ঢাকা, শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ১২ ১৪৩১

স্থায়ী চুক্তিতে ১০ ক্রিকেটার রাখা নিয়ে বিতর্ক

প্রকাশিত : ০৫:০৫ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০১৮ বৃহস্পতিবার

মাত্র ১০ জন ক্রিকেটারকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের স্থায়ী চুক্তিতে রাখায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা। গতকাল বুধবার ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালকদের সভায় এই সিদ্ধান্ত আসে।

বিসিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকছেন ১৩ জন ক্রিকেটার। যার মধ্যে স্থায়ী ভিত্তিতে ১০জন ও অস্থায়ী চুক্তি হবে ৩জন ক্রিকেটারের সঙ্গে।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ পড়েছেন তাসকিন আহমেদ, সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস, মোসাদ্দেক হোসেন, কামরুল ইসলাম রাব্বি। এর আগেই শৃঙ্খলাজনিত কারণে বাদ পড়েছিলেন সাব্বির আহমেদ।

গত বছর কেন্দ্রীয় চুক্তিতে ১৬ জন ক্রিকেটারকে রাখা হয়েছিল। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় চুক্তির আগের মেয়াদ শেষ হয়। গত জানুয়ারি থেকে নতুন চুক্তির মেয়াদ কার্যকর হয়েছে।

এবার কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা দশ ক্রিকেটার হচ্ছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমান, মুমিনুল হক, রুবেল হোসেন ও তাইজুল ইসলাম।

এছাড়া অস্থায়ী ভিত্তিতে আরও তিন ক্রিকেটারের সঙ্গে চুক্তি করা হবে বলে জানা গেছে। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে যারা বেতনভুক্ত তাদের বেতনের বিষয়ে আলোচনা করে বাড়ানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিবি।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক শফিকুল হক হীরা মনে করেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কোনও ব্যাপারেই সুস্পষ্ট উত্তর দেয়নি এই সভা থেকে বের হয়ে।

তিনি বলেন, চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার কমানো কোনও আদর্শ হতে পারে না, এটা ভুল বার্তা ছড়াবে। অন্য যে কোনও দেশের ক্রিকেট দলের চেয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা কম টাকা বেতন পান। ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকার চেয়ে সিনিয়র ক্রিকেটাররা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে অনেক বেশি টাকা আয় করেন। অতএব এই চুক্তিতে অনিশ্চয়তা হয়তো জাতীয় ক্রিকেটে আগ্রহ কমাবে বলে মনে করেন হীরা।

তিনি যোগ করেন, যে কারণে দেশের অনেক সিনিয়র ক্রিকেটার প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলতে তেমন আগ্রহী নন। এর কারণ যে ম্যাচ ফি দেওয়া হয় তা খুব নগণ্য, সাড়ে তিন ঘন্টার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আয় এর চেয়ে অনেক বেশি। অন্যদিকে চার-পাঁচদিন ক্রিকেট খেলে আয় কম।

`পারফর‍ম্যান্স খারাপ` বলে যে যুক্তি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড দিয়েছে তার সঙ্গে একমত নন শফিকুল হক হীরা। কারণ এক্ষেত্রে ক্রিকেটারদের সাবধান করে দেওয়া যেতে পারতো বলে মনে করেন তিনি।

হীরা বলেন, সিনিয়র যারা ক্রিকেটার আছেন, তাদেরও বেতন বৃদ্ধি হয়নি, প্রতি পেশাদার ক্রিকেটারই বেতন বৃদ্ধির জন্য অপেক্ষা করেন, এটা না দেওয়া অন্যায্য, এটা অসন্তোষ সৃষ্টি করে।

বাংলাদেশের একজন জ্যেষ্ঠ ক্রিকেট প্রতিবেদক আরিফুল ইসলাম রনি মনে করেন, এই সিদ্ধান্ত কোনও কোনও ক্ষেত্রে ইতিবাচক বা নেতিবাচকও হতে পারে। তবে এটা বেশি বিস্ময়কর। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে যে বেতন বা ম্যাচ ফি দেওয়া হয় তা খুব বেশি নয়। এখানে কেন্দ্রীয় চুক্তিটাই বড় ভূমিকা রাখে ক্রিকেটারদের জীবনমানে। ১০ থেকে ১৩ জনের সংখ্যাটাই বিস্ময়কর।

বাংলাদেশের যে বাস্তবতা ক্রিকেটারদের উৎসাহটা প্রয়োজন হয়। কারণ চুক্তি না থাকায় অনেকে ভেঙে পড়তে পারে। বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার আছেন যারা নতুন করে চুক্তিতে আসতে পারতেন, বিশেষত লিটন দাসের কথা উল্লেখ করেন আরিফুল।

আরিফুল ইসলাম রনির মতে, খারাপ খেলার বিপরীতে গ্রেডিংটা কমিয়ে আনা যেতে পারতো। বাংলাদেশে ক্রিকেট প্রতিভা খুব বেশি নেই। সৌম্য বা তাসকিনের মতো যারা নিজেদের মান অনুযায়ী খেলতে পারছেন না, এক্ষেত্রে তাদের বিশেষভাবে দেখভাল করাটাই বিসিবির দায়িত্ব।

মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের কথা উল্লেখ করে আরিফুল বলেন, সৈকত মাত্র ২টি টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন। যার মধ্যে একটি টেস্ট জয়ে ভূমিকা ছিল তার। শ্রীলংকার বিপক্ষে শততম টেস্টে ৭৫ রান করেন এক ইনিংস ব্যাট করে। তার এই চুক্তি বাতিল, একটা ভুল বার্তা দিবে।

ক্রিকেটারদের চুক্তিবদ্ধ করার ক্ষেত্রে একেক দেশ একেক রীতি অনুসরণ করে। কোনও বোর্ড গ্রেডিং করে, কোনও বোর্ড ফর‍ম্যাট ভাগ করে চুক্তি দিয়ে থাকে। আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ জন ক্রিকেটারকে সব ফরম্যাটে চুক্তিবদ্ধ করে, বাকিদের সাদা বল ও লাল বলের চুক্তি দিয়েছে।

  • ভারত- ২৬ জন
  • ইংল্যান্ড- টেস্টে- ৮ জন, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে- ১৪ জন
  • অস্ট্রেলিয়া- ২০ জন
  • ওয়েস্ট ইন্ডিজ- সব ফর‍ম্যাটে ৫ জন, সাদা বল ৬ জন, লাল বল ৫ জন
  • পাকিস্তান- ৩৫ জন
  • বাংলাদেশ- ১০জন স্থায়ী, ৩ জন রুকি

বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরাও অবাক হয়েছেন ক্রিকেট বোর্ডের এই সিদ্ধান্তে। বাংলাদেশের একটি ক্রিকেট সমর্থক ফোরাম `দৌড়া বাঘ আইলো` এর প্রধান নির্বাহী তানভীর প্রান্ত বলেন, এটায় যারা বাদ পড়েছে তারা এই ঘটনায় প্রণোদনা পেতেও পারে নাও পেতে পারে। সরাসরি বাদ দেওয়াতে মানসিক ধাক্কা পেতে পারে, আবার ভাল খেলে আবার দলে আসার প্রেরণাও পেতে পারেন। তবে একবারে বাদ না নিয়ে, গ্রেডিং কমানো যেতে পারতো।

সূত্র: বিবিসি

একে// এআর