ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

কালো টাকা সাদার সুযোগ অর্থনীতিতে সুফল আনে না: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

প্রকাশিত : ০৪:৪৩ পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ০৪:৪৪ পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০১৮ বুধবার

আর মাত্র দুমাস পরই বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। তাই বাজেটকে ঘিরে এরই মধ্যে সব মহলে শুরু হয়েছে জল্পন-কল্পনা, আলোচনা-সমালোচনা। অন্য বারের মতো এবারের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হতে পারে, এমন আশঙ্কা করছে অর্থনীতিবিদরা। তাই অনেক খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ বাজেটকে ঘিরে দিচ্ছেন নানা পরামর্শ, সুপারিশ ও প্রস্তাবণা। তাঁদেরই একজন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়। আমরা আগেও দেখেছি এটাতে কোন উপকার হয় না। এটাতে বিনিয়োগও বাড়ে না, আবার করের হারও বাড়ে না। অর্থনীতিতে এর কোন সুফলও দেখা যায় না। এটা নিতান্তই সব করদাতাদের মধ্যে এক ধরণের অনুৎসাহ সৃষ্টি করে । সম্প্রতি একুশে টেলিভিশন অনলাইনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব মন্তব্য করেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন একুশে টিভির অনলাইন প্রতিবেদক রিজাউল করিম।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: এবারের বাজেটেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া। দেশের আর্থনীতির জন্য এ সুযোগ রাখা কতটা যৌক্তিক বলে মনে করেন?

ড. দেবপ্রিয়: বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ আসলে কোন উপকার হয় না, এটা আমরা আগেও দেখেছি। এটাতে বিনিয়োগও বাড়ে না, আবার করের হারও বাড়ে না। অর্থনীতিতে এর কোন সুফলও দেখা যায় না। এটা নিতান্তই সব করদাতাদের মধ্যে এক ধরণের অনুৎসাহ সৃষ্টি করে । এটা এক ধরণের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়, দেশের অর্থনীতিতে যে সুবিধার কোন উপযোগিতা নেই, কোন ভিত্তি নেই।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আগামী বাজেটে বরাদ্দের ক্ষেত্রে সরকারকে কোন কোন খাতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার বলে মনে করেন?
ড. দেবপ্রিয়: সরকারকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। দেশে আমাদের কর্মসংস্থান কিছুটা বেড়েছে, যার পুরোটাই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। কিন্তু প্রকৃত আয় কমেছে আড়াই শতাংশের মতো। এই কর্মসংস্থানের মধ্যে আবার পুরুষদের চেয়ে নারীদের আয় কমেছে। শহরের চেয়ে গ্রামীণ আয় কমেছে। তাই সঠিক উন্নয়নে যেতে হলে আমাদের কর্মমুখী শিক্ষা বাড়াতে হবে। গ্রামীণ জনমানুষের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিশ্চিতের পাশাপাশি তাদের আয়বর্ধনমূলক কর্মসংস্থানের দিকে নজর দিতে হবে। আর তার জন্য দরকার বাজেটে এসব খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: সম্প্রতি বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উঠেছে। উন্নয়নশীল হওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য কোন চ্যালেঞ্জ আছে কি ? আর চ্যালেঞ্জ থাকলে সেগুলো কীভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব?

ড. দেবপ্রিয়: উন্নয়নশীল হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বর্তমানের সূচকগুলো ধরে রাখা এবং তা সমুন্নত রাখা। আর এর জন্য আগামী ছয় বছরে উন্নয়নশীল দেশে পদার্পনের যে ধাপগুলো আছে তার জন্য প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। এ উত্তোরণের ক্ষেত্রে নতুন যে সব চ্যালেঞ্জ আসবে সেগুলো দ্রুত অতিক্রম করা। এর ফলে রেয়াতি সুদের ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে আমাদের বিচ্ছিন্ন হতে হবে। তাই নতুন অর্থের সন্ধান করতে হবে। নতুন অর্থের জন্য বড় জায়গা দুটি আছে বলে আমি দেখি। একটি হলো দেশের ভেতরে কর আদায় বাড়াতে হবে। কর আদায়ে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ নিম্ন। যেসব দেশ স্বল্পোন্নতের তালিকা থেকে বের হয়েছে তারা কিন্তু বৈদেশিক বিনিয়োগ দিয়ে পুরস্কৃত হয়েছে। অর্থাৎ দেশের প্রতি আস্থা বৃদ্ধির একটি সনদ আমাদের এসেছে। তাই আমাদের বিনিয়োগ জোর দিতে হবে। আমাদের ভৌত অবকাঠামো, সামাজিক সম্পদ এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে।
অর্থের সংস্থানের ব্যাপারে আমার কথা হলো আমাদের রফতানির ক্ষেত্রে পণ্যের বহুমুখীকরণ করা। বিদেশে জনশক্তি পাঠানোর ক্ষেত্রে বৈচিত্র আনতে হবে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ এখন সবচেয়ে কম শ্রমের উৎপাদনশীল পর্যায়ে আছে। অপরদিকে বাংলাদেশে যে প্রযুক্তি আসছে তাতে কর্মসংস্থান হচ্ছে। কর্মসংস্থান কমবে না এমন একটি ব্যবস্থা বের করা জরুরি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আপনি বলছিলেন সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। বরাদ্দের বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করবেন কি?
ড. দেবপ্রিয়: দেখুন বরাদ্দ বলতে আমি বাজেটের বরাদ্দকে বোঝানোর কথা বুঝিয়েছি। তবে বিষয় আরো পরিস্কার করে বলতে হলে বলবো- উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পর বহির্বিশ্ব থেকে আমাদের অনেক অর্থ সহায়তা বন্ধ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে গ্রামীণ মানুষের প্রকৃত উন্নয়ন কিছুটা হোচট ক্ষেতে পারে। তাই বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে। পাশাপাশি এমন একটি ফান্ড করতে হবে যেখান থেকে গরিব মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় করা যায়। জরুরি প্রয়োজনেও কাজে লাগানো যায়।

আরকে/ এমজে