ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

একান্ত সাক্ষাৎকারে ফাহিম মাশরুর

প্রযুক্তিতে দেশ-বিদেশে প্রচুর চাকরির বাজার তৈরি হচ্ছে

প্রকাশিত : ০৬:৪৮ পিএম, ২১ এপ্রিল ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ০৬:৩৭ পিএম, ২৩ এপ্রিল ২০১৮ সোমবার

সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার পর থেকেই দেশে তথ্য-প্রযুক্তির বিপ্লব চলছে। শুধু যে বাংলাদেশে তা হচ্ছে, তা নয়; সারাবিশ্বে এখন তথ্য-প্রযু্ক্তির বিপ্লব চলছে। তথ্য-প্রযুক্তির বিপ্লবের কারণে দেশে এবং বিদেশে প্রচুর চাকরির বাজার তৈরি হয়েছে। আর এ বাজার ধরতে পারলে বাংলাদেশ এ খাত থেকে সর্বোচ্চ আয় করতে পারবে।

বাংলাদেশের তরুণদের সামনে তথ্য-প্রযুক্তির বিপ্লব একটি দুয়ার খুলে দিয়েছে। দেশীয় বাজারে কাজ করার মাধ্যমে দক্ষ ও যোগ্য জনশক্তি হয়ে তারা ইউরোপ-আমেরিকাসহ উন্নত দেশগুলোতে গিয়ে কাজ করতে পারবে। এছাড়া দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আরও দক্ষতা অর্জন করে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারেও শক্ত অবস্থান তৈরি করবে। তবে এর জন্য দরকার সরকারের সহযোগিতা। পাশাপাশি তরুণদের প্রথাগত শিক্ষার বদলে গুণগত ও কারিগরি শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। আর এ জন্য কোয়ালিটির ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না।

সম্প্রতি একুশে টেলিভিশনের কাছে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে বিডি জবসের প্রতিষ্ঠাতা আ ক ম ফাহিম মাশরুর এসব কথা বলেন। ফাহিম মাশরুর দেশের প্রথম দিককার ইন্টারনেট উদ্যোক্তা। ই-কমার্স ব্যবসায় বাংলাদেশের অগ্রদূত। নিজ প্রতিস্থান তো বটেই তরুণদের চাকরির সুযোগ করে দিয়েছেন আরও হাজারো প্রতিষ্ঠানে। বেসিসের সাবেক এ সভাপতি আজ থেকে ১৮ বছর আগে কিছু বন্ধুদের নিয়ে বিডিজবস প্রতিষ্ঠা করেন। এটি বর্তমানে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় জব পোর্টাল। প্রতিদিন ১ লাখের বেশি লোক এই পোর্টাল ভিজিট করে। ২০ লাখের বেশি চাকরিপ্রার্থীর জীবন-বৃত্তান্ত এই প্ল্যাটফর্মে সংরক্ষিত আছে। গত ১৮ বছরে ১০ লাখেরও বেশি চাকরিপ্রার্থী বিডিজবসের মাধ্যমে চাকরি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির এই দিকপাল। এসএমই ফাউন্ডেশন আয়োজিত ২০১৮ সালের জন্য বর্ষসেরা উদ্যোক্তার (মাঝারি প্রতিষ্ঠান-সার্ভিস ক্যাটাগরি) পুরস্কার পেয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় এই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী। নিচে তার সাক্ষাতকারটির চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো-

একুশে টেলিভিশন: তথ্য প্রযুক্তি খাতে আমাদের সম্ভাবনা কতটুকু?

ফাহিম মাশরুর: তথ্য-প্রযুক্তির বিপ্লব শুরু হয়েছে দু থেকে তিন দশক হলো। এরই মধ্যে আমরা মোটামুটি একটা অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। দেশে বর্তমানে হাজার দুয়েক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এসব প্রতিষ্টানে প্রায় দুই লাখ শ্রমিক রয়েছে। বিশ্ব বাজারে দিনকে দিন এ খাতের গুরুত্ব বাড়ছে। বিশেষ করে আমাদের নিজেদের দেশেই রয়েছে ষোলো কোটি মানুষ। ষোলো কোটি মানুষের বাজারটাও ছোট নয়, এটা অনেক বড়। অন্যদিকে আমাদের রয়েছে শিক্ষিত তরুণ প্রজন্ম। এ জন্য আমাদের সম্ভাবনা শতভাগ। আর দেশীয় বাজারে প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো করতে পারলে, ক্রমান্বয়ে এগুলো দক্ষ হয়ে উঠবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে গিয়ে উন্নত দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারবে।

একুশে টেলিভিশন:  বিপিও সামিট সম্পর্কে বলুন?

ফাহিম মাশরুর: কিছুদিন আগেই হয়ে গেল বিপিও সামিট। হাজার হাজার শিক্ষার্থী সারাদেশ থেকে এসে সামিটে অংশ নিয়েছেন, এটা ইতিবাচক দিক। বিপিও সামিটে বলা হচ্ছে ১ লাখ লোক তৈরি হবে। চ্যালেঞ্জটা বুঝতে হবে। আমাদের তরুণদের গ্লোবাল স্কিলের দক্ষতা আছে কি না, তা দেখতে হবে। একটা ছেলে বা মেয়েকে প্রতিযোগিতা করতে হবে বিদেশের ছেলেদের সঙ্গে। বিপিও সামিটে আলোচকগণ এদিকটির প্রতি বেশি জোর দিয়েছেন। এ ছাড়া আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকেও আরও দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। বিদেশি কোম্পানীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে স্থান করে নিতে হবে।

একুশে টেলিভিশন: আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আমাদের প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা কতটুকু আছে?

ফাহিম মাশরুর: দেশীয় কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে একটা স্থান করে নিয়েছে। তবে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে ভালোভাবে কাজে লাগাতে হলে আমাদের শিক্ষাখাতের দিকে নজর দিতে হবে। মনে রাখতে হবে আমাদের এডুকেশনাল সেক্টরের দিকে প্রচুর ঘাটতি রয়েছে। তরুণদের প্রচুর কোয়ালিটি ঘাটতি রয়েছে। আমরা বড় বড় টার্গেট করবো। কিন্তু সেই টার্গেট পূরণ করা কষ্ট হবে। তাই আমাদের একটা জায়গায় একমত হতে হবে যে আমাদের `কোয়ালিটি এডুকেশন`এনশিউর করতে হবে। কত নম্বারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, বা কতজনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, তা না দেখে আমাদেরকে কতজনকে কোয়ালিটি শিক্ষা, ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে, তার উপর জোর দিতে হবে।

একুশে টেলিভিশন: যেহেতু আমাদের শিক্ষা প্র্রতিষ্ঠানগুলো বাজারমুখী শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে, সেখানে তরুণরা কিভাবে শিক্ষা লাভ করবে?

ফাহিম মাশরুর: আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও দায়িত্ব নিতে হবে। এ ছাড়া বেসিস সরকারের এটুআই প্রকল্প ও বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় কাজ করে যাচ্ছে, তরুণদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া বেসিসের আওতাভূক্ত সহস্রাধিক প্রতিষ্ঠান তরুণদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তরুণরা সহজেই কাজ শিখতে পারবে। আমাদের ঘরোয়া মার্কেটে নজর দিতে হবে। ষোলো কোটির মার্কেট অনেক বড় একটা মার্কেট। পাঠাওয়ের মত কোম্পানিগুলো নিজেরা কাজ করছে। তারা উবারের মতো কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই এগিয়ে যাচ্ছে। তবে মনে রাখতে হবে, কোয়ালিটির ব্যাপারে কোনো কমপ্রমাইজ করা যাবে না। তরুণরা কাজ শিখবে দেশীয় বাজার থেকে। দেশীয় বাজারে কাজ করার পর তারা আন্তর্জাতিকভাবে দক্ষ হয়ে উঠবে।

একুশে টেলিভিশন: এ খাতে আমাদের চ্যালেঞ্জটুকু কতটা?

ফাহিম মাশরুর: আমাদের চ্যালেঞ্জর জায়গা হলো দক্ষ ও যোগ্য শ্রমিক তৈরি করা। এ ছাড়া আরেকটা বিষয় হলো আমাদের ব্রান্ডিং সমস্যা। বিশ্ববাজারে আমাদের ব্রান্ডিং ছড়িয়ে দিতে হবে। আমাদের কানেক্টিভিটি ছড়িয়ে দিতে পারিনি। আমাদের থ্রিজি এসেছে, ফোরজি এসেছে। কিন্তু তা শহর কেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। যে দামে শহরে ইন্টারনেট পাওয়া যাচ্ছে, সে দামে গ্রামে ইন্টারনেট পাওয়া যাচ্ছে না। গ্রাম ও শহরের মধ্যে ইন্টারনেটে সেবার বৈষম্য রয়েছে। আরেকটা বাধা হলো শুল্ক বাধা। সরকারকে ইনভেস্ট করতে হবে। টেলিকম কোম্পানিগুলোর উপর ডিপেন্ড করি, সেটা দ্বারা সমস্যার সমাধান সম্ভব না। তবে যে সমস্যাটার কথা আমরা বলছি না, তা হলো বাংলাদেশেরন মার্কেটে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের আধিক্য চলে আসছে। সেটা আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। দেশীয় কোম্পানিগুলো সুযোগের অভাবে তাদের সঙ্গে কুলিয়েও উঠতে পারছে না। কিন্তু দেশীয় কোম্পানিগুলোর শতভাগ সক্ষমতা রয়েছে। আমাদের দেশের বড় বড় কাজগুলোতে শর্ত জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। ২০-২৫ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা চাওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তাই আমাদের দাবি হলো, প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ সব শর্ত শিথীল করতে হবে। পাশাপাশি ইন্টারনেটসহ এসব প্রতিষ্ঠানের উপর আরোপিত শুল্কহার কমাতে হবে।

এমজে/ এআর