ধর্ষণের ঘটনায় মোদিকে ৬৩৭ শিক্ষাবিদের চিঠি
প্রকাশিত : ০৩:৫৫ পিএম, ২৩ এপ্রিল ২০১৮ সোমবার
ভারতে ধারাবাহিক যৌন নিপীড়নের ঘটনায় বর্তমান বিজেপি শাসিত সরকারকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিয়েছেন দেশ ও বিদেশের খ্যাতনামা ৬ শতাধিক শিক্ষাবিদ। চিঠিতে বলা হয়, বিজেপি সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর থেকেই নারী ওশিশুদের উপর যৌন নিপীড়ন ও সহিংসতার ঘটনা বেড়েই চলেছে। শুধু তাই নয়, ধর্মীয় সহিংসতার অংশ হিসেবে নারী ও শিশুদের ঢাল হিসেবে বেঁচে নিচ্ছে উগ্রবাদীরা।
সম্প্রতি কাশ্মিরের কাঠুয়া ও উন্নাওতে ৮ বছরের শিশু আফিফা বানুকে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দায়ী করে গত সপ্তাহে তাকে চিঠি লিখেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীরা। এবার তাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে মোদিকে খোলা চিঠি লিখেছেন ভারতসহ বিভিন্ন দেশের ৬৩৭ জন শিক্ষাবিদ। এদের মধ্যে অন্তত ২০০ জন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য আর অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন খ্যাতনামা মার্কিন ভাষাতাত্ত্বিক ও রাজনীতিবিশ্লেষক নোয়াম চমস্কি, ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত মার্কিন নৃবিজ্ঞানী লিলা আবু লুঘোদ এবং আসামে জন্ম নেওয়া মার্কিন ইতিহাসবিদ প্রসেনজিত দুয়ারার মতো বুদ্ধিজীবী।
বিভিন্ন ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত চিঠিটির অনুলিপি থেকে জানা যায়, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সাউথ ব্লকের ঠিকানায় ২১ এপ্রিল তারিখে ওই চিঠিটি লেখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে এতে বলা হয়েছে, ‘আমরা ভারতের এবং বিভিন্ন দেশের শিক্ষাবিদ ও স্বাধীনধারার গবেষক। গত ১৬ এপ্রিল ৪৯ জন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী আপনাকে যে খোলা চিঠি দিয়েছিল তার সঙ্গে সংহতি জানিয়ে এবং তাদের অনুভূতিকে স্বীকৃতি দিয়ে আমরাও আপনাকে লিখছি।’
শিক্ষাবিদেরা ওই চিঠিতে লিখেছেন, এসব সরকারি চাকরিজীবী এবং অগণিত ভারতীয় নাগরিক এবং ব্যাপক অর্থে বলতে গেলে বিশ্বের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আমরা কাঠুয়া ও উন্নাওয়ের ঘটনা এবং পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের গভীর ক্ষোভ ও বেদনা প্রকাশ করছি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উদ্দেশ্য করে তারা লিখেন, ‘সর্বশেষ আপনি দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে সম্প্রতি যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তা অপর্যাপ্ত, ছকবদ্ধ এবং এতে ঘটনার শিকার হওয়াদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিতের সুস্পষ্ট নিশ্চয়তা নেই।’
শিক্ষাবিদেরা তাদের চিঠিতে বলেছেন, কাঠুয়া এবং উন্নাওয়ের ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়, দলিত, আদিবাসী ও নারীদের নিশানা করে হামলা চালানোরই ধারাবাহিকতা এটি। ২০১৫ সালে উত্তর প্রদেশের দাদরিতে, জম্মু কাশ্মিরের উধামপুরে, ২০১৫-২০১৬ সালে ছত্তিশগড়ের বিজাপুর ও সুকমাতে, ২০১৬ সালে মধ্যপ্রদেশের হারদাতে, ২০১৬ সালে ঝাড়খন্ডের লাতেহারে, ২০১৬ সালে গুজরাটের উনাতে, ২০১৭ সালে হরিয়ানার রোহটাকে, ২০১৭ সালে দিল্লিতে, একই বছর উত্তর প্রদেশের সাহারানপুরে এবং এখন জম্মু কাশ্মির ও উত্তর প্রদেশে ধারাবাহিকভাবে ছড়িয়ে পড়া ঘটনায় গো রক্ষক এবং অন্যরা ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নকে সহিংসতার হাতিয়ার করেছে।
তাই, অবিলম্বে দোষীদের বিচারের আওতায় এনে দেশে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ কমানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আহ্বান জানান তারা।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি
এমজে/