ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

১দিন খাইলে ২দিন অনাহারে; তার আবার নববর্ষ!

আলী আদনান

প্রকাশিত : ০৯:১২ পিএম, ১৪ এপ্রিল ২০১৮ শনিবার

আসমা আক্তার অভাব অনটনে হারিয়েছেন স্বাস্থ্য। লড়াই করতে করতে হারিয়েছেন মুখের লাবণ্য। ছোট বেলায় দেখতে মোটেও এমন ছিলেন না। এমনটাই দাবি করলেন এ প্রতিবেদকের কাছে।

তার ভাষ্য অনুযায়ী ছোট বেলায় সুন্দর ছিলেন। যতোটা সুন্দর থাকলে এলাকার ছেলেরা বিরক্ত করে, বাড়ীতে ঘন ঘর বিয়ের প্রস্তাব আসে। তার চেয়েও বেশি সুন্দরী ছিলেন।

বাবা কলিম উদ্দিন ছিলেন দিনমজুর। ঢাকার পাশে মুন্সীগঞ্জে নদীর পাড়ে ছিল কলিমউদ্দিনের ঘরভিটা। নদী যখন ঘর ভিটা গ্রাস করলো তখন এক প্রকার বাধ্য হয়েই কলিম উদ্দিন তার মেয়েকে এলাকার জাহাঙ্গীর হোসেনের সাথে বিয়ে দেন।

না দিয়ে উপায় ছিলনা। জলে বাস করতে তো আর কুমিরের সাথে লড়াই করা যায়না। তবে এলাকার সবাই বলেছিল, বিয়ের পর আসমা আক্তার সুখী হবে।

`সুখ`! শব্দটি উচ্চারণ করে ফ্যাকাশে হাসি হাসেন আসমা আক্তার। তার সাথে কথা হচ্ছিল রাজধানী শাহবাগের মোড়ে বসে। পরনে আধময়লা কাপড়। দু`পাশে দুটো শিশু। একটা ছ`সাত বছরের ছেলে। অন্যটা তিন বছরের মেয়ে। সামনে ঝুড়ি ভর্তি ডুগডুগি। নববর্ষের শোভাযাত্রায় আসা মানুষ ডুগডুগি দরদাম করছে। কেউ কেউ দাম শুনে ধমক দিচ্ছেন। আসমা আক্তার দাম চায় বিশ টাকা। ক্রেতারা দিতে চায় পনের টাকা।

আসমা আক্তার বলেন, "প্রত্যেকটা ডুগডুাগি কিনে আনি পনের টাকা থেকে আঠার টাকায়। বিশ টাকা করে না বেচলে লাভ আসবে কোথেকে?

আসমার বিয়ের পর কয়েক বছরের ব্যবধানে তিন সন্তানের মা হন। দু`মেয়ে এক ছেলে। বড় মেয়েটির বয়স এখন বারো বছর। স্বামী কিছুই করতো না। বিয়ের পর থেকে আসমাকে কিছু না কিছু করতে হতো। কখনো মানুষের বাসার বুয়া, তো কখনো মিলের শ্রমিক। এতো কিছুর পরও তার স্বামী তাকে মারধর করতো বলে অভিযোগ করেন তিনি। কখনো মদের টাকা, কখনো অন্য খরচের জন্য মার খেতে হতো থাকে। এরপরও স্বামীকে ধরে রাখতে পারেননি আসমা।

এখন ছাই বিক্রি করেন বলে জানান আসমা। মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন মিল থেকে বস্তা প্রতি দু`শত টাকায় ছাই কিনেন। সেই ছাই ঢাকায় বিক্রি করেন বস্তা প্রতি তিন`শ টাকা। আগে হাড়ি পাতিল ধোয়ার কাজে মানুষ ছাই ব্যবহার করলেও এখন কেউ করেনা। তাই আসমার ছাইয়ের ব্যবসাও তেমন চলেনা।

মাথার উপর গনগনে রোদ। চারপাশে নববর্ষকে বরণ করার উৎসব। নববর্ষ কেমন লাগছে?- এমন প্রশ্নের জবাবে মাথার ঘাম মুছতে মুছতে আসমা বলেন, এক দিন খেলে দু`দিন খেতে পাইনা। আমাদের আবার নববর্ষ!

টিকে