টেস্টের চেয়ে টি-টোয়েন্টিতে ফেরা জরুরি মাশরাফির : নান্নু
প্রকাশিত : ১০:৪০ এএম, ২৩ এপ্রিল ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ১০:২০ এএম, ২৪ এপ্রিল ২০১৮ মঙ্গলবার
মাশরাফি বিন মর্তুজা বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক দৃঢ়তার নাম, সফলতার নাম। একসময় টেস্ট, ওয়ানডে, টি টুয়েন্টি সব ধরনের ক্রিকেটেই তার বিচরণ ছিল। বর্তমানে সীমিত ওভারের ম্যাচেই দেখা যায় তাকে। তবে টেস্টে মাশরাফির আবেদন যে ফুরিয়ে যাননি সেটি প্রমাণ করেছেন এবার। সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করে জাত চিনিয়েছেন। তাই সব মহলে আলোচনায় এসেছে তার টেস্টে ফেরা প্রসঙ্গে। তাকে নিয়ে কী ভাবছেন নির্বাচকরা?
চাইলে টেস্ট খেলবে, তবে তার টি-টোয়েন্টিতে ফেরাটা জরুরি- এমন মন্তব্য প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর। সেই ২০০৯-এ টেস্ট ছেড়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। ৩৪ ম্যাচে নিয়েছেন ৭৮ উইকেট। অবাক করা ঘটনা হলেও সত্যি, আট বছরেও দেশের কোনো পেসার ছুঁতে পারেননি এই বোলারকে। ইনজুরি কাটিয়ে পুরোদমে মাঠে ফিরেন ২০১৪’র শেষ দিকে। এরপর ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ফরমেটে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে পৌঁছে দিয়েছেন সাফল্যের চূড়ায়।
২০০৯ সালের পর আর টেস্ট খেলতে পারেননি মাশরাফি বিন মর্তুজা। পায়ে একের পর এক অস্ত্রোপচার তাকে ক্রিকেটের অভিজাত শ্রেণি থেকে পুরোপুরি দুরে সরিয়ে দিয়েছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও টেস্টকে বিদায় বলেননি বাংলাদেশের সেরা এই অধিনায়ক। এখনও মাঝে-মধ্যে বলেন, তিনি টেস্ট খেলতে চান। গত বছর বিসিএলের (চারদিনের ম্যাচ) একটি ম্যাচও খেলেছেন মাশরাফি। তিনি বিদায় বলেছেন টি-টোয়েন্টিকে। এখনও খেলে যাচ্ছেন ওয়ানডে ক্রিকেট।
শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই নয়, ঘরোয়াতে সীমিত ওভারের ফরমেটে মাশরাফি এখন প্রতিপক্ষ যেকোনো দলের আতঙ্কের নাম। কিন্তু দেশসেরা এ অধিনায়ক ভুলতে পারেননি টেস্ট খেলতে না পারার আক্ষেপ। বারবারই বলেছেন সময় হলেই টেস্টে ফিরবো। এ বছর তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছে নিজের ইচ্ছের কথাও জানিয়েছিলেন। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তাতে সায় দেননি।
কিন্তু মাশরাফি যে হার মানার নয়। নিয়মিত প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলতে না পারলেও গেল কয়েক বছর জাতীয় ক্রিকেট লীগে (এসসিএল) খেলেছেন কয়েকটি ম্যাচ। গেল বছরও খুলনা বিভাগের হয়ে চার দিনের ম্যাচে মাঠে নেমেছিলেন। এবার তিনি খেলবেন বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগের (বিসিএল) শেষ রাউন্ডেও। কারণ একটাই, নিজেকে ফের লম্বা ফরমেটের ক্রিকেটে প্রমাণ করা। অবশ্য তার আগেই জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু তার জন্য দিয়েছেন সুসংবাদ।
তিনি জানিয়েছেন মাশরাফির জন্য টেস্টের দরজা খোলা। তবে এখানে মাশরাফির ইচ্ছা ছাড়াও বিসিবির ভূমিকার কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। নান্নু বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ ওর ও বিসিবির ব্যাপার। আমাদের যেটা নির্দেশনা দেবে ওভাবেই এগোবো। মাশরাফি যদি টেস্ট খেলতে চায় খেলবে।’
সীমিত ওভারে ক্রিকেটে মাশরাফি ৩৫ বছর বয়সেও দলের অপরিহার্য অংশ। বর্তমানে তিনি ওয়ানডে দলের নেতৃত্ব দিলেও অবসর নিয়েছেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে। বলা চলে বিসিবি’র সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহ ও বিসিবি সভাপতি নাজমুল ইসলাম পাপনের ওপর অভিমান করেই হঠাৎ তিনি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসর নেন মাশরাফি। তবে হাথুরুসিংহের বিদায়ের পর বোধোদয় হয়েছে বিসিবির।
বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তাকে টেস্টে ফেরাতে না চাইলেও চেয়েছেন টি-টোয়েন্টিতে। এ নিয়ে তাকে নিদাহাস ট্রফির আগে অনুরোধও করা হয়েছিল বোর্ডের তরফ থেকে। কিন্তু মাশরাফি সেই অনুরোধে সাড়া দেননি। তবে এখনো আশা ছাড়েননি তারা। এখনো বিসিবি চাইছে তাকে টি-টোয়েন্টিতে ফেরাতে।
যে কারণে গতকাল সংবাদমাধ্যমকে নান্নু বলেন, ‘আমরা চাইছি টি-টোয়েন্টিতে ওর ফেরাটা জরুরি। যদি ফেরে এটা আমাদের দলের জন্য অনেক ভালো।’ প্রধান নির্বাচকের কথাতেই স্পষ্ট বিসিবি এখনো তার আশায় বসে আছেন। কিন্তু মাশরাফি এর আগে বলেন, এই ফরমেটে আর ফিরবেন না। দেশসেরা অধিনায়কের এখন একটাই ইচ্ছা টেস্টে ফেরা। নিজেকে ফের টেস্ট খেলার যোগ্য প্রমাণ করেই মাঠে ফিরতে চান তিনি।
শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতার ৭০ বছর পূর্তিতে আয়োজিত নিদাহাস ট্রফির আগে এক সাক্ষাৎকারে মাশরাফি বলেছিলেন, ‘আমি টেস্ট খেলতে চাই এটি সত্যি। তবে খেলবো বললেই তো হবে না। তার জন্য তো নিজেকে ফের প্রমাণ করতে হবে। আমি আসলেই ফিট আছি কি না সেটি চারদিনের ক্রিকেটে খেলেই বুঝতে পারবো। এরপর তারা যদি মনে করে আমি ফিট তাহলে ডাকতেও পারেন।’ এরইমধ্যে তিনি খেলেছেন ঢাকা প্রিমিয়ার লীগের চ্যাম্পিয়ন দল আবাহনীর হয়ে। ১৬ ম্যাচে ৩৯ উইকেট নিয়ে রেকর্ড করে সবাইকেই নয় ছাড়িয়ে গেছেন নিজেকেও। টানা প্রিমিয়ার লীগে খেলার কারণে বিসিএলের তৃতীয় ও চতুর্থ রাউন্ডে খেলেননি। ছিলেন বিশ্রামে।
তবে মিনহাজুলরা মাশরাফিকে টেস্টে নয়, খুব বেশি করে চাচ্ছেন টি-টোয়েন্টিতে। সেখানেই তাকে বেশি প্রয়োজন। প্রধান নির্বাচক বলেন, ‘...কিন্তু আমরা চাচ্ছি, টি-টোয়েন্টিতে ও ফিরুক। ওখানে ওকে আমাদের বেশি দরকার।’
/ এআর /