ভবিষ্যত নেতৃত্ব ঠিক করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ: লেনিন
প্রকাশিত : ১১:১৫ পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ০৬:৪৯ পিএম, ২১ এপ্রিল ২০১৮ শনিবার
আগামী দিনের দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্ব তৈরী করা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করেন দলটির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. নূহ উল আলম লেনিন। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার অবর্তমানে দল ঝুঁকিতে পড়তে পারে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের প্রবীণ এই নেতা বলেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই আওয়ামী লীগে বিকল্প নেতৃত্ব তৈরী করা দরকার। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যদি তার অবর্তমানে একজন দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বের উত্তরাধিকারী রেখে যেতে পারেন, তাহলে রাজনীতিবিদ হিসেবে শেখ হাসিনার সাফল্যের মাত্রা শতভাগ পূর্ণ হবে। প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান বয়স প্রায় ৭১ বছর জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ভালো থাকলে তিনি আরও পাঁচ বছর দেশ চালাতে পারবেন। পৃথিবীর অনেক দেশে আরও বেশি বয়সে রাষ্ট্রনায়করা দেশ চালায়। কিন্তু সেটা ঝুঁকিপূর্ণ।
সম্প্রতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মুখপত্র `উত্তরন` সম্পাদক ড. নূহ উল আলম লেনিন একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব বিষয় উঠে এসেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ছাড়াও সরকারের সফলতা ও ব্যর্থতার বিভিন্ন বিষয়ে মুখ কথা বলেছেন দেশের প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ। তার এ সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে বিএনপি`র ভুল রাজনীতি ও আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গও। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইন প্রতিবেদক আলী আদনান।
একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার শেষ বছর পার করছে। এই সময়কালে সরকারকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
ড. নূহ উল আলম লেনিন: উন্নয়নের ধারা সূচনা করতে পারার রেকর্ড ইতঃপূর্বে অন্য কোনো সরকারের নাই। সেই দিক থেকে শেখ হাসিনার সরকারই একমাত্র সরকার যারা টানা দু`মেয়াদ ক্ষমতায় থেকে দায়িত্ব শেষ করতে যাচ্ছে। জনগণের আস্থায় থেকে সরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে, এটাই এ সরকারের প্রথম সফলতা। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকায় ২০০৮ ও ২০১৪ সালে যে রাজনৈতিক অঙ্গীকারগুলো দেওয়া হয়েছিল তা পূরণ করা সম্ভব হয়েছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে এটা সম্ভব হতোনা। এবং এটা আরো বেশী সফল হতে পারতো যদি ২০১৩-১৫ পর্যন্ত জ্বালাও- পোড়াওয়ের রাজনীতি না হতো।
একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ এই সময়কালে সরকারের প্রধান প্রধান অর্জন কী?
ড. নূহ-উল-আলম লেনিনঃ দু`টি দিক থেকে সরকারের সফলতার কথা বলা যায়। এক. পরিসংখ্যানগত দিক থেকে। দুই. মানুষ কী পেল সেই বিবেচনায়। ধরুন, অনেক অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। তাতে সাধারণ মানুষের কী আসে যায়। যদি আমি হতদরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্টীর দিক থেকে দেখি তাহলে আমি বলবো, এই পিরিয়ডের মধ্যে আমাদের দরিদ্রের পরিমাণ কমে ২২%- এর নিচে এসেছে। এদের পরিমাণ কম নয়। ১৬ কোটি মানুষের দেশে ২৫% হলেও ৪ কোটি মানুষ এ মেয়াদে দারিদ্রসীমাকে অতিক্রম করেছে।
দ্বিতীয়ত, সামাজিক নিরাপত্তায় সরকারের ভূমিকা খুবই সাফল্যজনক। বিনামূল্যে বছরে একবার খাদ্য বিতরণ, দারিদ্র ভাতা, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা এগুলো সব কিন্তু সামাজিক নিরাপত্তাকে দৃঢ় করেছে। যার ফলাফল হচ্ছে দারিদ্র্য কমে যাওয়া। জনগণের জীবনে উন্নয়নের জন্য যা প্রয়োজন- উন্নয়নের প্রধান শর্ত বিদ্যুৎ। আওয়ামী লীগ যখন প্রথমবার ক্ষমতায় গেলো তখন ৩ হাজার মেগাওয়াটের ঊর্ধে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতোনা। সেটা এখন ১৭ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। ১৪ হাজার মেগাওয়াট নিয়মিত উৎপাদন হচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে ২১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হবে এ লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। মাথাপিছু ১৬৬০ ডলার আয় হচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। এই আয় বাড়ার কারণেই কিন্তু মানুষের জীবন যাত্রার মান বেড়েছে। ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, ‘মানুষের ক্রয়ক্ষমতা যদি বাড়ানো না যায় তাহলে মানুষের কাঙিক্ষত অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জন করা যায়না’। মানুষের ক্রয়ক্ষমতার পাশাপাশি কর্মক্ষমতাও বেড়েছে। কাজের সুযোগও বেড়েছে। আমাদের দেশ এখন খাদ্য রফতানি করছে। এটা ভাবা যায়? ১৬ কোটি মানুষের দেশ। যে দেশটাতে আমরা এক সময় সাত বা সাড়ে সাত কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারতামনা, সেই দেশটি এখন বিদেশে খাদ্য রফতানি করছে। ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। তখন সরকার খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্যে নির্ভরশীলতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। ২০০১-০৮ পর্যন্ত যে সরকার ক্ষমতায় ছিল তখন জিডিপি অনেক নিচে নেমে এসেছিল। কখনো কখনো সেটা মাইনাস ও হয়েছিল।
বাংলাদেশ পৃথিবীতে সবজি উৎপাদনে চতুর্থ, মাছ উৎপাদনে দ্বিতীয়। এগুলো সবইতো পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে। পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে আমরা বিদেশে রফতানি করছি। মানব সম্পদ উন্নয়নে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান সবচেয়ে উঁচু। মানবসম্পদ উন্নয়ন বলতে আমরা যদি শিক্ষার হারকে বুঝাই তাহলে বলতে হয় দেশে প্রাইমারী স্কুল গামী শিশুর হাত এখন প্রায় শতভাগ। আমরা এক্ষেত্রে কাংখিত লক্ষ্যে পোঁছেছি। নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন আলোচিত নাম। এর একটা বড় রেজাল্ট হলো, শুধু পরিসংখ্যানের দিক থেকে নারী শিক্ষার হার বেড়েছে তা নয়, বরং আমাদের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে অজ্ঞতা, অন্ধত্ব ও কুসংস্কারকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। তারা উৎপাদনশীল শ্রমশক্তিতে পরিণত হচ্ছে। এটা বড় অর্জন।
এ ছাড়া সরকারের অবকাঠামোগত উন্নয়ন আজ দৃশ্যমাণ। দেশে প্রচুর পরিমাণ রাস্তা ঘাট, ব্রিজ- কালভার্ট হয়েছে। তবে, একটা ঘটনা বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সেটি হলো পদ্মা সেতু। বাংলাদেশ নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করছে, এটা বিশ্ববাসীর জন্য একটা বড় চমক। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় প্রজেক্ট করতে গিয়ে বাংলাদেশ কারো কাছে সাহায্য নেয়নি, এটা ভাবা যায়! প্রমাণিত হয়েছে, আমরাও পারি।
সফলতার আরোকটি বড় উদাহরণ, আমাদের বিপুল বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার আছে, যেটা প্রায় ৩৩ বিলিয়ন ডলার। এটা এ যাবৎকালের শ্রেষ্ট সঞ্চয়। একটা দেশকে অর্থনৈতিকভাবে মূল্যায়নের জন্য জাতিসংঘ এবং ইন্টারন্যাশনাল কমিটি তাদের জাতীয় সঞ্চয়কে মূল্যায়নে নেয়। সেই সঞ্চয়ের সাথে প্রতিনিয়ত আমাদের রেমিটেন্স যোগ হচ্ছে। আমাদের রফতানি আয় বেড়েছে। শুধু গার্মেন্টস নয়, আরো অনেকদিকে আমাদের রফতানি আয় বাড়ছে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ আপনি বার বার আমাদের রফতানি আয়ের কথা বলছিলেন। আমরা বিদেশে খাদ্য রফতানি করছি, এমন কথাও বললেন। কিন্তু পাশাপাশি এটাও সত্য, দ্রব্যমূল্য বাড়ছে। তাহলে কৃতিত্বটা থাকলো কোথায়?
ড. নূহ উল আলম লেনিনঃ দেখুন, অর্থনীতির একটা নিজস্ব ডিনামিক্স আছে। ডিনামিক্সটা হলো এই, যখন কোনো দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়, তার মানে মানি সার্কুলেশন বাড়ে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইচ্ছা হলে করতে পারতো, সমাজে যে চাহিদা আছে, সেই চাহিদা অনুযায়ী মানি সার্কুলেশন করবে না। তাহলে আগের জায়গায় থাকা হতো এবং আরেকটা অর্থনৈতিক বিপর্যয় হতো। মানি সার্কুলেশন দুই ভাবে বাড়ে। একটা হলো, সংকট নিরসনের জন্য যখন কাগুজে নোট ছাপানো হয় তখন দ্রব্যমূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে। কারণ, ওটার সাথে উৎপাদনের কোনো সম্পর্ক থাকেনা। আরেকটা হলো জিডিপির হার বাড়লে। জিডিপির হার বাড়লে স্বাভাবিক ভাবে মানি সার্কুলেশন বাড়বে। আগে একজন লোক তার সীমিত আয়ে তিন কেজি চাল কিনতে পারতো। এখন হাতে টাকা থাকায় স্বাভাবিকভাবে পাঁচ কেজি চিল কিনতে পারছে। ফলে তাকে দু`কেজির অতিরিক্ত টাকা বাজারে ছাড়তে হচ্ছে। এই প্রতিযোগিতায় গিয়ে চাহিদা ও যোগানের যে নিয়ম, সেই নিয়মে জীবন যাত্রার ব্যায় বাড়ছে। আর তার প্রভাব পড়ছে দ্রব্য মূল্যে। তবে দ্রব্য মূল্যের চাইতে পাল্লা দিয়ে ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে বেশী।
একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ সরকারের অনেক সফলতা আছে, যা আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত। তবে সরকারের কিছু ব্যর্থতা আছে বলেও বিভিন্ন মহলে অভিযোগ রয়েছে। নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে সরকারের কোনো ব্যর্থতা আপনার চোখে পড়ে কি?
ড. নূহ উল আলম লেনিনঃ (হেসে) নিরপেক্ষভাবে কীভাবে বলবো। আমি তো আওয়ামী লীগ করি। আমার কথা স্বাভাবিক ভাবেই আওয়ামী লীগের পক্ষে যাবে। তবে আমার কিছু মতামত আছে। প্রথমত, এখনো পর্যন্ত এদেশের মানুষ বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা আনতে পারে নাই। বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা ও ন্যায় বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের ঘাটতি আছে। কয়েকদিন আগে পত্রিকায় দেখলাম, মাদকাসক্ত ও মাদক চোরাচালান ও সামাজিক নানা অপরাধের দায়ে সারা দেশ থেকে ১ হাজার ৭০০ অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩ হাজার ছাড়া বাকি সবাই জামিনে মুক্তি পেয়ে গেছে। এতে কিন্তু ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়না, বরং অপরাধীরা অপরাধ করতে গিয়ে ভয় না পাওয়ার যে সংস্কৃতি তা প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেয়ে যায়। আমি মনে করি সরকার এক্ষেত্রে এখনো পর্যন্ত প্রকৃত লক্ষ অর্জন করতে পারে নাই।
এ ছাড়া দেশ এখনো পুরোপুরি দুর্নীতিমুক্ত হতে পারেনি। জোট সরকারের আমলে দুর্নীতিতে পরপর পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড আমরা হারিয়েছি। এটা সন্তোষজনক। বিশেষ করে ব্যাংকিং সেক্টরে যে নৈরাজ্য হচ্ছে, আমি তার তীব্র নিন্দা জানাই। এক্ষেত্রে সরকারের একটা অসহায়ত্ব আছে। সরকার চেষ্টা করেছে ব্যাংকিং খাতের বড় বড় ঘাপলাগুলোর সাথে যারা জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে। কিন্তু গৃহীত পদক্ষেপগুলো জনগণের আস্থায় আসেনি। বা সব মিলিয়ে জনগণ এসব ব্যাপারে সরকারের উপর সন্তুষ্ট নয়। সরকারের আরো কিছু ব্যর্থতা আছে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার বিচার এখনো এ সরকার করতে পারিনি।
প্রশ্নফাঁস রোধ করা সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। যেহেতু এইচএসসি পরীক্ষায় এখনো প্রশ্নফাঁস হয়নি, তাই আসা করা যায়, এই সমস্যা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে। দেশে অপরাধীরা গ্রেফতার হয়, ধর্ষন, নির্যাতন, খুন সহ নানা ধরনের সামাজিক অপরাধে দোষীরা ঠিকই গ্রেফতার হয়। অনেকেই আবার আইনের ফাঁকে বেরিয়ে যায়। এখানে সরকারকে আরো শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে হবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ বিএনপি`র বর্তমান রাজনীতিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
ড. নূহ উল আলম লেনিনঃ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। কিন্তু আওয়ামী লীগের যারা প্রতিদ্বন্দ্বী তারা কেউ কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি নয়। আমাকে যদি বলা হতো আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ করছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের আরেকটা দল, তাহলে আমি বলতাম ভয়ের কিছু নেই। তখন যদি সরকার অসহিষ্ণুতা দেখাত, তাহলে আমি বলতাম সরকার স্বৈরাচারী। কিন্তু এখন যারা মুক্তিযুদ্ধকে স্বীকার করে না, যারা যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়েছে, যারা ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, সিরিজ বোমা হামলা, আহসানউল্লাহ মাস্টার বা অর্থ মন্ত্রী কিবরিয়া সাহেবের মতো লোককে হত্যা করেছে, যারা জনগণ দিয়ে আন্দোলন গড়ে না তুলে পেট্রোল বোমা বা জ্বালাও পোড়াওয়ের রাজনীতি শুরু করেছিল- তারা আজ রাজনীতির জালে আটকে গেছে। এটার জন্য তারাই দায়ী। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পরে তারা যখন জ্বালাও- পোড়াও পেট্রোল সন্ত্রাস শুরু করল তখনই পুলিশ আইনগত পদক্ষেপ নিল। ২০০৯ সালে তো নেয়নি। অর্থাৎ, ভুল রাজনীতিটা তাদের। এবার অবশ্য তারা তেমন কোনো উগ্রতা দেখায়নি। দুটো কারণে দেখায়নি। এক. তারা বুঝতে পেরেছে তাদের এসব সহিংস কার্যক্রম জনগণ পছন্দ করছে না। এবারো যদি তারা এসব করে জনগণ তাদের ছাড়বে না। দ্বিতীয়ত, তাদের আগের সেই শক্তি ও মনোবল নেই। তাদের অধিকাংশ কর্মীরা মামলায় জর্জরিত। যদি তারা ২০১৪ সালে নির্বাচনে অংশ নিত, সংসদে তাদের অংশীদারীত্ব থাকতো তাহলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র লাভবান হতো। ২০১৪-১৫ সাল তাদের ভুল রাজনীতির বছর। তার খেসারত দিচ্ছে এখনো। বিরোধী দলের স্বীকৃতি হারালো। নির্বাচনও ঠেকাতে পারলো না। আন্দোলনটাকেও জনগণের সমর্থন নিয়ে এগিয়ে নিতে পারলো না।
একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ বিএনপি অভিযোগ করছে, সরকার খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচন করতে চাচ্ছে। তাদের কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, বিএনপিকে কৌশলে ভেঙ্গে দিতে চাচ্ছে সরকার, কেউবা বলছেন `খালেদা বিহীন` বিএনপি গঠনের চেষ্টা করা হচ্ছে। আপনি কী মনে করেন?
ড. নূহ উল আলম লেনিনঃ আমাদের কোন `বিহীন` নাই। আমাদের `বিহীন` নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনো সুযোগ নাই। ২০১৪ সালে তারা যখন নির্বাচনে অংশ নিলনা তখন কী আওয়ামী লীগ তাদের বিহীন করছিল? তখনও কী সরকার ষড়যন্ত্র করে খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখেছিল? একজন লোক অপরাধ করে জেলে আছে। তার জন্য যদি নির্বাচন না হয়, তাহলে সেই দলের অস্তিত্ব না থাকাই ভাল। কোনো ক্রিমিনালের মুক্তি চাওয়াতো নীতি নৈতিকতায় পড়েনা।
একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ এবার ঘরের কথায় ফিরে আসি। রাজনৈতিকভাবে ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা একজন সফল ব্যক্তিত্ব। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্ব রাজনীতিতেও তিনি আসন করে নিয়েছেন। কিন্তু নিজ দলে তার বিকল্প নেতৃত্ব তৈরী হয়নি। এটা কী রাজনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়?
ড. নূহ উল আলম লেনিনঃ অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ। রাজনৈতিকভাবে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব সবচেয়ে সুসংহত। অতীতে অনেকে নানাভাবে তার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছে। কিন্তু এখন সেগুলো নেই বা সেরকম কথা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না। দলের জন্য এটা ভাল। আবার এটাও ঠিক, যোগ্য উত্তরাধিকার না থাকলে দল এক সময় ক্রাইসিসে পড়ে। সে ব্যাপারে আমাদের দলের নেতা কর্মীদেরও একটা উদ্বেগ আছে। আমার নিজেরও উদ্বেগ আছে। এর পর কে, তিনি কতোখানি প্রস্তুত-এসব বিষয়ে আমাদের প্রশ্ন রয়েছে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ এ ব্যাপারে আপনি কী কোনো সুপারিশ করবেন?
ড. নূহ উল আলম লেনিনঃ এই মুহুর্তে প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিকভাবে আগামী নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। তবে তারপরে দলের মধ্যেই আগামী দিনের জন্য যোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্ব তৈরী করা হবে তার প্রধান কর্তব্য। প্রধানমন্ত্রী ও আমি প্রায় সমবয়সী। সে দিক থেকে এবছর তার বয়স হবে একাত্তর। স্বাস্থ্য ভাল থাকলে আর না হয় পাঁচ বছর দেশ চালালেন। পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রনায়ক এর বেশী বয়সেও দেশ চালায়। কিন্তু সেটা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে তাকে বিকল্প নেতৃত্ব তৈরী করতে হবে। তিনি যদি তার অবর্তমানের জন্য একজন যোগ্য দক্ষ নেতৃত্বের উত্তরাধিকার রেখে যেতে পারেন, তাহলে রাজনীতিবিদ হিসেবে শেখ হাসিনার সাফল্যের মাত্রা শতভাগ পূর্ণ হবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ আওয়ামী লীগের জেলা- উপজেলা পর্যায়ে অন্তর্কোন্দল বাড়ছে। এটা কী আগামী নির্বাচনে প্রভাব পড়বে না?
ড. নূহ উল আলম লেনিনঃ ক্ষমতাশীন দলে সবাই নিজেকে যোগ্য মনে করে। ফলে অন্তর্কোন্দল থেকেই যায়। এটা পুরাতন ব্যধি। তবে এটা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করিনা। আওয়ামী লীগের একটা বড় গুণ হলো, যখন প্রতীক নির্ধারিত হয়ে যায়, তখন লাখ লাখ কর্মী সবাই প্রতীকের পক্ষে চলে আসে। তাই অন্তর্কোন্দল নিয়ে আমরা ভীত নই।
একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ আগামী নির্বাচন কী ৫ জানুয়ারীর মতো হওয়ার সম্ভাবনা আছে?
ড. নূহ উল আলম লেনিনঃ না, আমি মনে করি আগামী নির্বাচন কোনো অবস্থায় ৫ জানুয়ারীর মতো হবেনা বা হওয়ার সুযোগ নেই। বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করবে এবং একটি গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ড. নূহ উল আলম লেনিনঃ একুশে টেলিভিশন অনলাইনকেও ধন্যবাদ।
এমজে/