উদ্বোধনের ৪ বছর পার
এখনো আলোর মুখ দেখেনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উন্নয়ন অধিদফতর
আলী আদনান
প্রকাশিত : ১১:২৮ পিএম, ১২ এপ্রিল ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১০:৫৭ এএম, ১৬ এপ্রিল ২০১৮ সোমবার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করার পর ৪ বছর পার হলেও এখনো আলোর মুখ দেখেনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উন্নয়ন অধিদপ্তর। অথচ প্রতিবন্ধী ও তাদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন সমূহের প্রাণের দাবি এ অধিদপ্তরের বাস্তবায়ন।
প্রতিবন্ধী মানুষের ক্ষমতায়ন ও অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচী গ্রহণে কোনো উদ্যোগ না থাকায় জাতিসংঘ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার সনদে এই নির্দেশ দেয়। তারই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালের ৪ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসে এ অধিদপ্তর উদ্বোধন করেন।
জাতিসংঘ ব্যক্তি অধিকার সনদ বিশ্বে প্রতিবন্ধী মানুষের উন্নয়ন দর্শন ও যুগান্তকারী পরিবর্তনে বিশ্বাসী। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ এই সনদ অনুসমর্থন করে। এছাড়াও ৪৬ টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ফোকাল পয়েন্ট নিয়োগ করে। কিন্তু সনদ অনুযায়ী সে সময় অন্য কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরে সনদের আলোকে আইন প্রনয়ণ এবং তা বাস্তবায়নে প্রশাসনিক কাঠামো গঠণ করেন। সেই অনুসারে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার ও সুরক্ষা আইন- ২০১৩ ও নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন- ২০১৩ পাস হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগে ২০১০ সালে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনকে অধিদপ্তরে রূপান্তরের ঘোষণা দেন। একই বছরের আগস্ট মাসে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অধিদপ্তরের সাংগঠনিক কাঠামো অনুমোদন দেয়। সরকার তখন জাতীয় বিশেষ শিক্ষা কেন্দ্রের প্রাঙ্গনে অধিদপ্তরের জন্য নয় তলা ভবন নির্মাণ শুরু করে। নানা জটিলতা কাটিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় তার অনুমোদন দেয়। কিন্তু বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নের প্রকল্প বাস্তবায়ন সহ নানা জটিলতায় প্রক্রিয়া থেমে যায়।
২০১৬ সালে `প্রতিবন্ধী মানুষের ক্ষমতায়নে চাই প্রতিনিধিত্ব` শীর্ষক এক সেমিনারে ডেপুটি স্পীকার ফজলে রাব্বী মিয়া প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নে গড়িমসির জন্য আমলাতন্ত্রকে দায়ী করেন।
যদি সিআরপিডি অনুসমর্থনকারী আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত ২০১২ সালের মে মাসে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ক্ষমতায়ন অধিদফতর চালু করে।
সামাজিক নিরাপত্তা খাতকেই প্রতিবন্ধী মানুষের একমাত্র খাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অথচ প্রতিবন্ধী মানুষদের সংগঠিত করা, নেতৃত্বের বিকাশ, দক্ষতা বৃদ্ধি, শিক্ষা, কর্মসংস্থান সহ উদ্যোক্তা বিকাশে যাতায়াত, সর্বত্র প্রবেশগম্যতা, নিশ্চিতের জন্য এখনো কার্যক্রম পরিচালণার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
বিভিন্ন প্রতিবন্ধী সংগঠনের নেতারা দাবি করছেন, প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে মাঠ পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য, তদারকি বা সমন্বয়ের জন্য সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো একক প্রতিষ্ঠান নেই।
কিন্তু জাতিসংঘ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার সনদ অনুযায়ী প্রতিবন্ধীদের জন্য আইন বাস্তবায়ন, প্রচলিত আইন সমূহের সামঞ্জস্যকরণ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিবন্ধী মানুষের ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নে পরিকল্পনা ও নীতিমালা প্রনয়নে কর্মসূচী তদারকি, সমন্বয় ও পরিবীক্ষণ করতে এ অধিদফতর প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য।
প্রতিবন্ধী সংগঠন বি- স্ক্যান এর সভাপতি সাবরিনা সুলতানা একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, প্রতিবন্ধী অধিদফতর বাস্তবায়িত হলে বিভিন্ন বিষয়ে কর্মী গড়ে তোলা সহজ হবে। একই সাথে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংবেদনশীল বাজেট কাঠামো গড়ে তোলা সহজ হবে।
পিএনএসপি- এর সভাপতি সালমা মাহবুব বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উন্নয়ন অধিদফতর প্রতিষ্ঠিত হলে, বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অভিযোগ প্রদান ও প্রতিকার সহ জাতীয় সমন্বয়ের ক্ষেত্রে এই অধিদফতর ভূমিকা রাখবে।
সংবিধানে দেশের সকল নাগরিকের সমঅধিকার দিলেও সর্বস্তরে প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার এখনো নিশ্চিত হয়নি। প্রতিবন্ধী মানুষের ক্ষমতায়ন ও অধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উন্নয়ন অধিদফতর প্রতিষ্ঠায় সরকার গুরুত্ব দেবে এটাই প্রত্যাশা।
টিকে