেন, তাদের মধ্যে সরকারের অবস্থান নিয়েই সংশয় তৈরি হচ্ছে- কারণ সরকার একদিকে ছাত্রনেতাদের আশ্বাস দিচ্ছেন, অন্যদিকে সিনিয়র মন্ত্রীরা আন্দোলনকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দিচ্ছেন।

ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতারা বলছেন, সে কারণেই তারা আবার আন্দোলনে ফিরে গেছেন। তারা বলছেন, এখন প্রধানমন্ত্রীকে ঘোষণা দিতে হবে যে তাদের এই দাবির ব্যাপারে কি ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। এটা না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে।

তারা ঘোষণা করেন, ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট এবং ক্লাস বর্জন করা হবে। এ ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যে সাতটা পর্যন্ত ক্যাম্পাসগুলোতে অবস্থান এবং অবরোধ পালন করা হবে।

সূত্র: বিবিসি

একে/