ঢাকা, মঙ্গলবার   ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ১৬ ১৪৩১

রোহিঙ্গা হত্যায় মিয়ানমারের ৭ সেনার কারাদণ্ড

প্রকাশিত : ১১:৩৪ এএম, ১১ এপ্রিল ২০১৮ বুধবার

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা হত্যার দায়ে দেশটির সাত সেনাকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রাখাইন প্রদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ১০ রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যার দায়ে তাদের এ সশ্রম কারাদণ্ড দেন দেশটির একটি আদালত। 

জানা গেছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে রাখাইনের রাজধানী সিত্তে থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার উত্তরে ইন দিন গ্রামে গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়। সেখানে ১০ রোহিঙ্গার লাশ ছিল। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে, সাত সেনা কর্মকর্তা ওই ১০ রোহিঙ্গা হত্যার সঙ্গে জড়িত। তাই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

মিয়ানমারের সেনা প্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের ফেসবুক পাতায় প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সামরিক আদালতে দণ্ডিত এসব সেনা সদস্যদের ১০ বছর কারাভোগের পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলে কঠোর পরিশ্রমের কাজেও নিযুক্ত থাকতে হবে।

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের হত্যা-ধর্ষণ ও ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়ায় বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য করা হয় প্রায় ৬ লাখ ৯২ হাজার রোহিঙ্গা। গত বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে রাখাইনের উত্তরাঞ্চলীয় গ্রাম ইনদিনে সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীরা ১০ রোহিঙ্গাকে গুলি করে হত্যা করে। তাদের রাখা হয় গণকবরে। ঘটনার সরেজমিন অনুসন্ধানে নেমেছিলেন রয়টার্সের দুই সাংবাদিক। ডিসেম্বরে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এরপর অভিযোগ আনা হয় দাফতরিক গোপনীয়তা ভঙ্গের আইনে। ফেব্রুয়ারিতে কর্তৃপক্ষ রয়টার্সকে জানায়, ঘটনার অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তবে কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে রয়টার্সের সাংবাদিকদের দাফতরিক গোপনীয়তা ভঙ্গের সঙ্গে ওই তদন্ত সম্পর্কহীন বলে দাবি করা হয়। সেই তদন্তের ভিত্তিতে দোষী সাব্যস্ত ৭ সেনাকে কারাদণ্ড দিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৪ আগাস্ট মিয়ানমার পুলিশের ৩০টি তল্লাশি চৌকি ও একটি সেনা ক্যাম্পে হামলার পর ব্যাপক অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ফলে নিজ দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে শুরু করে রোহিঙ্গারা। মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের শত শত গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। শত শত নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে তাদের উৎখাত করার অস্ত্র হিসেবে। জাতিসংঘ সেনা অভিযানকে আখ্যা দিয়েছে জাতিগত নিধন বলে। এছাড়া রয়টার্সের এক অনুসন্ধানে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ওই ১০ জনকে হত্যা করেছে বলে ওঠে আসে। তবে সেনাবাহিনীর গণহত্যা বা জাতিগত নিধন অভিযানের কথা বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে মিয়ানমারের নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চির সরকার। কিন্তু গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিত্তি থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার উত্তরে উপকূলীয় গ্রাম ইন দিনে গণকবরে ১০ জন রোহিঙ্গার মৃতদেহ পাওয়া যায়। বিষয়টি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও স্বীকার করা হয়। অবশেষে তার দণ্ডও দেওয়া হলো।

সূত্র: রয়টার্স

একে// এআর