ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

হাতিরঝিলে নজর কাড়ছে ভাসমান ফুল

রিজাউল করিম

প্রকাশিত : ০৪:৩৭ পিএম, ২২ এপ্রিল ২০১৮ রবিবার

নগরবাসীর বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে রাজধানীর হাতিরঝিল। ঝিলের চারপাশ ঘিরে চলছে পর্যটন গাড়ি। গাড়ি ও আগন্তুকদের ছায়া দিতে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিভিন্ন ফল ও পাতাবাহারী ফুলের গাছ। ঝিলের পানিতে আবার হেলেদুলে চলছে ময়ূরপঙ্খী নাও। বহমান পানির বুক চিরে চলছে যাত্রীবাহী ওয়াটার ট্যাক্সি। তার সঙ্গে সৌন্দার্য বর্ধন করছে গানের তালে রং বেরঙের ওয়াটার ড্যান্স ও ভাসমান স্টেজ। ঝিলকে সৌন্দের্যের এক মনোমুগ্ধকর লীলাভূমি করতে চলছে এসব নিত্য-নতুন আয়োজন। যার সঙ্গে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ঝিলের মধ্যে পানির ওপর ভাসমান সদ্য ফোটা বিভিন্ন প্রজাতির ফুল। যা হাতিরঝিলে আগত ভ্রমন পিপাসুদের করছে আকৃষ্ট।

সরেজমিন দেখা গেছে, প্রকল্পের পশ্চিমাংশে হাতিরঝিলের মগবাজার ও এফডিসি রোডের মধ্যবর্তী  এবং ঝিলের প্রথম ব্রিজ পর্যন্ত সারিবদ্ধভাবে ভাসানো হয়েছে হরেক রকম ফুলের গাছ।গাছগুলো বেশ কিছুদিন  আগে মরা দেখালেও সম্প্রতি তাতে নতুন করে পাতা গজিয়েছে। শুধু পাতা নয়, গত দুই সপ্তাহ আগে ধরে তাতে ফুটছে হলুদ-লাল, গোলাপীসহ বিভিন্ন রঙের ফুল।

ফুলগুলো দেখতে জিলের এ অংশে ভ্রমনপিপাসুদের ভিড় বাড়ছে। কেউ ব্রিজের পাড়ে দাঁড়িয়ে, কেউ বা এফডিসি মোড়ের অংশে আড্ডারত অবস্থায় উপভোগ করছেন এই সৌন্দর্য। কেউবা আবার চলতি পথে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে এ সৌন্দর্য।কিন্ত এতো সৌন্দর্যের মধ্যে বিষফোড়া হয়ে দেখা দিয়েছে হাতিরঝিলের দূর্গন্ধময় পানি। অথচ শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে গড়ে তোলা হাতিরঝিল প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, জলাবদ্ধতা ও বন্যা প্রতিরোধ, ময়লা পানি নিস্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, রাজধানীর যানজট নিরসনও। কিন্তু বছর না গড়াতেই প্রকল্পটির চেহারাও এখন হতশ্রী। প্রকল্পের বর্জ্য নিস্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় বিপন্ন হয়ে পড়েছে গোটা প্রকল্প। ভ্রমণকারীদের অনেকেই যত্রতত্রসহ হাতিরঝিলের পানিতে চিপসের প্যাকেটসহ ময়লা ফেলার কারণে পানিতে এসব স্তূপ ভেসে থাকে। জনবলের অভাবে পানিতে ভাসমান সে ময়লা সরাতেও হিমশিম খেতে হয় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার। তবুও আশা ছাড়েনি কর্তৃপক্ষ। দিন দিন নানা উদ্যোগের মধ্য দিয়ে বিবর্ণ হাতিরঝিলকে আধুনিক করে গড়ে তোলার প্রচষ্টো চালিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ঝিলের পানিতে পরীক্ষামূলক ভাসানো হয়েছে টবে করে নানা প্রজাতির গাছ। দৃষ্টিনন্দন এই গাছগুলো নতুন করে শোভা ছড়াচ্ছে। দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এখানকার ভ্রমণপিয়াসীদের।

বর্তমানে রাজধানীর দৃষ্টিনন্দন জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম হাতিরঝিল। ২০১৩ সালের ২ এপ্রিল এই প্রকল্পের উদ্বোধন হয়। দৃষ্টিনন্দন করার জন্য পুরো এলাকাটি নতুন অবকাঠামোতে তৈরি করা হয়েছিল। এ প্রকল্প চালুর ফলে ঢাকার তেজগাঁও, গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা, মৌচাক ও মগবাজার এলাকার বাসিন্দাসহ এ পথ দিয়ে চলাচলকারী নগরবাসী বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন। শুধু তা-ই নয়, এরইমধ্যে ঢাকাবাসীর প্রিয় ভ্রমণ স্থানগুলোর অন্যতম একটি হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে হাতিরঝিল। তাই এ প্রকল্পটির দূষণরোধে প্রতিনিয়ত সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করছেন।

এ বিষয়ে হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক ও রাজউকের প্রকৌশলী জামাল আক্তার ভূঁইয়া বলেন, হাতিরঝিল প্রকল্প রাজধানীর অন্যতম বিনোদন  কেন্দ্র। এটিকে আমরা নান্দনিক রূপ দিতে নানা ধরণের উদ্যোগ নিয়ে থাকি। যে উদ্যোগের অংশ ছিল ভাসমাল ফুল গাছ। এটাতে এখন ফুল ফুটে ভ্রমনপিপাসুদের মুগ্ধ করছে। ফুল সৌন্দর্য বিলালেও দূষিত পানি যে তা ম্লান করে দিচ্ছে তার জন্য  অনেকটা নাগরিদের অসচেতনতাও দায়ী। পানির মধ্যে পলিথিন ও চিপসের প্যাকেট ফেলা ঠিক না।  এছাড়া পানির ওভার ফ্লোর কারণেও দূর্গন্ধতা হতে পারে। তবে বিষয়টি নিয়ে প্রকল্পের মূল দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন (এসডব্লিউও) সঙ্গে কথা বলেই জানা যাবে।                             

হাতিরঝিল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও তদারকির দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন (এসডব্লিউও)’র  মেজর জেনারেল  আবু সাদিক এর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি।

তবে প্রকল্প সংশ্নিষ্ট অন্যএকজন কর্মকর্তা বলেন, পানির দুর্গন্ধ এড়াতে ও ময়লা শোষণ করে নিতে প্লাস্টিকের পাইপে তৈরি ফ্রেমের ওপর বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে। কাঙ্ক্ষিত ফল পেলে পুরো এলাকাজুড়েই ভাসানো হবে এসব গাছ। গাছগুলোর মধ্যে কলাবতী ও ঘাসজাতীয় গাছের সংখ্যাই বেশি। এ গাছগুলো অনেক আগেই লাগানো হয়েছিল। তবে মাঝে করে গাছুগুলো শুকিয়ে গেছিল। এখন নতুন করে পাতা গজিয়ে প্রায় সবকটি গাছে ফুল ফুটেছে।

আরকে// এআর