উন্নত চুলায় বদলে যাচ্ছে গ্রামীণ জীবনধারা
প্রকাশিত : ০৯:২০ পিএম, ২২ এপ্রিল ২০১৮ রবিবার
গ্রামীণ এলাকার রান্নাঘরে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ও দূষণ কমাতে ‘উন্নত চুলা’ ব্যবহারের প্রচলন করে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (ইডকল)। মফস্বল শহর ও গ্রামীণ এলাকায় জনপ্রিয় হচ্ছে এটি। কারণ, উন্নত চুলা রান্নাকাজে স্বস্তি আনে। পাশাপাশি জ্বালানি খরচ ও সময় বাঁচায়। সেইসঙ্গে পরিবেশের ক্ষতি কম হয়, স্বাস্থ্যঝুঁকিও কম।
গাবতলী উপজেলা ঘুরে দেখা গেল, ঘরে ঘরে এখন উন্নত চুলার ব্যবহার হচ্ছে। সেখানকার একটি বড় অংশে ব্যবহৃত হচ্ছে ইডকলের এ উন্নত চুলা। সন্ধ্যা গ্রামের শাহিনুর বেগম বলেন, এক পর্যায়ে হাঁপানির সমস্যা দেখা দেওয়ায় মাঝে মাঝে কেরোসিনের চুলা ব্যবহার করা শুরু করি। কিন্তু খরচে পোষায় না। এখন উন্নত চুলায় রান্নাবান্নার কাজ সারি। এতে ধোঁয়া নেই এবং সময়ও লাগে কম।
সোনারায় ইউনিয়নের সর্ধনকুটি গ্রামের গৃহিণী রওশন আরা জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কম্পানি লিমিটেড (ইডকল) থেকে প্রথম যখন তাঁকে উন্নত চুলা ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়, তখন আমলে নেননি। অনেক বোঝানোর পর এই চুলা বসাতে রাজি হন তিনি।
তিনি বলেন, মাটির চুলায় লাকড়িও বেশি লাগত। রান্না করতে সময়ও বেশি লাগত। পাতিলের নিচে অনেক কালি জমা হতো। যা ওঠাতে অনেক সময় লেগে যেত। শক্তিও খরচ হতো।
ইডকলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মো. আলী আকবর হোসেন বলেন, প্রচলিত মাটির চুলায় জ্বালানির অপচয় ঘটে ৯০ শতাংশ। উন্নত চুলার আগুন ছড়ায় না তাই দ্রুত তাপে রান্না দ্রুত হয়।
ইডকল জানায়, ২০১৩ সালে উন্নত চুলা (ইমপ্রুভড কুক স্টোভস- আইসিএস) প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। চুলার নকশাটি করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। তারের জালি, চিমনি, মাটি, কংক্রিট, ছাকনি, এমএস শিট এবং র’ কুলের সমন্বয়ে তৈরি এটি।
প্রতিষ্ঠানটির দেওয়া তথ্য মতে, শুধু বগুড়া জেলায় তাদের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে এখন পর্যন্ত এক লাখ ৯০ হাজার উন্নত চুলা বসানো হয়েছে। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) গবেষণায় উঠে এসেছে, উন্নত চুলা ব্যবহারে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয় সম্ভব। একই সঙ্গে এই চুলা ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কম কার্বন নিঃসরণ করে। উন্নত চুলা পরিবেশসম্মত হওয়ায় এই খাতে অর্থায়নে এগিয়ে এসেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি এ বাবদ বাংলাদেশকে সহজ শর্তে পাঁচ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) তথ্য বলছে, মাটির চুলা ব্যবহারে ধোঁয়ায় প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় এক লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। যার মধ্যে বেশির ভাগই শিশু। শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানি রোগে কষ্ট পায় ২৫ লাখ মানুষ। এখানেও শিশু ও মায়ের সংখ্যা বেশি। বাংলাদেশে এখনও ৯০ শতাংশ পরিবার রান্নার জন্য প্রচলিত চুলা অর্থাৎ মাটির চুলা ব্যবহার করে বলে ইডকলের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
ইডকলের সহকারী ম্যানেজার রাসেল আহমেদ বলেন, উন্নত চুলার ব্যবহার বাড়াতে পারলে কর্মসংস্থানও তৈরি হবে।
একে//এসি