ঢাকা, শনিবার   ৩০ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৬ ১৪৩১

চার মেয়র প্রার্থীর যতো অমিল

আলী আদনান

প্রকাশিত : ০৫:১২ পিএম, ২২ এপ্রিল ২০১৮ রবিবার

গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ১২ জন। এদের মধ্যে সাত জন গাজীপুরে ও পাঁচ জন খুলনায় নির্বাচনী লড়াইয়ে আছেন।

প্রার্থিতা যতোই থাকুক না কেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মূলত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে, সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এমন আভাসই পাওয়া গেছে। তাদের যুক্তি এটি যেহেতু দলীয় প্রতীকে নির্বাচন, তাই ব্যাক্তি ইমেজের চেয়ে প্রতীকই প্রাধান্য পাবে। সেক্ষেত্রে দুই সিটিতেই প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

গাজীপুর ও খুলনায় আওয়ামী লীগের প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন যথাক্রমে মো. জাহাঙ্গীর আলম ও তালুকদার আবদুল খালেক। অন্যদিকে হাসান উদ্দিন সরকার ও নজরুল ইসলাম মঞ্জু যথাক্রমে গাজীপুর ও খুলনায় বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে লড়ছেন। চারজন প্রার্থীর মধ্যে অনেক মিল যেমন আছে তেমনি রয়েছে অনেক অমিল।

প্রথমেই আসা যাক গাজীপুরে। গাজীপুরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বয়সে তরুন। অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার বয়সে প্রবীণ। হাসান উদ্দিন সরকারের রাজনীতির বয়স জাহাঙ্গীরের বয়সের চেয়েও বেশি।

জাহাঙ্গীর আলম ইতোপূর্বে জনপ্রতিনিধি ছিলেন মাত্র একবার। ইতোপূর্বে স্থানীয় উপজেলা পরিষদে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পক্ষান্তরে হাসান উদ্দিন সরকার টঙ্গী পৌরসভার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

জাহাঙ্গীর আলমের উত্থান ছাত্ররাজনীতি দিয়ে। স্কুল ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে শুরু করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। পক্ষান্তরে হাসান উদ্দিন সরকারের উত্থান জনপ্রতিনিধিত্ব করে। টঙ্গী পৌরসভার চেয়ারম্যান হওয়ার মধ্য দিয়েই তার রাজনৈতিক উত্থান। জাহাঙ্গীর আলম ছাত্রলীগ দিয়ে শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এসেছেন। তিনি এখন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। পক্ষান্তরে হাসান উদ্দিন সরকার কেন্দ্রীয় বিএনপি`র সদস্য। তবে তার রাজনীতিতে বাঁক আছে। তিনি বিএনপি থেকে জাতীয় পার্টি হয়ে পরে আবার বিএনপিতে ফিরেছেন। জাহাঙ্গীর দল বদল করেননি।

একই রকম পার্থক্য দেখা যায় খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রার্থীদের ক্ষেত্রেও। আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক জনপ্রতিনিধিত্ব শুরু করেছেন খুলনা মিউনিসিপ্যালের কাউন্সিলর হিসেবে। অন্যদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু খুলনা-২ আসনে সরাসরি সংসদ সদস্য হয়েছেন ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। রামপাল- মংলা আসনে তালুকদার আবদুল খালেক সংসদ সদস্য হয়েছেন চারবার। পক্ষান্তরে নজরুল ইসলাম মঞ্জু সংসদ সদস্য হয়েছেন একবার। নির্বাচন কমিশনে এবার দুই প্রার্থী ( খালেক- মঞ্জু) যে হলফনামা জমা দিয়েছেন তাতে দেখা যায় তালুকদার আবদুল খালেক সম্পদের দিক থেকে কোটিপতি। কিন্তু তার নামে কোনো মামলা নেই। পক্ষান্তরে বিএনপি`র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু লাখপতি। কিন্তু তার নামে মামলা আছে চারটি।

খুলনা সিটি কর্পোরেশনে দুই মেয়র প্রার্থী নিজ দলে নির্বাচন করার ব্যাপারে তেমন আগ্রহী ছিলেন না। তালুকদার আবদুল খালেক সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ্যে বলেছিলেন, নতুনদের সুযোগ দিতে চাই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলীয় নানা হিসাব নিকাশে নির্বাচনী মাঠে নামলেন তিনি। একইভাবে বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু প্রথমদিকে মণিরুজ্জামান মনিকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন করবেন না এমন ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিএনপি`র অভ্যন্তরীন হিসাব নিকাশে মেয়র প্রার্থী হতে হয় তাকেই।

বিপরীতে গাজীপুরে দুই মেয়র প্রার্থী ভোটের আগেই নেমে পড়েছিলেন মনোনয়ন লড়াইয়ে এবং মুখোমুখি হয়েছিলেন শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বিতার। আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম মনোনয়ন পেতে গিয়ে গাজীপুর আওয়ামী লীগের `বটবৃক্ষ` বলে পরিচিত আজমত উল্লাহ খানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে হয়। একই ভাবে পরিচ্ছন্ন ও ত্যাগী নেতা হিসেবে পরিচিত এমএ মান্নানের সঙ্গে মনোনয়ন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছে হাসান উদ্দিন সরকারকে।

তবে যতো অমিলই থাকুক না কেন, একটি বিষয়ে তাদের মিল লক্ষ্যনীয়। সেটি হচ্ছে টার্গেট। চার প্রার্থীই জয় ঘরে আনতে মরিয়া। জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী।

/ এআর /