মক্কা মসজিদ বিস্ফোরণ মামলায় সব আসামী খালাস
প্রকাশিত : ০৬:৫৯ পিএম, ১৬ এপ্রিল ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ১১:২৫ এএম, ১৭ এপ্রিল ২০১৮ মঙ্গলবার
ভারতের হায়দ্রাবাদ শহরের ঐতিহাসিক মক্কা মসজিদে ২০০৭ সালের বিস্ফোরণের ঘটনায় ৯ জন নিহত ও ৫৮ জন আহত হয়েছিলেন। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় স্বামী অসীমানন্দসহ অভিযুক্ত পাঁচজনকেই আজ সোমবার বিশেষ এনআইএ আদালত খালাস দিয়েছেন।
ওই মামলায় মোট ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। এদের মধ্যে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়, বাকিরা এখনও পলাতক। অভিযুক্তরা সবাই ছিলেন `অভিনব ভারত` নামে একটি কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠনের সদস্য। তাদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় স্বামী অসীমানন্দ ‘আজমির শরিফ দরগা’ ও ‘সমঝোতা এক্সপ্রেসে’ বিস্ফোরণের ঘটনাতেও অভিযুক্ত।
রায়ের পর ভারতের শাসক দল বিজেপি দাবি করেছে, `হিন্দু সন্ত্রাসবাদে`র যে তত্ত্ব কংগ্রেস আমলে অবতারণা করা হয়েছিল তা এখন মুখ থুবড়ে পড়ল। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ মোদি সরকারের আমলে এ মামলায় নিরপেক্ষ তদন্ত হয়নি এবং বিস্ফোরণে হতাহতরা বিচারও পাননি।
ভারতে তথাকথিত হিন্দু সন্ত্রাসবাদের মুখ হিসেবে যাকে ধরা হয়, সেই স্বামী অসীমানন্দর আসল নাম নবকুমার সরকার, তিনি পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার বাসিন্দা।
বাঙালি এই গেরুয়াধারী সন্ন্যাসী বহুদিন পশ্চিম ও মধ্য ভারতে আদিবাসীদের মধ্যে কাজ করেছেন, এবং মক্কা মসজিদ, আজমির শরিফ ও সমঝোতা এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণের তিনটি ঘটনাতেই তিনি ছিলেন মূল অভিযুক্ত।
এর মধ্যে সমঝোতা এক্সপ্রেস মামলায় তিনি জামিনে আছেন। আর আজমির মামলায় খালাস পাওয়ার পর আজ মক্কা মসজিদ মামলাও তাকে আদালত নির্দোষ ঘোষণা করল।
অভিযুক্তদের কৌঁসুলি জানান, অসীমানন্দসহ মোট পাঁচজনই রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু বিচারকরা সব সাক্ষ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখে ঘোষণা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগও প্রমাণ করা যায়নি। এর ফলে আদালত তাদের নির্দোষ ঘোষণা করেছে।
ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি গত সাত বছর ধরে এ মামলার তদন্ত করেও তারা অভিযোগ দাঁড় করাতে পারেনি। আদালত সে কথাই স্পষ্ট করে বলেছে।
কংগ্রেস নেতা গুলাম নবী আজাদ এ রায়ের পর বলেন, সরকার যে নিজের ইচ্ছেমতো এসব সংস্থাকে ব্যবহার করছে আজকের রায় তার আরো একটি প্রমাণ।
আজাদ বলেন, আমরা একের পর এক ঘটনায় দেখছি বিরোধী নেতাদের ভয় দেখাতে বা হেনস্থা করতে, সত্যকে মিথ্যা বা মিথ্যাকে সত্য বানাতে এই সব সংস্থাকে সরকার কাজে লাগাচ্ছে। আর এটা চলছে এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই।
তিনি বলেন, এতদিন অন্তত বিচারবিভাগের ওপর মানুষের ভরসা ছিল। জানি না সেটাও এবার কোথায় যাবে!
হায়দ্রাবাদের এমপি আসাদুদ্দিন ওয়াইসিও টুইট করে বলেছেন, মোদি সরকারের আমলে মক্কা মসজিদ মামলায় একের পর এক সাক্ষী ঝামেলায় পড়েছেন। এমন কি রাষ্ট্রপক্ষ অভিযুক্তদের জামিনের বিরোধিতা পর্যন্ত করেনি।
বিজেপি অবশ্য রায় ঘোষণার কয়েকঘন্টা পরই দিল্লিতে বিশেষ সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবি করেছে, আজকের রায় কংগ্রেসি ষড়যন্ত্রের এক কড়া জবাব।
বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্র সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কংগ্রেসের জয়পুর অধিবেশনে তৎকালিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার সিন্ধে হিন্দু সন্ত্রাসের কথা প্রথমবার উচ্চারণ করে হাজার কোটি বছরের হিন্দু সভ্যতাকে প্রথম অপমান করেছিলেন।
সেদিন মঞ্চে উপবিষ্ট প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং কিংবা সোনিয়া-রাহুল গান্ধীরা কেউ তার প্রতিবাদ করেননি। ধর্মীয় তোষণের রাজনীতি করার জন্য তারা সেদিন যে দেশকে বদনাম করতেও পিছপা হননি। আজ সেই ষড়যন্ত্রই ফাঁস হয়ে গেল।
বিজেপির কট্টরপন্থী এমপি সুব্রহ্মণ্যম স্বামী বলছেন, সোনিয়া-রাহুল-চিদম্বরম হিন্দু সন্ত্রাসের কথা বলে হিন্দুবিরোধী চক্রান্ত করেছিলেন, সেটা এখন পরিষ্কার।
২০১০ সালে মক্কা মসজিদ মামলার চার্জশিটে সিবিআই বলেছিল, হিন্দুদের মন্দিরে ও তাদের ওপরে একের পর এক ইসলামী হামলার প্রতিশোধ নিতেই নাকি অসীমানন্দসহ অন্য অভিযুক্তরা এ হামলার পরিকল্পনা করেছিল।
কিন্তু বিস্ফোরণের এগারো বছরের মাথায় এসে সরকারের এক সংস্থার তদন্তের ভিত্তিতে সেই অভিযুক্তরা খালাস পেয়েছেন। শুধু রয়ে গেল হিন্দু সন্ত্রাসের তত্ত্ব নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক।
হায়দ্রাবাদ শহরের প্রতীক বিখ্যাত তোরণ চারমিনারের কাছে এই মসজিদটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয় ১৬১৬-১৭ সালে। সেটি ছিল সুলতান মুহাম্মদ কুতুবের রাজত্বকাল। কুতুব শাহী সুলতানেরা ১৫১৮ সাল থেকে ১৬৮৭ সাল পর্যন্ত দাক্ষিণাত্যের গোলকোন্ডা রাজ্য শাসন করেছেন। সূত্র: বিবিসি
আর