ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

জাবিতে শিক্ষকদের হাতাহাতির ঘটনায় পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি

জাবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৮:২৫ পিএম, ১৭ এপ্রিল ২০১৮ মঙ্গলবার

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের দু’গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এঘটনার জেরে উভয় পক্ষ মঙ্গলবার সকাল থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেছে। কর্মসূচির ফলে প্রশাসনিক ও একাডেমিক সকল কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

এর আগে ভোর সাড়ে চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশমাইল এলাকায় পরিবহন ডিপোর সামনে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম এবং সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরের অনুসারী শিক্ষকদের মধ্যে এ হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপাচার্য ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট-১৯৭৩, স্ট্যাটিউট ও সিন্ডিকেট পরিচালনা বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ভোর চারটার দিকে শরীফ এনামুল কবিরের অনুসারী ৬জন শিক্ষক পরিবহন ডিপোর সামনে অবস্থান নেন।

এসময় পরিবহন ডিপোর ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে অধ্যাপক ফারজানার অনুসারী শিক্ষকরা সেখানে উপস্থিত হয়ে তালা খুলে দেওয়ার অনুরোধ জানায়। এসময় তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয় এবং একপর্যায়ে উভয় গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

শরীফ এনামুল কবিরপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক মো. শাহেদুর রশিদ বলেন, ‘উপাচার্যের অবৈধ নিয়োগের প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ ধর্মঘট পালন করতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিসহ উপাচার্যপন্থী প্রায় ২৫ জন শিক্ষক এসে আমাদের উপর ন্যাক্কারজনক হামলা চালায়। এতে ৬জন শিক্ষক লাঞ্ছিত হয়।’

এদিকে উপাচার্যপন্থি শিক্ষক ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের নবনিযুক্ত প্রভোস্ট অধ্যাপক মো. আব্দুল্লাহ হেল কাফী বলেন, ‘আমরা পরিবহন ডিপোতে উপস্থিত হয়ে তাদের তালা খুলে দিতে বললে আমাদের দুজন শিক্ষকের ওপর তারা হামলা চালায়। পরে আমরা উভয় পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করি।’

পরে উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে উপাচার্যকে জানাতে আন্দোলনকারী প্রায় ১৫ জন শিক্ষক উপাচার্যের বাসভবনে দেখা করেন। এসময় উপাচার্য বলেন, ‘শিক্ষকদের মধ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখনি কাউকে দোষী বলা ঠিক হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রভোস্টদের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তারা আমাকে প্রশাসনিক কোনো কার্যক্রমে সহযোগিতা না করে প্রশাসনের বিপক্ষে নানা রকম কার্যক্রম পরিচালনা করায় তাদের অব্যাহতি দিয়ে নতুন প্রভোস্ট সাময়িক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’

এদিকে দু’পক্ষের হাতাহাতির ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে আহবায়ক হিসেবে রয়েছেন-বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক হারুণ অর রশীদ খান। অন্য দুই সদস্যরা হলেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার (টিচিং) মোহাম্মদ আলী।

অন্যদিকে তদন্ত কমিটি প্রত্যাখ্যান করে আগামীকাল বেলা ১২টা পর্যন্ত দুই প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করা হবে বলে জানিয়েছেন দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ। অবরোধ শেষে কালো ব্যাজ ধারণ করে মানববন্ধন করবেন শরীফ এনামুল কবির পন্থী শিক্ষকরা।

প্রসঙ্গত, গত ১১ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়টি আবাসিক হলে প্রভোস্ট পদে পরিবর্তন আনেন উপাচার্য ফারজানা ইসলাম। এক অফিস আদেশে নয়জন প্রভোস্টকে অব্যহতির ঘটনাকে নজিরবিহীন, অ্যাক্টবিরোধী ও শিষ্টাচার বহির্ভূত উল্লেখ করে ধর্মঘটের ডাক দেন শরীফ এনামুল কবিরের অনুসারী আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা।

আর/টিকে